সালমান শাহ’র মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য, খোঁজ মিলছে না রুবির

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নব্বইয়ের দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ২১ বছর পর এসে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাবেয়া সুলতানা রুবি। যিনি নিজেও সালমান হত্যা মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে অন্যতম। এতে সালমান ভক্তদের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

গত সোমবার দেওয়া ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে ‌’সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি; সেটি ছিল হত্যা’ এমন তথ্য দেওয়ার দু’দিন বাদেই দাবি থেকে সরে এসেছেন রুবি। সালমান শাহর মৃত্যু প্রসঙ্গে বুধবার সকালের আরেকটি ভিডিওতে রুবি জানান, এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, হত্যা না আত্মহত্যা বলব না। আগেরবার ইমোশনাল হয়ে বলেছিলাম। এটা ইনভেস্টিগেশন করলে বের হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে চাইনিজ স্বামী ও দুই সন্তানসহ অনেক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি।

সোমবারের ভিডিও প্রকাশের পর থেকে প্রবাসী সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না তিনি। এমনকি তার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন অনেক প্রবাসী সাংবাদিক। পেনসিলভেনিয়ায় তিনি যেখানে থাকতেন সেখানে গিয়েও রুবিকে পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সালাহউদ্দিন নামক এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।

সোমবারের ভিডিও প্রকাশের পর সালমান শাহের মা সাবেক জাতীয় পার্টি নেত্রী ও এরশাদের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নীলা চেৌধুরী রুবির ফোন নম্বর চেয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতেও রু্বির কোনো সাড়া পাওয়া যায় নি।

এ বিষয়ের নীলা চেৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। পরিবার সূত্রে যায়, তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

সোমবার রুবি বলেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই। সালমান শাহকে খুন করা হইছে, আমার হাজব্যান্ড এটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে। সামিরার ফ্যামিলি করাইছে আমার হাজব্যান্ডকে দিয়ে। আর সব ছিল চাইনিজ মানুষ।

বুধবার রুবি জানান, সম্প্রতি ছেলে ভিকির কাছে সালমানের মৃত্যুর সময়কার একটা ঘটনা শুনে সন্দেহ হয় তার। সালমানের মৃত্যুর পরপরই সামিরা (সালমানের স্ত্রী) একটি পুটলি পাশের ছাদে ছুড়ে ফেলার জন্য ভিকিকে দেয়। এ ঘটনা শুনে তার সন্দেহ হয়।

২১ বছরে নানা সময়ে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা দাবি করেছেন রুবি। এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি জানতামই না এটি খুন হবে। আমি তো পোস্টমর্টেম রিপোর্টের উপর বিশ্বাস করে বারবার আত্মহত্যা বলছি।

আরো বলেন, আমি হত্যা বা আত্মহত্যার সাক্ষী ছিলাম না। আমি যা শুনেছি সামিরার মুখে শুনেছি। সামিরার মুখে শুনে আত্মহত্যা বলেছি।

তিনি প্রশ্ন তোলেন সামিরাকে কেন সামনে আনে না। ওর বাবা কেন ওর হয়ে কথা বলে। ওর স্বামী কেন কথা বলে। সামিরা কেন বলেন না, কী কারণ ছিল?

ভিডিওতে কয়েকবার কোরআনের আয়াত উল্লেখ করেন রুবি, জেনেশুনে তোমরা সত্যকে গোপন করো না। তাই তিনি সংসারের অশান্তি হবে জেনেও ভিডিওতে এসেছেন।

সোমবারের ভিডিও প্রসঙ্গে বলেন, ওটা নীলা ভাবির জন্য মেসেজ ছিল। ভাইরালে আমি বিশ্বাস করি না।

রুবির সঙ্গে সালমানের পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কিছু উঠে এসেছে নব্বই দশকে লেখা সুপন রায়ের বই ‘সালমান শাহ অজানা কথা’য়। সেখানে বলা হয়, ‘রাবেয়া সুলতানা ওরফে রুবি থাকেন সালমানের ফ্ল্যাটের অর্থাৎ ইস্কাটন প্লাজার উত্তর পাশের বিল্ডিংয়ে। তিনি রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রশিদের মেয়ে। প্রয়াত ক্যাপ্টেন জামিল ছিলেন তার স্বামী। জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর যে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয় তার স্বামী ছিলেন তাদের একজন।

১৯৯৩ সালে প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান সালমান শাহ। সব মিলিয়ে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার বেশিরভাগই হিট। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন এ নায়ক। সালমানের মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে দুই দশক ধরে বিতর্ক চলছে।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৯ আগস্ট ২০১৭