‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বড় বিনিয়োগ করতে চায় রিলায়েন্স-আদানি’

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আদানি ও রিলায়েন্স পাওয়ারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকে সামনে রেখে বিজনেসলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশের পাটপণ্যে যে এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে সে বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।

এই সফর বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি নতুন অধ্যায় যোগ করবে জানিয়ে হর্ষবর্ধন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গভীর সম্পর্কে নতুন অধ্যায় যোগ করবে। এর মাধ্যমে বেশ কয়েকটি খাতে দুই দেশের মধ্য দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব খাতের মধ্য রয়েছে উন্নয়ন সহযোগিতা, আইটি, সাইবার নিরাপত্তা ও মহাকাশে উচ্চ প্রযুক্তি।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের জুনে ঢাকা সফরের সময়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর উন্নয়ন কোন পর্যায়ে রয়েছে এই সফরের মাধ্যমে তাও পর্যালোচনা হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
আগামী ৭-১০ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যাচ্ছেন।

হাইকমিশনার বলেন, ‘ভারতের সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। রিলায়েন্স একটি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ)-এর এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহার করে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে মেঘনাঘাটের জন্য ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। আর ঝাড়খন্ডে স্থাপিত হতে যাওয়া দু’টি ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে যাওয়া ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় আদানি। পেট্রোনেট, আইওসিএল এবং নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের মতো সরকারি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের তেল ও গ্যাস খাতের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আদানি গ্রুপ ও রিলায়েন্স এডিএজি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, এলএনজি এবং বন্দর খাতে ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহের কথা ঘোষণা করেছিল।’

ভারতের আগের বিনিয়োগগুলো নিয়ে বাংলাদেশ সন্তুষ্ট কিনা সে ব্যাপারে হর্ষবর্ধনের কাছে বিজনেস লাইনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়।

হর্ষবর্ধন বলেন, ‘বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারতের নিবন্ধিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। টাটা মোটরস, হিরো মোটোকর্প, সান ফার্মা, গোদরেজ, ভিআইপি, সিইএটি টায়ারস, ডাবুর, এয়ারটেল, আদিত্য বিরলা সিমেন্ট-এর মতো কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে উৎপাদনের চুক্তির বন্দোবস্ত করছে। ভারত থেকে আরও বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রিলায়েন্স ও আদানির তৈরি করা বিনিয়োগ প্রস্তাব। অর্থনেতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বিশেষ করে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য দু’টি এলাকা ঠিক করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে মনে করেন হর্ষবর্ধন। ওই সফরে উন্নয়নমূলক পারস্পরিক সহযোগিতার পাশাপাশি আইটি, আইটিইস, সাইবার নিরাপত্তাসহ উচ্চ প্রযুক্তিগত খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যৌথভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর কতটুকু অগ্রগতি হলো সে ব্যাপারে পর্যালোচনা করার সুযোগ মিলবে বলে মনে করেন হর্ষবর্ধন।