বেসিস বাংলাদেশের সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এবং খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা সংগঠন। এবছর বাংলাদেশে সোসাইটির জন্য ইম্প্যাক্টফুল যতগুলো কোম্পানির সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট হয়েছে তার মধ্য থেকে এসিআই এগ্রি বিজনেসকে নির্বাচিত করেছে বেসিস। যেখানে এসিআইকে বেস্ট ন্যাশনাল এওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। এটার ফলে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা খুব ভালো একটা কাজ করেছি। আমরা সোসাইটির জন্য একটা ভালো ইম্প্যক্ট আনতে পেরেছি এবং আরো পারবো।
যদিও আমাদের কোন সফটওয়্যার ব্যবসা নেই। আমরা একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আমাদের কোন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান নেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে দ্রুত যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন টুলস সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। ট্রেডিশন্যালি কৃষককে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য টেকনিক্যাল লোক নিয়ে, ভ্যাটেনারি ডক্টর এবং প্রকৌশলী নিয়ে, প্রশিক্ষন দিয়ে অতিরিক্ত কর্মীবাহিনী নিতে হয় কৃষককে মাঠে ময়দানে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। কিন্তু অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি যোগাযোগ করতে হয়, তাহলে বেস্ট অপশন হচ্ছে সফটওয়্যার ব্যবহার করা। আর সে কাজটাই আমরা করছি ভালভাবে।
এর ফলে কৃষকের লাভ হচ্ছে। যখন কোন সমস্যা হয়, ঠিক তখনই দ্রুত সময়ে কৃষক তার সাপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে, সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ফলে কৃষক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবে এবং লাভবান হবে। একই সাথে বেশি লোকবলের কারণে কোম্পানির খরচও বেড়ে যাচ্ছে। সেখানে খরচের উপর একটা নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব হবে। এখানে লাভ হবে, কম খরচে দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষককে সেবা দিতে পারবো।
এই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিন্তু সহজ কোন ব্যাপার ছিলনা! আমাদের মাঠে ময়দানে ফসল হচ্ছে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এটা আমাদের দেখতে হবে ফসলের অবস্থাটা কি। আমরা যেভাবে দেখি, গত ২৬ বছরে ঐ মাঠে কি ফসল ছিল এবং ওই সময়ে ফসলের অবস্থা কি ছিল। যেহেতু আমরা ইতিহাস জানবো, ফলে বর্তমান সময়ের সাথে ওই সময়ের সাথে পার্থক্য নির্নয় করতে পারবো। সেই অনুযায়ী কৃষককে বুঝিয়ে বললে কৃষকও কাজটা করবে। তাতে কৃষকের খরচ কমে যাবে, ক্ষতি কমে যাবে, প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে। প্রোডাক্টিভিটি বাড়ার মানেই কৃষকের আয় বেড়ে যাবে। এসিআই এগ্রি বিজনেসের মিশন কৃষকদের সম্পদশালী করা। আর সেটা মাথায় রেখেই কিন্তু একাজ আমরা করছি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমরা সফটওয়্যারের কথা বলছি কেন? আমরা দেখেছি কৃষির উন্নয়ন করতে হলে, আমাদের যে মিশন সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ, টেকনোলোজি প্রমোট করতে হবে।
