বিশ্বে পেপার কাপের বড় বাজার রয়েছে: কাজী সাজেদুর রহমান

বাংলাদেশে পেপার কাপ শিল্প নতুন হলেও ক্রম-উন্নতির দিকে যাচ্ছে এ শিল্প। প্রতিবছর এর বাজার দ্বিগুন হারে বাড়ছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা চাইছেন, সরকার  শিল্পটিকে হাইপ্রায়োরিটি সেক্টর হিসেবে বিবেচনার পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দিক। সম্ভাবনাময় এই শিল্পের নানা দিক নিয়ে আজকের বাজার ও এবি টিভির সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন, কে পি সি ইন্ড্রাস্ট্রি’র সত্ত্বাধিকারী কাজী সাজেদুর রহমান।  তার সঙ্গে কথপোকথনের চুম্বক অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

কেপিসি’র শুরু
গত পাঁচ বছর ধরে কেপিসি মার্কেটে রয়েছে। মাত্র ৫ বছরের মধ্যে কেপিসি একটা এলিট ও পরিচিত জায়গায় পৌঁছেছে। বড় বড় মাল্টিলেভেল কোম্পানির মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে পেপার কাপের সেক্টরটিকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে এই লেভেলে দেখতে চাইনি। যদিও একেবারে খারাপও বলা যাচ্ছে না। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই সেক্টর ক্রম উন্নতির দিকে যাচ্ছে। প্রতি বছর এর বাজার দ্বিগুণ হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, এটি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমরা বড় ধরনের দুইটি সমস্যা মোকাবিলা করছি। এখনই সমাধান না হলে সামনে এগুলো আরো বড় আকার ধারণ করবে। তা হচ্ছে, পরিবেশ রক্ষায় আমরা অনেক পিছিয়ে। আরেকটি হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতের সমস্যা। আমাদের স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি নেই। এই দুটি সমস্যা সমাধানেই ফুড প্যাকেজিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। পেপার কাপ একটু অন্য ধরনের পণ্য।

বর্তমানে পেপার কাপের যে অবস্থান রয়েছে সেটার একটা পর্যালোচনা করতে পারি। যদি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়, এখন যেমন শহরে প্রতিটি চায়ের দোকানে পেপার কাপ পাওয়া যায়, তেমনি গ্রামের মানুষের মধ্যেও এটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। প্রথমে এটা এতটাই অপরিচিত ছিল যে, সরকারের অনেক কর্তাব্যাক্তিই এটি  সম্পর্কে জানতেন  না। এখন কিন্তু কিছুটা হলেও পরিচিত হয়েছে। এখন সরকারের একটু সহায়তা পেলে এটিকে আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। যেমন, বর্তমানে যে  কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে, সেগুলোর শুল্ক হার বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে । সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যটি পৌঁছে দিতে এটি বড় ধরনের বাধা। আমরা সে জায়গায় কাজ করছি। আশা করি এনবিআর বিষয়টিকে আমলে নিবে।

যেকোনো শিল্পের কাঁচামালের জন্য শুল্ক হওয়া উচিত ০ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। দুর্ভাগ্যবগশত আমাদের এখানে ৬১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যা পুরো বিশ্ব বাজারের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। এমনকি আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতেও আমদানি করা পেপার কাপের কাঁচামালের শুল্ক ০ শতাংশ। ফলে ইন্ডিয়ার প্রতিটি চায়ের দোকানে পেপার কাপ চলে এসেছে। প্লাস্টিক কাপ টোটালি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ওটা পরিবেশকে দূষিত করে। বাংলাদেশও আশা করি ওই জায়গায় পৌঁছে যাবে। আমাদের মার্কেটটাও কিন্তু বড়। বিশ্বে কিন্তু পেপার কাপের বিশাল বাজার রয়েছে। বলা যায়, গার্মেন্টস সেক্টরের চেয়েও বড় হচ্ছে পেপার কাপের বাজার।

