বিশ্বজুড়ে আলোচিত পর্যটন ও হোটেল ব্যবসা। বাংলাদেশেও ব্যাপক সম্ভবানাময় এ সেক্টর। এই ব্যবসার মাধ্যমে দেশকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তোলাও সম্ভব। এ সেক্টরের অভিজ্ঞ ব্যাক্তি এম. সাঈদ চৌধুরী। রয়েছেন টি ট্রি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে। তিনি পর্যটন ও হোটেল ব্যবসার নানা দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন আজকের বাজার ও এবিটিভির সঙ্গে। আলোচনার মূল অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।
পর্যটন ও হোটেল ব্যবসার সার্বিক পরিস্থিতি
পর্যটন ও হোটেল সংশ্লিষ্ট ব্যবসা সারা পৃথিবীতেই আলোচিত। আর এটি খুবই সম্মানজনক ব্যবসা। ব্যবসাটা কালারফুল ব্যবসা। মানুষ শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য এ ব্যবসা করে না; এটি একইসঙ্গে সেবা ও ব্যবসা। এই ব্যবসার মাধ্যমে আমরা দেশকে বহির্বিশ্বে ঠিকঠাকভাবে ফোকাস করতে পারি। আমাদের দেশ এই মুহূর্তে কোথায় আছে, আমরা কোথায় আছি, এসব বিষযে বিশ্বকে জানানোর জন্য এটি চমৎকার একটা মাধ্যম। এই মাধ্যমকে আমরা যেভাবে পরিচালনা করি,সরকার আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করেন, সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সুন্দর একটা নীতিমালার বন্ধন, সুন্দর একটা সমন্বয় সবসময় আমরা উপলব্ধি করি। সার্বিক পরিপ্রেেিত এর প্রতিফলন পুরো ইন্ড্রাস্ট্রির ওপর পড়ে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে গতবছর একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, হলি আর্টিজানের যে দুর্ঘটনাটা। আমাদের হোটেল ও পর্যটন শিল্পটাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে এই একটি দুর্ঘটনা। এর প্রভাব এখনো বহন করতে হচেছ আমাদের।
হলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদেরকে এমন আঘাত দিয়েছে যে, ওই সময় আমিসহ আমাদের অনেক হোটেল ব্যবসায়ীদের লম্বা বুকিংগুলো বাতিল হয়েছে, বিদেশিরা নিরাপত্তার অভাবে এদেশে আসতে চায়নি। তারা বলেছে যে ‘নো,উই আর নট সেইফ’। বিদেশিরা এ দেশে আসে হয় কাজে, কেউ আসে দেখতে, কেউ আসে বেড়াতে, কেউবা আসে আনন্দ উপভোগ করতে। সেই কাজটায় যদি নিজের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়, সেখানে তো তারা আসবে না। তাই তাদের সমস্ত বুকিং আমাদের বাতিল করে দিতে হয়েছে। আর বুকিং বাতিল করার প্রভাব আজকের দিন পর্যন্ত আমরা বহন করছি। যেমন বলি, আমাদের ইন্টারন্যাশনাল বুকিং হয় সাধারণত বুকিং ডট কম, এক্সপেডিয়া, অ্যাগোডা এধরনের কিছু ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মাধ্যমে। এখন ওরা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাইলেও তা করতে পারছে না, বুঝতে পারছে না ঠিক কিভাবে এই ব্যবসাটাকে এগিয়ে নেওয়া যায়। কারণ বিদেশি যারা দেশে এসে থাকবে, তারা তো নিরাপত্তা বোধ করছে না। গভর্নমেন্ট শত চেষ্টা করেও বিদেশিদের আস্থার জায়গাটা দিতে সেভাবে পারেনি।
