রোনাল্ডোকে ছাড়া নতুন জীবনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জুভেন্টাস

ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর দল ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেবার ঘটনায় নি:সন্দেহে জুভেন্টাসের শক্তি অনেকটাই খর্ব হয়ে গেছে। যদিও তুরিনে তার প্রস্থানে খুব একটা হতাশ হবার কোন কারন নেই। অনেকটাই অনুমেয় এই ট্রান্সফারের পর জুভেন্টাস এখন নতুন করে জীবন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর পুরো বিষয়টি যে সমঝোতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয় এতেই অনেকটা স্বস্তি খুঁজে পােেচ্ছ জুভেন্টাস।

কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রিতো বলেই দিয়েছেন ‘জীবন চলবে।’। শুক্রবার দিনের শুরুতেই পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী রোনাল্ডোর দল ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দিয়েছিলেন আলেগ্রি। তবে সিটিতে নয় শেষ পর্যন্ত পুরোরো ডেরায় ফিরে গেছেন সিআর সেভেন।

২০১৮ সালে ইতালিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ট্রান্সফারের রেকর্ড গড়ে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছিলেন রোনাল্ডো। যদিও ঘরোয়া ও ইউরোপীয়ান আসরে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়ের কাছ থেকে ক্লাব খুব একটা লাভবান হয়নি। ইতালির অন্যতম সমর্থিত ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত জুভেন্টাস গত বছর ইন্টার মিলানের কাছে নয় বছরের সিরি-এ শিরোপা হারিয়েছে। ১৯৯৬ সালের সর্বশেষ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলটি ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে সবশেষ খেলেছে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে।

রোনাল্ডোকে দলে ভেড়ানোর তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, ২৫ বছরের ইউরোপীয়ান শিরোপা খরা কাটিয়ে ওঠা। কিন্তু রোনাল্ডো আসার পর থেকে তিন মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালের পরে আর খেলতে পারেনি জুভেন্টাস। গত দুই মৌসুমে লিঁও ও পোর্তোর কাছে শেষ ১৬’ থেকেই বিদায় নিয়েছে। আর গত মৌসুমে ইন্টার মিলানের থেকে ১৩ পয়েন্ট পিছিয়ে ঘরোয়া লিগেও ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে। যে কারনে কোচ আন্দ্রে পিরলোর বিদায় ঘন্টাও বেজে গিয়েছিল। লিগের শেষ দিনে ঘরের মাঠে ভেরোনার সাথে নাপোলি জিততে না পারায় কোনমতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গাটি ধরে রাখে পিরলো বাহিনী।

জুভেন্টাসের যোগ দেবার পর দুটি সিরি-এ শিরোপা ও একটি ইতালিয়ান কাপ জয় করেছিলেন রোনাল্ডো। ক্লাব ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে ১০০ গোল করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। গত মৌসুমেও সর্বোচ্চ ২৯ গোল করেছিলেন। কিন্তু ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদে যে রোনাল্ডোকে দেখা গেছে তার অনেকটাই অনুপস্থিত ছিলেন জুভেন্টাসের মেয়াদে। গত দুই মৌসুম ধরে সিরি-এ লিগে রোনাল্ডোকে ছাপিয়ে সমর্থকদের মূল আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন বেলজিয়ান তারকা রোমেলু লুকাকু। শুধুমাত্র মাঠের পারফরমেন্সে নয়, যেভাবে দ্রুত তিনি ইতালিয়ান জীবন যাত্রার সাথে মানিয়ে নিয়েছিলেন, ভাষা শিখেছিলেন তা সবই মুগ্ধ করেছে মিলান সমর্থকদের। কিন্তু বিপরীতে রোনাল্ডো কখনই জুভ সমর্থকদের সাথে সেভাবে সত্যিকার অর্থে যোগযোগ স্থাপন করতে পারেননি। গনমাধ্যমের সাথে খুব কম কথা বলেছেন।

ফেব্রুয়ারিতে জুভেন্টাস ঘোষনা দিয়েছিল ২০২০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ১১৩.৭ মিলিয়ন ইউরো, গত বছরের এই একই সময়ের তুলনায় যা দ্বিগুন। এই সময়ে রাজস্ব আয় প্রায় ২০ শতাংশ কমে এসেছিল। রোনাল্ডোকে ছেড়ে দেবার পিছনে আর্থিক বিষয়টিও একটি বড় কারন হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে। রোনাল্ডোর বদলী হিসেবে মোয়েস কিন কিংবা মাওরো ইকার্দিকে দলে ভেড়াতে চায় জুভেন্টাস। নি:সন্দেহে দুজনের কারো সাথেই রোনাল্ডোর তুলনায় হয়না। কিন্তু এই মুহূর্তে ইতালিয়ান অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন ফরোয়ার্ডকেই দলে ভেড়াতে চায় জুভ। ২০১৯ সালে ইন্টার মিলান ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন ইকার্দি। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান