১০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব দিল ৪৬ প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান থেকে সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে শতকোটি টাকার উপরে রাজস্ব প্রদান করেছে মাত্র ৪৬টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া অর্ধশত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পরিশোধ করেছে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে আরও ৪৫টি।

ফলে সরকারি-বেসরকারি ১০০ প্রতিষ্ঠান হতে সব মিলিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আদায় করেছে ১৬ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকার রাজস্ব। যা মোট রাজস্বের প্রায় ৪৬ শতাংশ। সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের আমদানির তথ্য ও রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার ১০ লাখ ৪৩ হাজার চালান খালাস হয়েছে। এসব পণ্য খালাস করেছে দেশের ২০ হাজারের বেশি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। যা থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আদায় করেছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

রাজস্ব পরিশোধের তালিকায় শীর্ষ রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম অয়েল, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ, আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড, এস আলম রিফাইনারি সুগার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেঘনা গ্রুপের তানভীর অয়েল লিমিটেড, টিকে গ্রুপের মেসার্স শবনম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড, মেনোকা মোটরস লিমিটেড এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড।

এছাড়াও ২০০ কোটি টাকার অধিক রাজস্ব পরিশোধ করেছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিঙ্গার বাংলাদেশে লিমিটেড, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেড, উত্তরা মোটরস লিমিটেড এবং আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেড।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখো গেছে, রাজস্ব প্রদানে শীর্ষ থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম অয়েল হতে রাজস্ব এসেছে ১ হাজার ৪১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৫ হাজার ২৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন তেল আমদানি করে। এরপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড হতে এক হাজার ৩১৬ কোটি ৪৬ লাখ, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড হতে ১ হাজার ২৩২ কোটি ৬০ লাখ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড হতে এসেছে ৮৬৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার রাজস্ব।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গত বছরের মতো এবছরও চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব প্রদানে শীর্ষে রয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদান করেছে এমন ১০০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এ গ্রুপের রয়েছে ৬টি প্রতিষ্ঠান। সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠান ৭ হাজার ২৫১ কোটি টাকা মূল্যের ৫২ লাখ টন পণ্য আমদানির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব প্রদান করেছে এক হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠান হতে রাজস্ব এসেছিল প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি।

এদিকে টিকে গ্রুপের ৩টি প্রতিষ্ঠান হতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এরমধ্যে শবনম ভেজিটেবল অয়েল হতে ৩৩০ কোটি ১০ লাখ, বাই ফিশিং করপোরেশন হতে ১৫৮ কোটি ১৮ লাখ ও সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড হতে ৪৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করে কাস্টমস। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ ৩টি প্রতিষ্ঠান রাজস্ব প্রদান করেছিল ৪৭৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

শীর্ষ তালিকায় থাকা মেঘনা গ্রুপের তানভীর ওয়েল লিমিটেড হতে ৩৬৩ কোটি আট লাখ এবং ইউনাইটেড এডিবল ওয়েল হতে ১৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকার রাজস্ব এসেছে। মেঘনা গ্রুপের এ দুটি প্রতিষ্ঠান হতে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা রাজস্ব দিলেও সমাপ্ত অর্থবছরে ৫২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার রাজস্ব প্রদান করেছে।

এস আলম গ্রুপের ৩টি প্রতিষ্ঠান হতে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আদায় করেছে ৫০০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এস আলম রিফাইন্ড সুগার, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ও এস আলম সুপার অডিবল অয়েল হতে এসব রাজস্ব আদায় করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

সিটি গ্রুপের বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড হতে ১৪৪ কোটি ৫৭ লাখ, ভট অয়েল রিফাইনারী লিমিটেড হতে ৯৪ কোটি ১১ লাখ এবং ফারজানা অয়েল রিফাইনারী লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।

শীর্ষ ১০০ রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দিয়েছে আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব প্রদান করেছে ৪৮০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৯৩ কোটি টাকা মূল্যের দুই লাখ ৯০ হাজার টন চিনি আমদানির বিপরীতে এ রাজস্ব প্রদান করেছে।

এছাড়া উত্তরা মটরস কর্পোরেশন লিমিটেড হতে ৩৮৭ কোটি, ইউনিলিভার থেকে ৩৩৫ কোটি, টিভিএস অটো থেকে ৩০৭ কোটি , মেনোকা মটরস থেকে ৩০৪ কোটি, সিঙ্গার থেকে ২৭৮ কোটি, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেড থেকে ২১৯ কোটি, উত্তরা মটরস থেকে ২০৮ কোটি, আরএফএল প্লাস্টিক, প্রাণ ডেইরি মিল্ক ও প্রাণ এগ্রো লিমিটেড হতে ৩৬১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান হতে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে। দেশের বৃহৎ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড হতে গত অর্থবছর ৩৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আদায় হলেও সমাপ্ত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে রবি থেকে আসে ১৭৫ কোটি টাকা; যা আগের অর্থবছরে ছিল ২২২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন থেকে আসে ২১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলালিংক থেকে ২১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এছাড়াও শতকোটি টাকার উপরে রাজস্ব আদায় হয়েছে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বিএসআরএম স্টীল লিমিটেড, কেএসআরএম স্টীল, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি, সেভেন সার্কেল সিমেন্ট, নাভানা লিমিটেড, বসুন্ধরা ইন্ড্রাস্টিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেড, চিফ কন্ট্রোলার অফ স্ট্রোরস, ওয়ালটন মেক্রো-টাচ ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড, রেনকন মটরবাইক লিমিটেড, বাংলাদেশে হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড এবং এম. জে. এল বাংলাদেশে লিমিটেড।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মো. রইচ উদ্দিন খান বলেন, প্রতি অর্থবছরেই দেখা যায় শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠান কাস্টমসকে অর্ধেক রাজস্ব দিয়ে থাকে। গত অর্থবছরে তালিকা ও সমাপ্ত অর্থবছরের তালিকার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। মূলত আর্ন্তজাতিক মূল্য পরিবর্তন এবং দেশীয় বাজারে পণ্যের চাহিদার উপর ভিত্তি করেই এই পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মোবাইল অপারেটরের সব প্রতিষ্ঠান হতেই তুলনামূলক কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস চলতি অর্থবছরে সমাপ্ত অর্থবছর থেকে যাতে আরও বেশি পরিমাণে রাজস্ব আদায় করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্য কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

সূত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ০৯ আগস্ট ২০১৬