স্বাধীনতার চেতনায় সুস্থধারার রাজনৈতিক প্লাটফর্মের নাম ‘এনডিএম’

চলমান রাজনীতির ঘাটতি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতার চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জনগণের গণতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে দৈনিক আজকের বাজার-এর সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিভ মুভমেন্ট- এনডিএম এর মহাসচিব আবু তাহের মুহম্মদ গোলাম মাওলা চৌধুরী। ফেনী নদীর পানিরক্ষা আন্দোলনের উদ্যোক্তা হিসেবেও পরিচিত তিনি। তিনিই নবাব শমসের গাজীর সপ্তমবংশধর। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক কাজী লুৎফুল কবীর। পাঠকদের উদ্দেশ্য হুবহু সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো।

আজকেরবাজার: একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীনতার চেতনাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী: বাঙলার পরাধীনতা থেকে স্বাধীকার ও স্বাধীনতার দাবি আসে ধাপে ধাপে। দু’শো বছর ব্রিটিশের গোলামীর ইতিহাস, স্বাধীনতার দীর্ঘ আন্দোলন পরও তিনটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্মের দাবি এড়িয়ে বাঙলার স্বাধীনতাকে পদদলিত করা হয়। আবারো বাঙালী জাতি আটকা পড়ে পরাধীনতার জিঞ্জিরে। কখনও ইংরেজ আবার কখনওবা উর্দূভাষার কবলে। সেখান থেকেই আসে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬ দফার দাবি এবং সবশেষ ৭১-এ স্বাধীনতা আদায়ে মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাক হানাদারদের পরাজয়ের মধ্যদিয়ে জন্ম নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

আজকেরবাজার: বাঙালী আর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বলতে আসলে কি বুঝায়?

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী: জাতীয়তাবাদ, ভাষা ও ভূখণ্ডের ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হয়। লাখো বাঙালীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে যে ভূখণ্ডের জন্ম হয় তার নাম বাংলাদেশ। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয়া নতুন এই ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। যেখানে ভাষার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয় ভূখণ্ডের মৌলিক অধিকার। বাঙালী পায় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। যার নিজস্ব স্বকীয়তা থেকেই প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।

আজকেরবাজার: দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করছেন, অথচ আপনারা বলছেন জনগণের গনতন্ত্র, এর ব্যাখ্যা কি?

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী: নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগই শুধু গণতন্ত্র নয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো মানুষের মৌলিক অধিকারের দাবিতে। সেই মৌলিক অধিকারের কোনটি প্রতিটি মানুষ ভোগ করছেন? অথবা সাংবিধানিকভাবে ক’টি অধিকার ক’জন মানুষের জীবনধারায় শতভাগ পরিবর্তন আনতে পারছে? সুতরাং শুধু নির্বাচন নির্ভর গণতন্ত্র বা ভোটের দিনের গণতন্ত্র কখনই জনগণের গণতন্ত্র হতে পারে না। আর সেটাও কি সঠিক পন্থায় চর্চা হচ্ছে? সুতরাং জনগণের গণতন্ত্র কোথায় দেখলেন?

আজকেরবাজার: নির্বচিত সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কেন বলা হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট?

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী: ক্ষমতাশীনরা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকার, এতে কোন সন্দেহ নেই। এমনকি কোন দল নির্বাচনে অংশ নিলো বা না নিলো তাও বিষয় নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো নির্বাচনটা হয়েছে কিভাবে? গণ-আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ৯০-এ স্বৈরাচারের পতন হলেও, পরবর্তী সময় প্রকৃত গণতন্ত্র কি এদেশের রাজনীতিকে অলংকিত করতে পেরেছে? নিশ্চয় না, যদি তাই হতো, তাহলে কখনই প্রয়োজন হতো না তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামের একটি অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির অভিভাবকত্বে নিরপেক্ষ নির্বাচনের। অতীতের সরকারগুলো কখনই, জনগণের গণতন্ত্র চর্চায় আন্তরিক ছিল না। আর সে কারণেই রাজনৈতিক সংকট চলমান।

আজকেরবাজার: এনডিএমের মূলনীতিতে ধর্মীয় মূল্যবোধ শব্দগুলো কেন রাখা হয়েছে?

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী: মদীনা সনদের মধ্যদিয়ে বিশ্ববাসীর জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধের নির্দেশনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ধর্ম পালনে সব ধর্মাবলম্বীদের সম সুযোগের কথা। শুধু তাই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকল্প হতে পারে না। যে কোন ধর্ম বিশ্বাসীরা এর বাইরে নয়। যার মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ থাকে, সে কখনও হত্যা-খুন-গুম, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও রাষ্ট্রবিরোধী ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারে না। এমনকি অন্য ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনাও রয়েছে ধর্মীয় মূল্যবোধে।

আজকেরবাজার: কবে নাগাদ এনডিএম-এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে?

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী: দিন তারিখ ঠিক না হলেও আসছে বছরের প্রথম দিকে সুবিধাজনক সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নাম, গঠনতন্ত্র ও কর্মপরিকল্পনা ঘোষনা করা হবে।

আজকেরবাজার: কি কারণে নতুন দল করার কথা ভাবছেন?

এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী: সুস্থধারার রাজনীতিই পারে জাতীয় রাজনীতির চলমান সংকট সমাধান করতে। ৪০/৪৫ বছরেও আমরা সেই পথে সঠিক পন্থায় হাঁটতে পারিনি। নতুন প্রজন্মের জন্য তৈরী করা যায়নি রাজনীতির সুস্থধারা। দেয়া সম্ভব হয়নি সংকট সমাধানে কোন ধরনের সঠিক দিক-নির্দেশনা। ক্ষমতা আকঁড়ে রাখা আর ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্ব থেকে জনগণকে বের করে আনতে আমরা মুক্ত ও সুস্থচিন্তার রাজনীতিকদের এক মঞ্চে সমবেত করার চেষ্টা করছি।