বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাবলম্বী হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত বন্ধীরা

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বন্দী জীবনেও দক্ষ কুটির শিল্পী ও স্বাবলম্বী হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত বন্ধীরা। কারাগারের অভ্যন্তরে দেয়া হচ্ছে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ এসব বন্ধীদের। এতে একদিকে যেমন বন্ধীদের মানসিক উন্নয়ন ঘটছে, তেমনি উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফাও পাচ্ছে তারা।

বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারাগারে বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত বন্ধী’র সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৬’শ ও হাজতী হিসেবে রয়েছে প্রায় ৭’শ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাজাপ্রাপ্ত বন্ধীদের সংশোধনের জন্য বিশেষ কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে প্রায় ৩ শতাধিক সাজাপ্রাপ্ত বন্ধী দক্ষ কুটি’র শিল্পী হিসেবে পরিণত হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৫০ জন রয়েছে নারী। এসব আসামিদের মধ্যে বেশির ভাগ আসামী ৩০ থেকে ৬০ বছর সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী। তাদেরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যই মূলত এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার সুফল পেতে শুরু করেছে। এখানে পুরুষ কয়েদীদের পাশাপাশি নারী কয়েদীরাও সমান তালে কাজ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, সাজাপ্রাপ্ত বন্ধীদের টেষ্ট পেপার নামে একদল প্রশিক্ষিত কর্মি প্রতিদিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সাজাপ্রাপ্ত বন্ধীরা সপ্তাহের ৬ দিন কাজ করে। পাশাপাশি শ্রমিক আইনানুসারে সপ্তহের এক দিন ছুটির ব্যবস্থা রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। একই সাথে বন্ধী দক্ষ কুটি শিল্পীদের মাঝে তিন মাস পর পর বিক্রিত পণ্যের কিছু লভ্যাংশ ভাতা প্রদান করা হয়। এসব আসামীরা কাঠ, বেত, বাশঁ, তাতঁ, সূতা ও বিভিন্ন ধরনের উপকরন দিয়ে তৈরি করছে, ছোট-বড় মোড়া, কুলা, চালন, কিচেন মোড়া, চেয়ার, ছোট-বড় ঝুড়ি, ফলের ঝুড়ি পানের ডালা, বাশেঁর দোলনা, পেপার বক্স, কলম দানি, বেতের ঝুড়ি, পাটের দোলনা, বিছানা ঝাড়–, ঝাড় দেয়ার ঝাড়–সহ চাহিদা অনুযায়ী নিত্যদিনের ব্যবহার সামগ্রী। এছাড়াও সাজাপ্রাপ্ত বন্ধীদের ব্যবহারের জন্য তৈরী করা হচ্ছে তাতেঁর শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, গায়ের চাঁদর, মাথার টুপি, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, বিছানার চাঁদর ও নকসীঁ কাতাঁ। এ সব সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের হাতে তৈরী করা বিভিন্ন কুটি’র শিল্প বর্তমানে শোভা পাচ্ছে দেশের বিভিন্ন সু-রুচি সম্পন্ন মানুষের ড্রইং রুমে বা সৌখিন মানুষের বেড রুমে।

এ ব্যপারে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আকর্ষণীয় ও বাহারী রং’ মজবুত এবং মন ভোলানো এসব সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে দেশে ও বিদেশেও। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এসব পণ্য বিদেশেও রপ্তানীর মাধ্যমে দেশ লাভ করছে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা। এছাড়া কারাগারের সামনে কারা কর্তৃপক্ষ পরিচালিত “কারা হস্তশিল্প প্রদর্শনী ও বিক্রয়” কেন্দ্রে খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় হচ্ছে এসব পণ্য।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বলেন, সরকার সাজাপ্রাপ্ত দক্ষ কুটির শিল্পীদের প্রতি বছর তাদের কাজের মূল্যায়ন করে তাদেও সাজা মওকুফ ও করছেন। ইতোমধ্যে অনেক সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৬ ডিসেম্বর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকজনকে মুক্ত করা হতে পারে।