টেকনোলোজি দুইভাবে আসে। প্রথমত নিজেরাই আবিস্কার করি, দ্বিতীয়ত বাহির থেকে আমদানি করি। আর এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসিয়ালস বা আমদের ডিলার অথবা আমাদের ফিল্ড ফোর্স এই টেকনোলোজি মাঠে নিয়ে যায়। আমাদের এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসার যারা আছেন সবাই অনেক মেধাবী। সবাই এগ্রিকালচার বিষয়ে পড়াশোনা করা। কেউ এগ্রি ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করা অথবা ডিপ্লোমা করা। সবার হাতে যদি মডার্ন এই টেকনোলোজি তুলে দিতে পারি, তাহলে তারা খুব সহজেই কাজটা করে ফেলতে পারবে। আমাদের দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কৃষক সমস্যার সমাধানের জন্য ডিলারের কাছে আসে। সব ডিলারই কিন্তু কৃষি বিষয়ে পড়াশুনা জানা না। তাহলে সেখানে যদি এরকম একটা টুলস থাকে, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে নিখুতভাবে। ফলে খরচ কমে যাবে, বাড়তি ফলন হবে, আয় বেড়ে যাবে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কৃষক কিভাবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে? সবাই কি ফোন ব্যবহার করবে? যে কৃষকের হাতে স্মার্ট ফোন রয়েছে, তিনি সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান নিতে পারবে। আর যে কৃষকের কাছে স্মার্ট ফোন নেই, তিনি আমাদের ডিলার বা এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসিয়ালের মাধ্যমে পুরো সমস্যা শুনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলেই সাথে সাথে এর সমাধান পাবেন। এক্ষেত্রে ডিলার অথবা এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসিয়ালের অভিজ্ঞতা এবং এসিআই এর নলেজ এক করে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অন টাইমে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এটাই হলো মূল প্রজেক্ট।
এ প্রজেক্টটা এতোটাই ইফিসিন্টলি ডেভেলপমেন্ট করা হয়েছে, যেখানে নেদারল্যান্ড সরকারের স্পেশাল সাপোর্ট রয়েছে। এই প্রজেক্টে নেদারল্যান্ড এর ডাটা ব্যবহার করতে দিচ্ছে আমাদেরকে। নেদারল্যান্ডের যে স্যাটেলাইট আমাদের মাঠের উপর দিয়ে ঘুরছে, সেই ডাটা আমরা পাচ্ছি। একই সাথে নেদারল্যান্ড সরকার আমাদেরকে অর্থ সহয়ায়তাও দিয়েছে এই প্রজেক্টে। যার ফলে আমরা অত্যন্ত ইফিসিয়েন্ট প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট করেছি। ফলে অন টাইম কৃষকের সব সমস্যার সমাধান দিতে পারছি এবং পারবো।
আমাদের মিশন বা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের বর্তমান কৃষিকে এডভান্সড কৃষিতে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশের প্রায় ৭০ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে, যারা কোন না কোনভাবে কৃষির সাথে জড়িত। আবার দেশের প্রায় অর্ধেক জনসাধারণ কিন্তু কৃষি কাজ করে। আমরা যদি কৃষি খুব ভালো জানি, তাহলে কৃষি কাজ করেই কিন্তু আমরা ধনী হতে পারি। আর সেটাকে মাথায় নিয়েই কিন্তু কাজ শুরু করেছি আমরা। আমরা দেখতে পেলাম, বর্তমানে আমদের কৃষক যা করে তাতে কিন্তু কৃষকের খুব বেশি লাভ হয় না। তাহলে এটাকে প্রফিটেবল করতে হলে টেকনোলজি লাগবে। টেকনোলজি এমন একটা জিনিস, যেটা সঠিকভাবে ব্যাবহার করলে লাভবান হবে। আর সঠিকভাবে ব্যাবহার না করলে লাভবান হবে না। আমরা যেহেতু লাভের কথা বলছি, তাহলে এই লাভজনক করতে হলে, তার জন্য টেকনোলোজির সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আর এই যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে তিনটা, এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসিয়ালস, ডিলার, কোম্পানির স্টাফ। সবকিছুতেই কিন্তু সময়ের নির্দিষ্টতা রয়েছে, অন টাইম সার্ভিস দেওয়ার জন্য ফাস্ট রিচ করতে হবে।
অন টাইম সার্ভিসের জন্য বা দ্রুত সেবার জন্য আমাদের যেহেতু অনেক নেটওয়ার্ক রয়েছে, তাই আমরা যেই সফটওয়্যার ডেভেলপড করেছি তার ব্যবহারের ফলে দেশের কৃষক পুরোপুরি লাভবান হবেন। কৃষকের প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে, বাড়তি লাভবান হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি কৃষক সমৃদ্ধ হবে।
ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী, এসিআই এগ্রি বিজনেস