‘বন্ধু’কে ফোন রতন টাটার, দিলেন চাকরির প্রস্তাব!

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে সদ্য স্নাতক হয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন মুম্বইয়ের বছর বাইশের এক যুবক শান্তনু নায়ডু। একদিন কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে ওই শান্তনু দেখেন রাস্তায় পড়ে রয়েছে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে যাওয়া একটি কুকুরের দেহ। সে দিনের ওই দৃশ্য শান্তনুর মনে গভীর ভাবে দাগ কেটেছিল। রাস্তার কুকুরদের দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে ওদের গলায় ‘নিয়ন স্ট্র্যাপ’ পরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবেন তিনি।

এই ‘নিয়ন স্ট্র্যাপ’ কলারে গাড়ির আলো পড়লেই সেটি দূর থেকে চকচক করতে থাকে। ফলে আগেভাগেই সতর্ক হয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচানো যাবে পথকুকুরদের প্রাণ। এই কাজে তাঁর পাশে দাঁড়ান তাঁর কয়েকজন বন্ধুও। বন্ধুদের সহায়তায় একে একে বেশ কয়েকটি কুকুরের গলায় ‘নিয়ন স্ট্র্যাপ’ পরিয়ে দেন শান্তনু। শান্তনুর এই উদ্যোগ নজর কাড়ে হাজার হাজার মানুষের। টাটা গ্রুপের নিউজ লেটারেও প্রকাশিত হয় এই উদ্যোগের খবর।

এর পর অনেকে তাঁক কাছ থেকে এই ‘নিয়ন স্ট্র্যাপ’ কিনতেও চান। কিন্তু সবাইকে ‘নিয়ন স্ট্র্যাপ’ সরবরাহ করার সামর্থ ছিল না শান্তনুর। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই সরাসরি টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটাকে চিঠি লিখে বসেন শান্তনু। মাস দুয়েক পর মেলে চিঠির উত্তর। শান্তনুকে ডেকে পাঠানো হয় রতন টাটার মুম্বইয়ের অফিসে। শান্তনুর সঙ্গে দেখা করেন সয়ং রতন টাটা। শান্তনুর ভাবনা-চিন্তা মুগ্ধ করে তাঁকে। শান্তনুকে নিজের পষ্যগুলিকেও দেখান রতন টাটা। শান্তনুর উদ্যোগের জন্য আর্থিক সাহায্যও করা হয় টাটা পরিবারের পক্ষ থেকে। দুই অসমবয়সী মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ পাঁচ বছর। টাটাদের থেকে পাওয়া আর্থিক সাহায্যে মুম্বইয়ের অসংখ্য রাস্তার কুকুরদের গলায় ‘নিয়ন স্ট্র্যাপ’ পরিয়ে দেন শান্তনু। হাজারও ব্যস্ততার মধ্যে রতন টাটাও ভুলে যাননি তাঁর বন্ধুকে। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে শান্তনু জানান, তাঁকে ফোন করে সরাসরি চাকরির প্রস্তাব দেন রতন টাটা। ফোন করে তিনি শান্তনুকে বলেন “আমার অফিসে অনেক কাজ রয়েছে। একজন সহকারীর প্রয়োজন। আপনি কি আমার সহকারী হিসাবে কাজ করবেন?” প্রস্তাব পেয়ে নিজের কানের উপরেই বিশ্বাস হচ্ছিল না সাতাশ বছরের শান্তনুর। আবেগ জড়ানো গলায় তাই ‘হ্যাঁ’ বলে ফেলেন যুবক। ‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামের পেজে শান্তনুর এই পোস্টটি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। বন্ধুত্বের এই কাহিনি মন জয় করে নিয়েছে হাজার হাজার মানুষের।