সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি বাজার

পুঁজিবাজারে টানা দুই দিনের বড় দর পতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আগের এক মাস রুদ্ধশ্বাসে সূচক বাড়তে দেখে মুদ্রার অপর পিঠের কথা যারা ভুলে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকে গত চার দিনের বাজার আচরণে অনেকটাই যেন ভেঙ্গে পড়েছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সূচক বৃদ্ধির সময় কিছুটা বাড়াবাড়ি থাকায়, মূল্য সংশোধনও একইরকম তীব্রতার সাথে হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে যথেষ্ট মূল্য সংশোধন হয়েছে। তাই যে কোনো সময় বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণকারীদের হিসেবে, বাজার এখন সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের বিশ্লেষণ রিপোর্ট অনুসারে, বাজারের পরর্ব্তী সাপোর্ট লেভেল ৫৪০০ পয়েন্ট। আজ সোমবার লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪২১ পয়েন্ট। অর্থাৎ আর মাত্র ২১ পয়েন্ট দূরেই সাপোর্ট লেভেল, যেখান থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পেতে পারে।

উল্লেখ, টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসে (Technical Analysis) বাজারের দুটি পর্যায়কে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়, এর একটি হচ্ছে সাপোর্ট লেভেল (Support Level), অপরটি হচ্ছে রেজিস্ট্যান্স লেভেল (Resistance Level)। বাজারে দর পতন হতে থাকলে এক পর্যায়ে এসে আপনা আপনি তা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সঞ্চয় করে। যে পর্যায়ে এসে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ও সমর্থন পায়, সেটিকে সাপোর্ট লেভেল বলা হয়। অন্যদিকে বাজার যখন উর্ধমুখী ধারায় ছুটতে থাকে তখন এক পর্যায়ে তা উপরে উঠতে বাধা পায়। ফলে এ জায়গায় দর পতন হয়। এটিকে রেজিস্ট্যান্স লেভেল বলে।

টেকনিক্যাল এনালিস্টদের মতে, ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্টে একটি রেজিস্ট্যান্স ছিল। তার আগে ৫ হাজার ২০০ পয়েন্টেও একটি রেজিস্ট্যান্স ছিল। নতুন বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আনাগোনা আর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কিছু ইতিবাচক বক্তব্যে বাজারে যে শক্তি সঞ্চয় হয়, তা ৫ হাজার ২০০ পয়েন্টের বাধাকে (Resistance) উড়িয়ে দেয়। দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে বাজার পরবর্তী রেজিস্ট্যান্সের মুখোমুখী এসে উপস্থিত হয়। তবে এ পর্যায়ে এসে একদিনের বেশি অবস্থান করতে পারেনি। সেখান থেকেই দর পতন শুরু হয়।

অন্যদিকে বাজার সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি চলে আসায় ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও ব্যাপক। তবে বাজার যে সব সময় টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের সূত্র মেনে চলে এমনও নয়। তাছাড়া কোনো কারণে এই সাপোর্ট লেভেলের (৫ হাজার ৪০০) নিচে নেমে এলে পরবর্তী সাপোর্ট লেভেলে না পোঁছানো পর্যন্ত দর পতনের আশংকা থেকেই যায়।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পর্যায় থেকেই বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। কারণ ইতোমধ্যে বাজারে যথেষ্ট মূল্য সংশোধন হয়েছে। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই আর্থিক প্রতিবেদনকে ঘিরে যে স্নায়ুর চাপ থাকে তা কাল পরশুর মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তাই বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

উল্লেখ, দীর্ঘ মন্দার পর গত বছরের শেষভাগে বাজারে কিছুটা গতি সঞ্চার হতে শুরু করে। শেয়ারের মূল্য স্তর অনেক কমে যাওয়া, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যাংক আমানতের সুদ হার হ্রাস পুঁজিবাজারে গতি সঞ্চারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অর্থসূচক আয়োজিত ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোতে দেওয়া বক্তব্য বলেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে আগালে সূচক ১০ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করলেও তাতে উদ্বগের কিছু থাকবে না, বিএসইসি বাজারে হস্তক্ষেপ করবে না। এই বক্তব্যকে অনেক বিনিয়োগকারী বিশেষ ইঙ্গিতবহ বলে মনে করতে থাকেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী একাধিক অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে বাজার আরও শক্তিশালী হবে। এতে উর্ধমুখী বাজার বেশ তেতে উঠে। এক মাসের ব্যাবধানে ডিএসইএক্স প্রায় সাড়ে ৭শ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৫৬ পয়েন্ট থেকে ৫ হাজার ৭০৮ পয়েন্ট উঠে আসে। এতে বাজারে মূল্য সংশোধন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত তিন দিনে প্রায় ৩শ পয়েন্ট মূল্য সংশোধন হয়।

সুত্র:   অর্থসূচক