বার কাউন্সিল নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জের রিট খারিজ

আগামী ২৫ মে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট আব্দুল মোনেম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তিনি সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান। বার কাউন্সিল নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন আব্দুল মোনেম চৌধুরী। রিটে বার কাউন্সিল নির্বাচন স্থগিত চাওয়া হয়। আগামী ২৫ মে বার কাউন্সিলের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

আইন অনুশীলনকারীদের জন্য ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল আদেশের অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। এটি দেশের আইনজীবীদের লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। পদাধিকারবলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেল বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন স্বাক্ষরিত ২৫ মে নির্বাচন সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ২৫ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।

বার কাউন্সিলের নির্বাচন ১৪ টি সদস্য পদে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৭ টি সাধারণ আসন। ৭ টি সাধারণ আসনে সারাদেশের আইনজীবীরা ভোট দিয়ে থাকেন। ৭ টি আঞ্চলিক আসন বা গ্রুপ আসন। এখানে অঞ্চলভিত্তিক আইনজীবীরা একজনকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে থাকেন। বার কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের মধ্য থেকে সাধারণ আসনে সাতজন এবং গ্রুপ আসনে সাতজন সদস্য নির্বাচিত হবেন।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন, দেশের সব দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণসহ বাজিতপুর, ইশ্বরগঞ্জ, দুর্গাপুর, ভাংগা, চিকন্দি, পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, নবীনগর ও পাইকগাছা দেওয়ানি আদালতসমূহে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে।

এর মধ্যে ‘এ’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) ঢাকা জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘বি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘সি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) চট্রগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘ডি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) কুমিল্লা ও সিলেট জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘ই’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, ‘এফ’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি এবং ‘জি’ গ্রুপে বৃহত্তর (পূর্ববর্তী) দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার অন্তর্গত সব স্থানীয় আইনজীবী সমিতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

গেজেট অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ছিল ৬ এপ্রিল পর্যন্ত, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ছিল ১৩ এপ্রিল এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ২০ এপ্রিল।

গেজেট উল্লেখ করা হয়, কোনো প্রার্থী নির্বাচনের বিরুদ্ধে আপত্তি করতে চাইলে ফলাফল সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের দিন থেকে এক মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এজন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন সংক্রান্ত আপত্তি দরখাস্ত শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন এডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী ও এডভোকেট আব্দুস সবুর। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কার্যালয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ১৪ জুলাই আপত্তিপত্র গ্রহণ করবে।

করোনা মহামারি জনিত পরিস্থিতির কারণে বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারায় বর্তমানে একটি এ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। এই কমিটি ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ১ জুলাই নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য সমর্থিত প্যানেল ঘোষণা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাছাড়াও স্বতন্ত্র অনেক আইনজীবী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এ ধারাবাহিকতা চলতি নির্বাচনে বজায় রয়েছে।

সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ সংখ্যাগরিষ্টতা লাভ করে। সিনিয়র এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান