আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৪ পালিত হয়েছে ।
বিশ্বের সকল দেশের জন্য ইউনেস্কো নির্ধারিত এবারের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘বহু ভাষায় শিক্ষার প্রসার: পারস্পরিক সমঝোতা ও শান্তির জন্য সাক্ষরতা।’
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং সচিব ফরিদ আহাম্মদ বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো তেজগাঁওয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক  ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এবং ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো সাক্ষরতা অর্জন করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সাক্ষরতার সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো সর্বজনীন একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। তখন শুধু কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো। পরবর্তীতে প্রায় প্রতি দশকেই সাক্ষরতার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে। ১৯৯৩ সালের একটি সংজ্ঞায় ব্যক্তিকে সাক্ষর হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়েছিল। তা হলো-ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে। সাক্ষরতা এবং উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। নিরক্ষরতা উন্নয়নের অন্তরায়। টেকসই সমাজ গঠনের জন্য যে জ্ঞান ও দক্ষতা  প্রয়োজন তা সাক্ষরতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।
সাক্ষরতা হলো জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা বা ইউনেস্কো-ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯৬৬ সালের ২৬ অক্টোবর ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ১৪ তম অধিবেশনে ৮ সেপ্টেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রথমববারের মতো দিবসটি উদযাপিত হয় ১৯৬৭ সালে।  দিবসটির লক্ষ্য ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সমাজের কাছে সাক্ষরতার গুরুত্ব তুলে ধরা। বর্তমানে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র এই দিবসটি উদ্যাপন করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পৃথিবীর প্রায় ৭৭৫ মিলিয়ন অধিবাসীর ন্যূনতম প্রয়োজনীয় অক্ষরজ্ঞানের অভাব রয়েছে। প্রতি পাঁচজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ১ জন এখনও শিক্ষিত নন এবং এই জনগোষ্ঠীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নারী। বিশ্বের প্রায় ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ মিলিয়ন শিশু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আরো অনেকের শিক্ষায় অনিয়মিত বা শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে।
ইউনেস্কোর ‘সকলের জন্য শিক্ষার বৈশ্বিক নিরীক্ষণ রির্পোট (২০০৬)’ অনুসারে অঞ্চলভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাক্ষরতার হার সবচেয়ে কম ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ; এরপরেই রয়েছে সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলের অবস্থান। সেখানে এর হার ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে কম সাক্ষরতার হারের দেশগুলো হলো বুর্কিনা ফাসো। এই দেশটিতে সাক্ষরতার হার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।,নাইজারে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ ও মালি তে ১৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেশগুলোর নিরক্ষতার হারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, চরম দারিদ্র্য এবং নারীদের সামাজিক অবস্থানের সাথে নিরক্ষরতার সুস্পষ্ট সম্পর্ক দেখা যায়।(বাসস)