তবে আমরা এখন যে পর্যায়ে অবস্থান করছি, তাতে করে এখন কিছুটা আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। এই আস্থার কারণে আমাদের বুকিং কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসা নিয়ে আবার এগোবার একটা সুযোগ আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সী বিচ আমাদের গর্বের কক্সবাজার। কক্সবাজারে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একটি যুগান্তকারী পদপে নিয়েছেন। মেরিন ড্রাইভ রোড আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। এতে করে দেশের বাইরের ফোকাসটা পাওয়া গেছে, পর্যটন সংশ্লিষ্ট যারা ঘুরে বেড়ায় এবং যারা পর্যটকদের এই ইউনিটটা ঘুরিয়ে দেখার আয়োজন করে দেয় ,সবাই হ্যাপি। তাই বলা যায়, স্বাভাবিক অবস্থা হয়তো ফিরে আসছে।
পর্যটনে মেরিন ড্রাইভ রোডের ভূমিকা
আসলে মেরিন ড্রাইভ রোড বাংলাদেশ ও কক্সবাজারের জন্য একটা যুগান্তকারী পদপে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। কারণ এই মেরিন ড্রাইভ সমুদ্রঘেঁষা একটা পথ, এই পথ দিয়ে পর্যটকরা গাড়িতে করে সহজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে। নানারকমের সুযোগ-সুবিধা পাবে,নিজের চোখে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখবে, উপলব্ধি করবে। মেরিন ড্রাইভ নিয়ে মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে একে কেন্দ্র করে আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি মনে করি, এই মেরিন ড্রাইভ আমাদের সাহসী করেছে। তবে কিছু ছোটোখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতির সমাধান, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা যদি সরকার দেয়, আমার বিশ্বাস, আমরা পর্যটন থেকে একসময় আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবো। যেমন আমাদের এই মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রা, আমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা, অর্থনীতির চাকায় বড় একটি ভূমিকা রাখবে এই পর্যটন শিল্প। কারণ আমাদের পর্যটন শিল্প অনেক সুন্দর এবং সম্ভাবনাময়। এটাকে শুধু দরকার রাইটলি নার্সিং করা। যে নার্সিংটা আমাদের অনেক সময় হয়ে ওঠে না, অনেক সময় সঠিক জায়গায় সঠিক লোকটা থাকে না।
সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু জায়গাতে অযোগ্য লোকের কারনেও ভুল হতে পারে। এখন যেমন চলছে, আমাদের আপৎকালীন অবস্থা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক একটা পর্যায়ে চলছি, এটাকে যদি রাইটলি নার্সিং করা হয় এবং সরকারের সঠিক হস্তপে থাকে, আমার বিশ্বাস সেদিন অনেক দূরে নয় এই খাত থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ সরবরাহ হবে এটা আমরা শতভাগ নিশ্চিত।
পর্যটন খাতের সম্প্রসারণে সরকারের করণীয়
সরকার যে আমাদের সহযোগিতা করছেন না, তা কিন্তু নয়। সরকার অবশ্যই সহযোগিতা করছেন। কিন্তু মাঝে মাঝে সমন্বয়ের অভাবে হয় আমাদের ইনটেনশনটা তারা বোঝেন না অথবা বুঝলেও এটাকে গুরুত্ব দেন না। কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নীতিমালার অপর্যাপ্ততার কারণে এই ভুল বোঝাবুঝিতে আমরা পিছিয়ে যাই। এসব কারণে পুরো শিল্পের ওপর একটা প্রতিক্রিয়া আসে। এতে আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রিটা