বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের মধ্য দিয়ে কাল শেষ হবে অমর একুশে বইমেলা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কাল শেষ হবে এবারের অমর একুশে বইমেলা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল সাড়ে ৮ টায় জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে এসব কর্মসূচি শুরু হবে।

বিকেল ৩ টায় অমর একুশের মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।

আলোচনা করবেন নজরুল ইসলাম, স্বদেশ রায় এবং মিজানুর রহমান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। বিকেল ৪ টায় ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে আজ বুধবার অমর একুশে বইমেলায় গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২২ ঘোষণা করা হয়েছে।

২০২১ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনী-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২২, ২০২১ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মারক প্রকাশের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, জালাল ফিরোজ রচিত লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর একদিন গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুক্স এবং সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত নবাব সলিমুল্লাহ ও তাঁর সময় গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হয়। ২০২১ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-কে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২২ প্রদান করা হয়। ২০২২ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নবান্ন প্রকাশনী, নিমফিয়া পাবলিকেশন এবং পাঠক সমাবেশ-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হয়। আগামীকাল অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারসমূহ প্রদান করা হবে।

আজ একুশে বইমেলার ৩০তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৭টি। এরমধ্যে গল্প ১১ টি,উপন্যাস ১৫ টি,প্রবন্ধ ৩ টি,কবিতা ১৭ টি,গবেষণা ২ টি,ছড়া ৩ টি,শিশুসাহিত্য ৪ টি,জীবনী ৫ টি,রচনাবলী ২ টি, মুক্তিযুদ্ধ ২ টি, বিজ্ঞান ১ টি,ভ্রমণ ১ টি,ইতিহাস ৩ টি, বঙ্গবন্ধু ২ টি,ধর্মীয় ১ টি,অভিধান ১ টি,সায়েন্স ফিকশন ১ টি অন্যান্য ৩ টি।

বিকাল ৪ টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । শহীদ জননী জাহানারা ইমাম : আমৃত্যু সংগ্রামী এক মহাপ্রাণ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তপন পালিত। নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাবিহা পারভীন, জয়দুল হোসেন এবং আহমেদ আহসানুজ্জামান।

প্রাবন্ধিক বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রাজনীতির অঙ্গন থেকে বেশ দূরেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু যখন হৃদয় থেকে তাগাদা পেলেন তখন রাজপথে নেমে এসে সংগ্রামের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। সৃজনশীল লেখিকা হিসেবে প্রথম দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তার একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থের জন্য। রাজনীতিবিদ না হয়েও রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করে সারাদেশে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থ এবং পরবর্তীকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন তাঁকে কোটি মানুষের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

আলোচকবৃন্দ বলেন,শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধকালীন অবরুদ্ধ সময়ের একটি অসাধারণ চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থের মাধ্যমে। তার সাবলীল লেখনীর অনবদ্য কৌশলে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়টি তিনি উপস্থাপন করেছেন। জাহানারা ইমাম বুদ্ধিজীবী হয়েও রাজপথে নেমে সম্মুখ-কাতারে দাঁড়িয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। মানুষের বাকস্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং স্বাধীনতার সূর্যকে প্রজ্জ্বলিত রাখতে জাহানারা ইমাম আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার চেতনা ও আদর্শ যুগ যুগ ধরে আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন মিনার মনসুর এবং সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল।

আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি ইউসুফ রেজা, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, মাহবুবা লাকী, বাপ্পী রহমান এবং লুৎফর চৌধুরী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং রূপা চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মোঃ মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘দৃষ্টি’, মোঃ সুজাতুল আলমের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আদি গম্ভীরা দল’-এর পরিবেশনা। নৃত্য পরিবেশন করেন কবিরুল ইসলাম রতন। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আশরাফ মাহমুদ, অমিয় বাউল, মুন্নী কাদের, রতœা সরকার, সাধিকা সৃজনী তানিয়া, জান্নাত-ই-ফেরদৌসী, শাহীনা আক্তার পাপিয়া, শামীমা নাসরিন চমন। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন জয় প্রসাদ সিংহ রায় (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড) এবং (মন্দিরা)।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলা ও অনুষ্ঠানমালার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। মেলা চলবে সকাল ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।

বিকেল ৫ টায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২২’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সন্ধ্যায় সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান