রোহিঙ্গা সঙ্কটের কথা জাতিসংঘে তুলবে তুরস্ক

মায়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি জাতিসংঘের আগামী সাধারণ অধিবেশনে তুরস্কের পক্ষ থেকে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোয়ান।
গত বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।
এমিনে এরদোয়ান বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে তুরস্ক। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের অধিবেশন প্রস্তাব উত্থাপন করবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
মিয়ানমারে সেনা অভিযানের মুখে গত মাসের শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের ¯্রােত বইছে বাংলাদেশ পানে। ইতোমধ্যে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে জাতিসংঘের হিসাব।

বাংলাদেশে দশকের পর দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে। নতুন করে শরণার্থী নেওয়ার সমস্যার কথা বাংলাদেশ সরকার বলে আসছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান তুর্কি ফার্স্ট লেডি। সেইসঙ্গে মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের কথাও বলেন তিনি।
মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে আসছে তুরস্ক সরকার। গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে কথা বলার পর পরিস্থিতি দেখতে স্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠান এরদোয়ান।
ফার্স্ট লেডির সঙ্গে আসা তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মভেলুত ক্যাভুফোগলু বলেন, মিয়ানমারে যে নির্যাতনের কথা বলা হচ্ছে এটা বন্ধে আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করছে তার সরকার। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার পাশাপাশি এ সমস্যা সমাধানে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় নামার পর দুপুরে বিমানে কক্সবাজার পৌঁছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি। তার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহররিয়ার আলম ছিলেন।
দুপুরে তারা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেন। সেখানে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বজনহারা ও আহত দের পাশাপাশি ক্যাম্পবাসীদের সঙ্গেও কথা বলেন এমিনে। এসময় রোহিঙ্গা এক শিশুকে বুকে আঁকড়ে নিয়ে কেঁদে ফেলেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি; নির্যাতনের বর্ণনা দিতে রোহিঙ্গারাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এমিনের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা উপস্থিত ছিলেন।
ওইদিন বিকালে ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি।
দুজনের সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও এটা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর দায়িত্ব নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের মানবিক আচরণের কথাও তুরস্কের ফার্স্ট লেডিকে জানান শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর জন্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশকে প্রশংসা করেন ইউরোপের মুসলিম দেশটির ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোয়ান। রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে তুরস্ক আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ অগাস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর সেখানে নতুন করে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। জাতিসংঘের হিসাবে, দেড় লক্ষাধিক মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এরপরই বাংলাদেশ সফরে এলেন তার স্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তুরস্কের ফার্স্ট লেডির সাক্ষাতের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশের তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজটার্ক উপস্থিত ছিলেন।

আজকের বাজার: সালি / ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