পেপার কাপের ভবিষ্যৎ
এই সেক্টরের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বাজারের বাইরে, রাপ্তানি ক্ষেত্রেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই টপ থ্রি’র মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার আশা করি। একটা পর্যায়ে এই শিল্প আরএমজি সেক্টরকেও ছাড়িয়ে যাবে।  সরকারকেও এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। দক্ষ ম্যানপাওয়ার লাগবে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলেই ভালো একটা জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।

এ শিল্পের চ্যালেঞ্জ
যেকোনো শিল্পেরই প্রথম প্রথম অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। আমাদেরও করতে হচ্ছে। বর্তমানে সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে দক্ষ শ্রমিকের। এ সেক্টরের উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তিই আগে প্রয়োজন। আশা করি এ সমস্যার সমাধান হবে। যেহেতু ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। একটা ইন্ডাস্ট্রি একবার গড়ে উঠলে সেখান থেকে অনেক দক্ষ শ্রমিক তৈরি হয়।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা তেমন কঠিন কিছু নয়। পেপার কাপের সঙ্গে এদেশের মানুষ এখনো সেভাবে পরিচিত নয়। তাই একটু প্রচার প্রয়োজন। আর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই ভালো অবস্থানে যাওয়া সম্ভব।  সরকার যদি আমদানি শুল্ক আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করে তবেই হবে। এর পর রপ্তানির সময় ইনসেনটিভের ব্যবস্থা রাখতে পারে।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ
প্রত্যকটি সেক্টরেই আলাদা আলাদা কিছু বিষয় থাকে। ওই সেক্টরে নতুন কেউ আসলে তাকে ভালোভাবে জেনে বুঝে আসতে হবে। অন্য সেক্টরে সে অনেক ভালো হলেও হয়তো এ সেক্টর সম্পর্কে ধারণা নেই, তাহলে তো হবে না। আমাদের অনেকের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখা যায়, নতুন কিছু শিখতে হলে অন্যের কাছে যেতে লজ্জা পায়। এটা কিন্তু ঠিক না। যেকোনো বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারলে তবেই সেখানে সফল হওয়া যায়। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে যেন, সঠিক ধারণা নিয়ে ব্যবসায় ন,মেন তারা। এর পর পরিশ্রম করলে ফল আসবেই। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ধৈয্য ধারণ করা।

অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে
একটি শিল্প দাঁড়িয়ে গেলে সেটির মাধ্যমে তো দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন স্বাভাবিকভাবেই হয়। সেটি যে সেক্টরই হোক। তবে আমাদের এই শিল্প শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, অনেক কিছুর অপচয় থেকেও দেশকে রক্ষা করছে। এটিকেও অর্থনৈতিক ভূমিকা বলা যেতে পারে। যেমন পেপার কাপ ব্যবহারে যদি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা না দেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একজন ভোক্তার ডাক্তার খরচ বেঁচে গেল। এটাও তো অর্থনৈতিক লাভ। বিষয়টি সার্বিকভাবে দেশের প্রেক্ষাপটকে স্পর্শ করে।

সরকারের কাছে চাওয়া
আমি আগেই বলেছি, পেপার কাপ শিল্পের দিকে সরকার একটু মনোযোগ দিলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। যদি সরকার এটাকে ‘হাই প্রায়োরিটি সেক্টর’ হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে অনেক সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। আরেকটা বিষয়, এই শিল্পের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করলে এটি দ্রুত সম্প্রসারিত হবে। এরইমধ্যে সরকার এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে বলে জেনেছি। এটা অবশ্যই ভালো দিক। একজন নতুন উদ্যোক্তাকে যদি ভিন্ন ভিন্ন অফিসে দৌঁড়-ঝাঁপ করে প্রয়োজনীয় কাগজ প্রস্তুত করতে হয়, ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়; তাহলে বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস হলে এই হয়রানিটা হবে না।

কাজী সাজেদুর রহমান
সত্ত্বাধিকারী, কে পি সি ইন্ড্রাস্ট্রি