কক্সবাজারে বন্যায় ২০৪০ হেক্টর ফসলি জমি ও ৪১৩ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত

বন্যায় জেলার ২ হাজার ৪০ হেক্টর ফসলি জমি ও ৩৩টি গ্রামীণ সড়কের ৪১৩ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত আগস্ট মাসের বন্যায় জেলার ফসলি জমি ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৪০ হেক্টর। যা টাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯৬ জন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলায়। এই উপজেলাতে ৫১১ হেক্টর জমির ফসলের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পেকুয়াতে ৫৬২ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। চকরিয়া ৪১৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপ-পরিচালক বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, আমন আবাদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার কৃষকের জন্য প্রণোদনা হিসেবে প্রত্যেক কৃষকের হাতে পাঁচ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি সার এবং নগদ ১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ জরিপ করে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ হাজার ৭৯৬ জন কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের প্রাথমিক ক্ষতি নির্ধারণ করা হয় ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, গত আগস্ট মাসে কয়েক দফার বন্যায় কক্সবাজার জেলায় ৩৩টি সড়কের ৪১৩ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য এলজিইডির কক্সবাজার জেলা কার্যালয় থেকে জরুরি বরাদ্দ চেয়ে প্রতিবেদন সহকারে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিন রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গর্জনিয়া-বাইশারী সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত-শত মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু গত ১৬ আগস্টের পরের কয়েক দিনের ভারীবর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে এ সড়কটির প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশই ভেঙে নদীতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যা এখনো চালু হয়নি। শুধু জুমছড়ি সড়কই নয়, বন্যায় এভাবে কক্সবাজার জেলায় ৩৩টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, গত আগস্ট মাসের বন্যায় কক্সবাজারের বেশকিছু গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পত্র পাঠিয়েছি কিন্তু এখনো কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তারপরও মৌখিক সম্মতিতে জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ শুরু করে দিয়েছি।
রামু উপজেলার চকমারকুল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ আহমদের পাড়ায় ৩০০ পরিবারের ৭৫ শতাংশই কৃষক। এ গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বর্গা নিয়ে এবার ১ একর জমিতে আউশের আবাদ করেন। কিছু পাকা ধান কেটে ঘরে তোলেন। অবশিষ্ট ধান সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কয়েক দিনের ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। কথা হয় মকবুল হোসেনের সঙ্গে। পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি দিশেহারা।
মকবুল (৫৫) বলেন, গত ১৬ আগস্টের পরের কয়েক দিনের ভারীবর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে রামুর নয়টি ইউনিয়নের অন্তত ১৫ হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে ডুবে যায় ৫ হাজার একরের বেশি ধান ও ফসলের জমি।
একই অবস্থা পাশের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক ছাবের আহমদের। ঋণের টাকায় তিনিও এবার ১ একর জমিতে আউশের চাষ করেন। ছাবের আহমদ(৪৬) বলেন, ধান ঘরে তোলার আগমুহূর্তে বন্যার পানি সব শেষ করে দিল। ফসল ঘরে তুলতে পারেননি তিনি।(বাসস)