সামনে এগোয় না। গভর্নমেন্ট যদি আমাদের সদিচ্ছা বিবেচনা করেন, আমাদের প্রতিনিধিত্বকে প্রাধান্য দেন, আমাদের পরামর্শকে সঠিক বিবেচনা করেন, তাহলে এই বাজার আরো প্রসার হবে। বাংলাদেশ পর্যটন সমৃদ্ধ একটি দেশ কিন্তু এখানে যে পরিমাণ পর্যটক আসার কথা, তত পর্যটক আসে না। আর যারা আসে, কিছু কিছু পর্যটক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যান। আমাদের পর্যটনের প্রথম শর্ত হলো, কোনো মেহমান যদি তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যায়, তাহলে সে পরে নিরুৎসাহিত হবে।
আর যদি একজন গেস্ট আমাদের এখান থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা নিয়ে নিজের দেশে ফিরে, আনন্দ নিয়ে ফিরে, তখন মানসিকভাবে প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বলবে, বাংলাদেশের অমুক জায়গায় এই এই সুবিধা আছে। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন আমাদের সুন্দরবন হলো একটি দেখার মতো জায়গা, সেই সুন্দরবনটাকে আমরা আজও রাইটলি এক্সপোজ করতে পারিনি । সারা পৃথিবীর লংগেস্ট সী বিচ কক্সবাজারকে আমরা রাইটলি ফোকাস করতে পরিনি। এটা তো আসলে শুধু গভর্নর্মেন্টের একার কাজ না, এটা আমাদেরও কাজ। এটা সমন্বিত কাজ। এই সমন্বিত কাজটা আজও কেন যেন আমাদের করা হলোনা। আমরা যারা এই শিল্পের সাথে ওত প্রোতভাবে জড়িত, আমরা মনে করছি না যে, ঠিক ঠাকভাবে হচ্ছে।
আমি আশা করবো, সরকার সিদ্ধান্ত নেবেন কীভাবে আমরা সঠিকভাবে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পারি, এবং সেই কার্যক্রমের েেত্র আমাদের কিছু পরামর্শ তাঁরা গ্রহণ করবেন। এবং পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন হলে, ‘আই হোপ ইট উইল বি এ বোমিং বিজনেস’।ইনশাআল্লাহ, এই বাজারের ব্যপ্তি বাড়বে।
অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের ভূমিকা
বাংলাদেশের জিডিপিতে আমাদের পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ ভূমিকা এখনই রাখে। কিন্তু আমার ধারণা এই অবদান প্রত্যাশার তুলনায় মাত্র ২৫ ভাগ। ২৫ শতাংশের বেশি দিতে পারছি না আমরা অর্থনীতিতে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে পারি, সরকারের সহযোগিতা, কো-অপারেশনটা পেতে থাকি, আমার বিশ্বাস এই শিল্প থেকে আমরা ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ জিডিপিতে দিতে পারি। তাহলে এটা হবে বাংলাদেশের সব থেকে সম্ভাবনাময় একটি খাত। যে খাতটা আমাদের নিজস্ব রিসোর্স, ভাড়া করা লাগবে না, কাউকে ডেকে আনা লাগবে না, কোথাও থেকে কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে হবে না, বিশাল কোনো বিনিয়োগ লাগবে না। প্রাকৃতিকভাবে আমাদের যা আছে তা যদি আমরা ঠিকঠাকভাবে তুলে ধরতে পারি তাহলে আর কিছু লাগে না।
পর্যটনকে ঠিকভাবে তুলে ধরে হচ্ছে না
