ভারতীয় ও রুশ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা

মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে সহায়তাকারী ভারত ও রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর ৩২ সদস্যকে সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ১৮ ডিসেম্বর গণভবনে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতের ২৮ যোদ্ধা, তাদের স্ত্রী, সন্তান, চার জন সামরিক কর্মকর্তা, ছয় জন দূতাবাস কর্মকর্তা অংশ নেন। অন্য দিকে রাশিয়ার চার জন যোদ্ধা, তাদের স্ত্রী, তিন দূতাবাস কর্মকর্তা যোগ দেন।

যোদ্ধাদের এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয় ভগত সিং ইয়াদভ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দেয় ভারত। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, তাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের পাশাপাশি তাদের সেনাবাহিনীও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত বাহিনীর কাছেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী।

এই যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থন এবং সহযোগিতাও ছিল। তারাও যেমন প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়েছে, তেমনি জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নানা উদ্যোগের বিরোধিতাও করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে তার সপ্তম নৌবহর পাঠানোর উদ্যোগ নিলে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয় রাশিয়া। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে আসে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া বিদেশিদের নানা সময় সম্মানিত করা হয়েছে।

বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত অনুষ্ঠান স্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অতিথিদের কাছে যান, তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে গণভবন আঙিনা বিজয় উৎসবের আমেজে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অতিথিদের উদ্দেশ্যে বলেন,আমরা আপনাদের ত্যাগ ও অবদানের কথা ভুলিনি। আপনারা আমাদের দেশে এসে আমাদের সম্মানিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন,আপনারা যখন মন চায় আমাদের দেশে আসবেন, আমাদের আতিথেয়তা গ্রহণ করবেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর কিছু বিরল ছবি, ক্রেস্ট, বই ও স্মৃতি চিহ্ন উপহার হিসেবে দেন।

অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে লে. জেনারেল (অব.) জয় ভগবত সিং বলেন,দীর্ঘ নয় মাস অনেক আঘাত ও নৃশংসতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর ভাইদের সাহস একটা পরিবেশ ও ফ্লাটফর্ম তৈরি করেছে। যার ফলে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সহযোগিতায় পাশে এসে দাঁড়াতে পেরেছি।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে ভারতীয় এই সেনা কর্মকর্তা বলেন,বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্ক রক্ত আর ঘামে সংযুক্ত। আমি নিশ্চিত অতি মজবুত এই সম্পর্ক দুই দেশের বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে ভগবত সিং বলেন,বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লাভ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে তার (শেখ হাসিনা) চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সাহসের কারণে।’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আরো ঘনিষ্ঠ ও সম্প্রসারণ হবে আশা করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব নেতিবাচক ও অস্থিতিশীল শক্তিকে পরাজিত করতে পারব।

রুশ প্রতিনিধি দলের নেতা রুশ নৌবাহিনী প্যাসিফিক ফ্লিটের কমোডর জিএস সলকার বলেন, ‘১৯৭১ সালে রাশিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে উদীয়মান বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করেছে।’

জিএস সলকার বলেন,চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপোসাগরের আশপাশে এলাকাকে মাইন মুক্ত করতে ১২ নম্বর স্পেশাল টাক্সফোর্স যোগদানের জন্য আমরা সোভিয়াত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নির্দেশ গ্রহণ করেছিলাম।

আজকের বাজার: এলকে/ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