সিরিজ জয় আমাদের বড় অর্জন : তামিম

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়কে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন  বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল।  গতকাল শেষ  ম্যাচ জিতে তিন  ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। এই নিয়ে সপ্তমবারের মত বিদেশের মাটিতে দ্বিপাক্ষীক সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় অর্জন বলে মনে করেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বিশেষভাবে দলে থাকা চার সিনিয়রের জন্য। সেই সাথে পেসার তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন তামিম।
তামিমের মতে, এই সিরিজ জয় বড় অর্জন। বিশেষভাবে দলের চার সিনিয়র খেলোয়াড়ের  জন্য। আমরা এখন বিশ^াস করি- বিদেশের মাটিতেও জয় সম্ভব। বল হাতে দুর্দান্ত করেছে তাসকিন। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরও দলের জন্য মাঠে নামার জন্য সাকিবকে ধন্যবাদও তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে সিরিজ জয় তো দূরে থাক, কখনও ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। অবশেষে এবারের সফরে সেই বন্ধ্যাত্ব ঘুচলো বাংলাদেশের।
সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ৩৮ রানে জিতেছিলো বাংলাদেশ। সেটিই ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়। জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ম্যাচ হারলেও, সিরিজ জয়ে মরিয়া ছিলো টাইগাররা।
তবে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচটি সেঞ্চুরিয়নে হওয়ায়, ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ^াসী ছিলো বাংলাদেশ। কারন সেঞ্চুরিয়নেই সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতেছিলো টাইগাররা।
তৃতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াই করার সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপের সামনে অসহায় ছিলো প্রোটিয়া ব্যাটাররা। তাসকিনের ৫ উইকেট শিকারে ১৫৪ রানেই অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৫৫ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে ১৫৯ বল খেলেছে বাংলাদেশ। টার্গেট স্পর্শ করতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক তামিম। ৮২ বলে অপরাজিত ৮৭ রান করেন তিনি। এছাড়া লিটন দাস ৫৭ বলে ৪৮ রান করেন। ২০ বলে ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন সাকিব।
ম্যাচ শেষে তামিম বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জেতা একটি বিশাল অর্জন। এটা মনে হয় আমার ক্যারিয়ারে, আমাদের ক্যারিয়ারে বিরাট অর্জন। আমরা ৪ জন সিনিয়র ১৫ বছর ধরে খেলছি, আমি এই সিরিজ জয়কে ওপরেই রাখবো, এটা বিরাট জয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ানডে ক্রিকেট আমাদের অনেক গর্বেও বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি এই ফরম্যাটে আমরা অনেক ভালো দল। আমাদের হোম সিরিজে বিশ্বের সব দলকেই হারিয়েছি। আমার মতে, এই ফরম্যাটে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং গত ৫-৬ বছর ধরেই খুব ভালো করছি। আমরা এখন বিশ্বাস করি, আমরা বিদেশের মাটিতেও সিরিজ জিততে পারি। এই জয় সামনে এগিয়ে যেতে আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে।’
বল হাতে ৯ ওভারে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নেন তাসকিন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটা  ছিল তার দ্বিতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট । তাই ম্যাচ সেরা হন তাসকিন। এমনকি সিরিজ সেরাও হন তিনি।
তৃতীয় ওয়ানডের আগে, হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তাসকিন। কারন আইপিএলের পঞ্চদশ আসরের জন্য লক্ষেèৗ  সুপার জায়ান্টস তাসকিনকে দলে নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু দেশের কথা চিন্তা কওে সে  প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তাসকিন।
তাই তামিমের মতে, সিরিজ সেরা ও ম্যাচ সেরার পুরস্কার তাসকিনের জন্য আইপিএল ট্রফি। তাসকিনকে উদ্দেশ্য করে তামিম বলেন, ‘যখন তাসকিন ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজের ট্রফি দু’টি পেল, পুরস্কার বিতরণীর সময় তাকে বলেছিলাম, ‘এটি তোমার আইপিএল। এটি আইপিএলের চেয়ে বড়।’
তামিম আরও বলেন, ‘দেশের হয়ে খেলার চেয়ে অনুপ্রেরণার কিছু হতে পারে না। আইপিএল খেলার দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিল সে। সে তরুণ, আসলে কাজটা কঠিন। আপনি এরকম সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না। কিন্তু সে এখন ঠিক আছে। সে খুশি যে, দেশের হয়ে খেলছে এবং ভালো করছে।’
সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচের আগে দেশ থেকে সাকিব খবর পান মা, শ্বাশুড়ি ও দুই সন্তান অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। শেষ ওয়ানডে না খেলে দেশে ফেরার শঙ্কা জেগেছিলো। কিন্তু শেষ ওয়ানডে খেলার সিদ্বান্ত নেন সাকিব। এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নেমে বল হাতে ২৪ রানে ২ উইকেট ও ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৮ রান করেন সাকিব।
তাই সাকিবকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি তামিম। তিনি বলেন, ‘আমার মতে, সাকিবের এখানে আসা ও খেলা অনেক বড় বিষয় ছিল। বিশেষ করে তার দুই মেয়ে, মা এবং শাশুড়ি হাসপাতালে ভর্তি। তবু সে দেশের হয়ে খেলছে। এটিতেই তার চরিত্রের প্রমান মেলে। সে সিরিজটি জিততে চেয়েছিল। আমি তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। পুরো সিরিজে সে দুর্দান্ত ছিল।’
ওয়ানডে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হলেও, পুরো সিরিজ জুড়েই বাংলাদেশের প্রবাসীদের  লাল-সবুজ পতাকা হাতে তামিম-সাকিবদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তাই সেঞ্চুরিয়ন ও জোহানেসবার্গকে মিনি ঢাকা মনে হয়েছে তামিমের।
তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমার মনে হয়েছে এটি মিনি ঢাকা। তারা অসাধারণ ছিল। রাসেল, আমাদের হেড কোচ যেমনটা বলে, তারাই আমাদের দলের দ্বাদশ ব্যক্তি। আমরা যেখানেই খেলি, জয় পাই অথবা হারি, দর্শকরা সবসময় আমাদের পাশেই থাকে।’