পর্যটন রিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের সঠিকভাবে সমন্বয় হচ্ছে না। কিছু অভিজ্ঞতাহীন কর্মকর্তাকে দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব দেওয়ার কারণে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না । সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। যেমন, এখন আমাদের পর্যটন মৌসুম চলছে। এখন পর্যটন মৌসুমে যে সিদ্ধান্তগুলো সরকারের প থেকে নেয়া উচিত, সেই সিদ্ধান্তগুলো তারা নিলেন না, দুই মাস পরে নিলেন। আর তখন আমাদের পর্যটন মৌসুম শেষের পথে। তো ওই সময় এসব সিদ্ধান্তের কোনও মূল্য আর থাকলো না। বরং তা আমার ব্যবসাকে আরো পিছিয়ে দেয়।
আমার প্রশ্ন হলো, পর্যটন মৌসুম,পর্যটনের একটা মেলা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ার দুই মাস আগে কেন আমরা অফিস ওয়ার্ক করি না কেন? আমরা নিজেদের ভিতরে হোমওয়ার্ক কেন করি না, কেন আমরা প্রস্তুতি নিই না, সরকারের সাথে কেন আমরা বসি না? সমন্বিতভাবে কাজ করবার জন্য আমাদের ভেতর কেন আরও পরিচ্ছন্ন আলোচনা হয় না? সরকার চায় না, কথাটা আমরা বলি না, বলার চিন্তাও করি না। কারণ সরকার চায় বলেই তো আজকে আমাদের দেশে এই শিল্পের এত প্রসার। মেরিন ড্রাইভের মতো ব্যয়বহুল একটা ড্রাইভওয়ে হতো না যদি সরকারের সদিচ্ছা না থাকতো। কক্সবাজারের মতো জায়গায় এখন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। সারা বিশ্ব থেকে অতিথি এখন সরাসরি এখানে আসতে পারছে। এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটা স্টেডিয়াম আছে, যে স্টেডিয়ামের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলা হয় এখানে। এগুলো সরকারের সদিচ্ছারই প্রতিফলন। কিন্তু আরও ভালো সমন্বয় থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের সময় লাগবে না।
সরকারের কাছে চাওয়া
আমাদের নিজেদের বুঝতে হবে পাশাপাশি সরকারকেও বুঝতে হবে। আমাদের উচিত, সম্ভাবনাময় ত্রেগুলো নির্ধারণ করা। দেশের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা, পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কেননা পর্যটনের পূর্ব শর্তই হলো নিরাপত্তা, এখন নিরাপত্তা না থাকলে পর্যটন শিল্পে ধস নেমে আসবে। কারণ একজন বিদেশি যখন আসেন অনেক পয়সা খরচ করে আসেন। এন্ড অব দ্যা ইয়ার বা বছর শেষে তাঁরা ঘুরতে আসেন। এসে যখন দেখবেন এখানে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। তখন তিনি তিক্ত একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন। তারা এই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে যাতে না ফিরে যান, সে জন্য কাজ করতে হবে।
আমরা প্রত্যেকজন আলাদা আলাদা অতিথিকে নোটিশ করতে চাই যে, আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং আনন্দের ব্যবস্থা এখানে রেখেছি। আপনারা আসবেন এবং আপনাদের মূল্যবান সময়টাকে সঠিকভাবে আমাদের এখানে উপভোগ করবেন। আপনারা নির্বিঘেœ দেশে ফিরবেন। এই পুরো প্যাকেজ নিরাপত্তার জন্য সরকারের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সমন্বয়ের বিকল্প নেই। এ ধরনের সমন্বয়টা যখনই হবে, আমাদের অসম্ভব সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প আমাদের জিডিপিতে বড় একটি ভূমিকা রাখবে। এই বিশ্বাস আমার আছে।
বাজেটে পর্যটন খাতের প্রত্যাশা
