বাড়ছে আদার দাম,নেই মনিটরিং

আদার দাম স্থিতিশীল থাকার পর গত বেশ কিছুদিন ধরে হঠাৎ বেড়ে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত দুই তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে আদার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ২০ টাকা। তিন দিন আগে চীন থেকে আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এক মাস আগে একই জাতের আদা বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়।

এদিকে পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীদের দাবি সামনে রমজানে আদার চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, চাহিদা অনুসারে সরবরাহ সংকট, আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি পাবার কারণেই আদার দাম বেড়েছে। তবে সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে হঠাৎ আদার দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেক খুচরা বাবসায়ী।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, চায়না থেকে আমদানি করা আদার পাইকারি বিক্রি মূল্যে রাখা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, থাইল্যান্ডের আদা ৫০ টাকা, বার্মিজ আদা ৫০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ৪৮ টাকা এবং ভারতের কেরেলা আদার পাইকারি দাম হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। তবে দেশি আদার সরবরাহ কম থাকার পরও তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে। গত দুই তিন দিন আগে চায়না আদা ৪০ টাকা, থাইল্যান্ডের আদা ৩৫ টাকা, বার্মিজ আদা ৩৮ টাকা, ইন্দোনেশিয়ার আদা ৩৮ টাকা এবং কেরেলার আদা বিক্রি হয়েছিলো ৩৬ টাকা কেজি দরে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যটি পচনশীল হওয়ায় বেশি করে গুদামজাত করা যায় না। তা ছাড়া আদা এখন সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। আমদানিকৃত এই পণ্যটি দেশে আনার পরেও খরচ পড়ে বেশি। আদা কোল্ডস্টোরে সংরক্ষণ করতে হয়। বেশি দিন মজুদ থাকলে পচন ধরে। ওজনে কমে যায়। ব্যবসায়ীদের মুনাফাও করতে হয়। তাছাড়া খাতুনগঞ্জে কয়েকদিন আগে জলাবদ্ধতায় গুদাম ও দোকানে জল ঢুকে অনেক আদা নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে আদার দাম দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের রাজধানী বাণিজ্যালয়ের স্বত্ত্বাধিকারী আবুল খালেক মিয়া বলেন, তিন দিন আগেও আমি চায়না আদা পাইকারি ৪০ টাকা ও ৫০ কেজির বস্তা ১৯৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বিভিন্ন ধরণের আদার দাম কেজি প্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। রমজান আসন্ন, বাজারে আদার সংকট এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আদার দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। তবে সামনে আদার দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

আমদানিকারকদের তথ্যমতে, দেশে আদার মোট চাহিদার প্রায় ৫৫ শতাংশই আসে চীন থেকে। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশের মধ্যে ৩৫ শতাংশ আসে ভারত, থাইল্যান্ড, মায়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। দেশের উৎপাদন ১০ শতাংশ চাহিদা মেটায়। দেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদার উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া দেশি আদা প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে বাজারে এসে ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মাঝামাঝি তা শেষ হয়ে যায়।

ব্যবসায়ী আরো জানিয়েছেন, চলতি বছর মার্চ মাস থেকে আদার দাম ওঠা-নামা করছে। চায়না আদা মাস খানেক আগে ৭০ টাকা কেজি হয়েছিল। পরে তা কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হয় আর এখন তা আবার বেড়ে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন খুচরা বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

চট্টগ্রামের চৌমুহনীর কর্ণফুলী বাজারের খুচরা ক্রেতা আফজালুর রশিদ বলেন, গত সপ্তাহে আমি আদা কিনেছি ৫০ টাকা দরে কিন্তু আজ হঠাৎ আদার দাম বিক্রেতা ৭৫ টাকা কেজি চাচ্ছে। এত দ্রুত বাজারে আদা সহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ছে সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন বাজার মনিটারিং দেখছিনা। গত বছর রমজান আসার আগে বাজার প্রশাসনের নানা পদক্ষেপ দেখেছিলাম। কিন্তু এবার এখনো কোন কিছু দেখছিনা।

আসন্ন রমজান উপলক্ষে বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এ সপ্তাহের মধ্যেই বাজার মনিটরিং শুরু হবে বলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, সরবরাহ সংকটের কারণেই মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে। বাজারে দেশিসহ আরও কয়েকটি জাতের আদা থাকলেও চীনা আদার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া ডলারের দাম বৃদ্ধি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আদাসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

কৃষিবিদরা বলছেন, দেশি আদা গুনে ও মানে বেশ ভালো। বিদেশী আদা আকারে বড়, আঁশ বেশি স্বাদ ও ঝাঁজ কম। সেক্ষেত্রে দেশের যে অঞ্চলগুলোতে আদার উৎপাদন ভালো হয় সেসব এলাকায় আদা চাষের পরিমান বাড়ানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে করে বিদেশ থেকে এত পরিমানে আদা আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। ফলে আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সর্বত্র আদার কিছু চাষ হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, নীলফামারী, টাঙ্গাইল ও লালমনিরহাট জেলায় বেশি চাষ হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আদার চাষ করা হয়। হেক্টর প্রতি গড় ফলন প্রায় সাড়ে ৬ টন। এই উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম। যার কারণে চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে আদা আমদানি করতে হয়।
সূত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/৭ মে,২০১৭