সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ বছরে ১৬১৮ জনের কারাদণ্ড

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত (৩ বছর) ৯৫ হাজার ৫৭৯টি মামলার মাধ্যমে মোট ৮কোটি ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৯১২ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ সময়ে এক হাজার ৬১৮ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান এবং ৪ হাজার ৪৮টি গাড়ি ডাম্পিং স্টেশনে প্রেরণ করা হয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে টেবিলে উত্থাপিত কামরুল আশরাফ খানের (নরসিংদী-২) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।

দেশের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বর্তমান সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, সমীক্ষার মাধ্যমে মোট ২২৭টি দুর্ঘটনাপ্রবণ (ব্ল্যাক স্পট) স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। তন্মধ্যে ২৭টি স্পট-এর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

জঙ্গিদমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি

কামাল আহমেদ মজুমদারের (ঢাকা-১৫) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিদমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ভিত্তিতে বর্তমান সরকার কার্যকর পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে যে-সকল বিপদগামী জঙ্গিসদস্য জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরে আসবে তাদেরকে আইনি সহায়তা প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি দমনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, সফলতার এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকার ভবিষ্যতেও নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজ করবে। জঙ্গি সংগঠনগুলোর অনলাইনভিত্তিক প্রচারণার দিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, মসজিদের ইমাম, আলেম সমাজ, শিক্ষক-ছাত্রসমাজ, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে ডিজিটাল তদারকি

মোরশেদ আলমের (নোয়াখালী-২) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের (বিডিআরইএন) আওতায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটাল তদারকি সিস্টেমের আওতাভুক্ত হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যৌথ অর্থায়নে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ) বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন ও বহির্বিশ্বের শিক্ষা ও গবেষণা নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিআরইএন) স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় সারাদেশে ৩ হাজার কিলোমিটার ওভারহেড অপটিক্যাল গ্রাউন্ড ওয়্যার (ওপিজিডব্লিও) নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরে সংযুক্ত করার জন্য ৪২টি পয়েন্ট টু পয়েন্ট অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।

এ ছাড়া ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজ ক্যাম্পাসে অবস্থান করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারছেন।

যেহেতু বিডিআরইএন ট্রান্স এশিয়ান এডুকেশন নেটওয়ার্ক (টিএইএন-১১) এবং এ জাতীয় অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত, তাই বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারের দরজা আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে উন্মুক্ত হয়েছে।

বিডিআরইএনের মাধ্যমে পাইলট ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সিসি ক্যামেরা ও একসেস কন্ট্রোল ডিভাইস স্থাপন করা হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে এ ব্যবস্থা কার্যকর প্রমাণিত হলে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ ব্যবস্থা করা হবে।

 

সুত্র: দ্য রিপোর্ট