ভোলায় আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

জেলায় গত কয়েক বছরে আলুর আবাদ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৫ বছরে এখানে প্রায় ৩০ ভাগ চাষ বেড়েছে। লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিগত বছরগুলোতে দাম ভালো পাওয়াতে অনেকেই আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া চলতি মৌসুমে জেলার ৭ উপজেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে করে হাসি ফুটতে শুরু করেছে চাষিদের মুখে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রসান্ত কুমার সাহা আজ বাসস’কে জানান, জেলায় গত কয়েক বছর যাবত আলুর উৎপাদন ও আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে হেক্টর প্রতি ২২ টন আলুর ফলন হচ্ছে। সামনের দিনে আবাদ আরো বাড়বে। এছাড়া কৃষকদের বীজ বপণ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগসহ সব ধরনের সহায়তা সেবা দেয়া হচ্ছে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে জেলায় মোট আলুর আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে। ২০১৩-১৪ বছরে আরো আবাদ বেড়ে দাড়ায় ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর। ২০১৪-১৫ বছরে আবাদ হয় ৬ হাজার ৩২০ হেক্টর। পরের বছর ২০১৫-১৬ তে ৮ হাজার ৬০৫ হেক্টর ও চলতি বছরে ৮ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। এতে করে বিগত বছরগুলোতে এখানে মোট ২৬ দশমিক ৮৪ ভাগ জমিতে আবাদ বেড়েছে।

এখানকার আবহাওয়া আলুর অনুকূলে থাকায় সহজেই কৃষকরা ভালো ফলন পায়। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার বাসস’কে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে জেলায় আলু চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এখানকার বেলে দোঁয়াশ মাটি আলু চাষের বিশেষ উপযোগী। আর সাম্প্রতিক সময়ে গম চাষে কৃষকরা নিরুৎসাহী হওয়ায় আলু চাষ বৃদ্ধি পয়েছে। জেলায় মূলত ডায়মন্ট ও কার্ডিনাল জাতের আলুর চাষ হয়। স্থানীয় কোল্ড স্টোরেজের মাধ্যমে এসব সংরক্ষণের মাধ্যমে পরে ভালো দাম পায় কৃষকরা।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, উপকূলীয় জেলা ভোলায় প্রকৃতিগতভাবেই দেরিতে আলুসহ বিভিন্ন রবি শস্যের চাষ করা হয়। কারণ দ্বীপ জেলা হওয়াতে এখানকার জমিতে একটু দেরিতে পানি নামে। ফলে একটু দেরিতে ফসল ফলানো হয়। উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় ইতোমধ্যে নতুন আলু বাজারে এসেছে। ব্যাপক আলু থাকায় দামও কম বাজারে। তবে ভোলার আলু সংরক্ষণের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে বিক্রি করেন চাষিরা। তাই দাম ভালো পায় তারা।

সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বাগমারা এলাকার চাষি রফিক উদ্দিন বলেন, তিনি ৩ একর জমিতে আলুর চাষ করেছেন। গত বছর লাভ হওয়াতে এবার তিনি জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। আর মৌসুমের শুরু থেকে খেতে রোগ-বালাই ও পোকা কম থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের বাসিন্দা আমজাদ কাজী ও রতন সিকদার বলেন, গত বছর গমের আবাদ করে তারা লোসকান হয়েছে। তাই এবার লাভের আশায় আলুর চাষ করছেন তারা। সদর উপজেলার ইলিশা এলাকার কৃষক রহমান দফাদার বলেন, প্রত্যেক বছরই তিনি আলুর চাষ করেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আলুর ফলন ভালো হয় এখানে।

কৃষি কর্মকর্তারা আরো জানায়, আলুর খেতে রোগ, পোকা, ভাইরাস ও ছত্রাক দূর করতে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শমূলক সেবা দেয়া হচ্ছে। রোগ থেকে পরিত্রানের জন্য কৃষকদের বীজ শোধন করে রোপণের জন্য বলা হয়েছে। অগ্রহায়নে আলুর বীজ রোপণ করা হয়। আর মাঘের শেষের দিকে চাষিরা ফলন ঘরে তোলেন। সাধারণত ৩ মাসের মধ্যে আলুর ফলন পাওয়া যায়। কৃষকদের যে কোন সমস্যায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আলুর ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে থাকেন।

খামার বাড়ি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬০ মে. টন আলু উৎপাদন হয়েছে। পরের বছর উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার মে.টন। আর চলতি বছর আশা করা হচ্ছে আড়াই লাখ মেট্রকিটনেরও বেশি আলু উৎপাদন করা হবে। তাই চাষিরা আলু গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা আরো বলেন, জেলায় সরকারিভাবে ২ হাজার মে.টন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি হিমাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উন্নতমানের আলুর বীজ থাকবে। এখানে অত্যাধুনিক একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। যার মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হবে।

সুত্র: বাসস