ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকিতে চটেছেন অর্থমন্ত্রী

নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের দাবি না মানলে ছাত্রদের মত আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিতে চটেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।  পাল্টা জবাবে যবসায়ীরা রাস্তায় নামলে সরকারের পক্ষ থেকে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

রোববার ৩০এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ আইনে ব্যবসায়ীদের দাবি না মানলে আমরা ছাত্রদের মত আন্দোলনে যাব।

তার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে অর্থমন্ত্রী এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

আবু মোতালেব বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা চরম ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে আছি। বন্ড সুবিধার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারত ও চীন থেকে ট্যাক্স ছাড়া মাল চলে আসছে। তাদের সাথে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। ভ্যাট ১৫ শতাংশ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু ফলাফল জিরো। নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দিতে আইএমএফ একটি ফান্ড দিয়েছেন।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ৩৭৭টি অ্যাসোসিয়েশন ও ৬৪টি চেম্বার আছে; সেগুলোতে কোনো ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছেন কি?’

“লোক দেখানোর নামে ট্রেনিং এর নামে এফবিসিসিআই থেকে ৭-৮ জনকে বিদেশে নিয়ে গেছেন। তারা কি শিখেছেন, তারা কি আদৌ আমাদের সংস্পর্শে এসেছেন? আমরা যদি প্রশিক্ষিত না হই কিভাবে এ আইন বাস্তবায়ন করবেন? কি করে অনলাইন সিস্টেমস ও সর্বক্ষেত্রে ইসিআর ব্যবহার করবেন?’

আবু মোতালেব বলেন, ‘টার্নওভার ট্যাক্স বাড়ানো না হলে দেশিয় পণ্য ধরা খাবে। দেশিয় শিল্প বাঁচবে না। প্যাকেজ ভ্যাট আইন না থাকলে ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়েছে। একটি মুদি দোকানে টার্নওভার বছরে দেড় কোটি টাকা হয়। সেখানে ৩ কোটি টাকা করার প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, প্যাকেজ ভ্যাট যেকোন রূপে নতুন ভ্যাট আইনে না আনলে ব্যবসায়ীরা ছাত্রদের মত আন্দোলনে যাবে। এসব বিবেচনা করে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করেন। না হলে ভ্যাট আইনের পরে ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইন করে লাভ হবে না, আমরা আন্দোলনে নামলে আপনারা ব্যর্থ হবেন।

এ সময় মন্ত্রী আবু মোতালেবকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, বর্তমানে দেশে ৮ লাখ ৬৪ হাজার নিবন্ধিত করদাতা আছেন। তাদের মধ্যে ৩২ হাজার রিটার্ন দাখিল করেছেন। আপনারা ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের কতজন রিটার্ন দিয়েছেন তার তালিকা আমাকে দেন। আপনারা কতজন ভ্যাট জমা দেন। আন্দোলন করে কিছু হবে না, আন্দোলন করলে দমন করা হবে।

এ সময় ব্যবসায়ীরা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারে হট্টগোল শুরু করেন। মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। পরে এফবিসিআইএর সহ সভাপতি মহিউদ্দিন ও এনবিআর চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে ব্যবসায়ীরা শান্ত হয়।

মহিউদ্দিন বলেন, বাজেটে কি আসছে আমরা এখনো জানি না। শেখ হাসিনার সরকার আমাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দেবে না বলে আমাদের আশা। আমাদের ন্যায্য দাবি সরকার মেনে নেবে। ব্যবসাবান্ধব একটি বাজেট হবে।

শেষে মন্ত্রী এ বক্তব্যের বিষয়ে বলেন, আজ আমরা আলোচনা করতে বসেছি কিন্তু আবু মোতালেব হুমকি দিচ্ছেন, আমি কথাগুলো একটুও পছন্দ করি নাই। আবু মোতালেবের কথাগুলো তুলে নেওয়া উচিত। এখানে আলোচনা হচ্ছে, এখানে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে লাভ নেই।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/আরআর/ ৩০এপ্রিল,২০১৭