শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সম্প্রসারণে ভূটানের সঙ্গে প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর বাংলাদেশের

প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশ এবং ভূটান দু’দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট-পিটিএ) স্বাক্ষর করেছে। যেটি কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম আনুষ্ঠানিক পিটিএ।
এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজ অপরাহ্নে দুই দেশের মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভূটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রাজধানীর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানের অন্যপ্রান্তে ভূটানও সংযুক্ত ছিল।
বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এবং ভূটানের পক্ষে অর্থমন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভোম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ভূটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির এই দিনটিকেই শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দু’দেশ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের দিন হিসেবে বেছে নেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং পিটিএ চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনাকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক আখ্যায়িত করে উভয় দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন সময় এসেছে, আমরা পারস্পরিক সুবিধার জন্য এবং আমাদের নাগরিকদের সামগ্রিক উন্নতি ও কল্যাণের জন্য আমাদের অসাধারণ সম্পর্ককে আরও বেশি অর্থবহ করে তুলি।’
তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কেননা আমরা বিশ্বের কোন দেশের সঙ্গে এই প্রথম পিটিএ স্বাক্ষর করছি। আর ভূটানই প্রথম দেশ যে দেশটি একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সার্বভৌম এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বলেন, বাংলাদেশকে ভূটানের স্বীকৃতির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমরা আজ একত্রিত হয়েছি।
তিনি এ উপলক্ষ্যে উভয় দেশের জনগণকে অভিন্দন জানানোর পাশাপাশি কোভিড-১৯ কে সফলভাবে মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দন জানান।
‘ভূটান বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সবসময়ই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা সত্বেও বাংলাদেশ সবসময়ই ভূটানের পাশে থেকেছে। আর এই চুক্তি স্বাক্ষরই ভূটানকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণে বাংলাদেশের স্বীকৃতি।’
এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে একটি লগো প্রকাশ করা এবং ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এ উপলক্ষে পৃথক কেক কাটেন।
বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শনিবার এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
এই চুক্তির ফলে ভূটান তৈরী পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য এবং ইলেকট্রনিক্সসহ ১০০ টি বিভিন্ন ধরণের বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে শুল্ক সুবিধা প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে, ফলমূলসহ ৩৪টি ভূটানের পণ্য বাংলাদেশে একই সুবিধা পাবে।
ভূটান থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পাথর আমদানি করা গেলে বাংলাদেশের দেশের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় হ্রাস পাবে, যা নির্মাণ খাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে। এছাড়া, স্বল্পমূল্যে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করা সহজ হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের ফলে বর্তমানে প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য সুবিধা হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ও নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি সময়োপযোগী করা, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা (এফটিএ)।
সার্কের সদস্য হওয়ায় উভয় দেশের একে অপরের পণ্যাদির চাহিদা থাকায় বাংলাদেশ ও ভূটানের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে। অর্থনীতিবিদদের অভিমত, ভূটানের সাথে পিটিএর স্বাক্ষর বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনায় সক্রিয়তারই ইঙ্গিতবহ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ২৬ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৭ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
২০১৯ সালের ১২-১৫ এপ্রিল ভূটানের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় এ নিয়ে আলোচনা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২১-২৩ আগস্ট দু’দেশের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি বৈঠক হয়। এরপর গত ১৯ জুন হয় দ্বিতীয় বৈঠক। এসব বৈঠকের আলোকে গত সেপ্টেম্বরে বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।