আসলে পর্যটন খাতের কিছু প্রস্তাবনা অলরেডি আমরা রেখেছি। যেটা কম উপলব্ধি করছি সেটাও আমরা সুপারিশ করেছি, সেটা হলো – এখানে কিছু ইনসেন্টিভের একটা ব্যাপার থাকে, যেটা অন্যান্য েেত্র সরকার করেন, এেেত্রও সরকার করেন। কিন্তু সেটাকে বৃদ্ধি এবং সঠিক ব্যবহারের যে সমন্বয়টা, এই সমন্বয়টা আমরা সরকার থেকে আশা করি। এই বাজেটে আশা করবো যে আামাদের
পর্যটন শিল্পের উপরে একটি বিশেষ রিফেকশন থাকবে। যেমন, আমরা অররেডি প্রস্তাব করেছি যে, কিছু কিছু জায়গায় নিরাপত্তার সমস্যা, নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় অপর্যাপ্ত পরিবেশ, সেখানে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই শিল্পকে প্রসারিত করার জন্য আমাদের জন্য বাজেটে কিছু প্রনোদনা রাখবেন গভর্মেন্ট –এটা আমাদের প্রত্যাশা এবং আমরা প্রস্তাবও রেখেছি অলরেডি।
বিদেশিরা কম আসেন কেন
বিদেশিরা আমাদের দেশে আসেন তবে পরিমাণটা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত না। মালদ্বীপের মতো ছোট্ট একটা দ্বীপ রাষ্ট্রের জিডিপির বড় একটি অংশ পর্যটন খাত থেকে। আমরা তাদের থেকে কোন অংশে কম আছি? কক্সবাজারের মতো লংগেস্ট সী বিচ আমরা ধারণ করি। সুন্দরবনের মতো নয়নাভিরাম একটা বন, সারা বিশ্বে আলোচিত; এটাও আমরা ধারণ করি। আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। পাহাড়-পর্বতে সমৃদ্ধ একটি দেশ, সবুজে-শ্যামলে ঘেরা একটি দেশ, নদীমাতৃক একটা দেশ। কেন বিদেশিরা ছুটি কাটাতে আমাদের দেশটাকে পছন্দ করেন না? এর বড় কারণ হলো, ওদের কিছু ব্যাসিক নিডস্ থাকে, সেগুলো আমরা পূরণ করতে পারি না। দেখেন থাইল্যান্ড,পর্যটনের ওপর ভিত্তি করে আজকের থাইল্যান্ড। এখান থেকে আমরা শিা নিতে পারি।
একজন বিদেশী এসে কী কী সুবিধা আশা করে, সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো আমরা দিতে পারছি না। এইসব ছোটোখাটো সমস্যা এবং পর্যটকদের নিরাপত্তার আমাদের পিছিয়ে রাখছে। ওরা যখন দেখে এখানে নিরাপত্তা নেই, একজন বিদেশির সমস্যা হচ্ছে। এসব দেখে তাদের ভেতর একটা ভয় কাজ করে। ফ্যাসিলিটি এবং সিকিউরিটি এই দুইটা সমন্বয় করে আমরা ওদের আকর্ষণ করতে পারি।
হোটেলের আন্তর্জাতিক মান জরুরি
চেইন হোটেলগুলো যেমন লা মেরিডিয়ান, ওয়েস্টিন, র্যাডিসন, শেরাটন, র্যাডিসন ব্লু –এসব হোটেল আন্তর্জাতিক মানের, কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু দেশের এনভায়রনমেন্টাল সাপোর্ট দরকার। যেমন, ফার্স্ট কাস সিকিউরিটি, ফার্স্ট কাস অ্যামিউজমেন্ট প্রয়োজন। থাইল্যান্ডে যদি আপনি বাইরে বের হন, হোটেলে যে রকম ফ্রিডম অনুভব করেন পুরো ব্যাংকক শহরে আপনি সেই একই স্বাধীনতা অনুভব করতে পারবেন। এই সুবিধাটা আমাদের দেশে অসম্ভব রকমের অপর্যাপ্ত, যেটা খুবই ভীতিকর। আমার হোটেল পরিচালনার বাস্তবতা থেকে দেখছি যে, একটা হোটেল মালিককে কত কিছুই না সামলাতে হয়। হোটেল যদি ঠিকভাবে না চলে, তাহলে সেই হোটেলের মালিককে ‘ইচ অ্যান্ড এভরি মান্থ’ পরিস্থিতি অনুযায়ী কী পরিমাণ পে করতে হয়, তা শুধু হোটেল কর্তৃপই জানেন। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সাবসিডি আমাদের জন্য থাকা উচিত কিছু প্যাকেজ প্রণোদনা থাকা উচিত, সরকারের কিছু পরামর্শ থাকা উচিত, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি পর্যবেক্ষণ থাকা দরকার। অভিযোগ বা পরামর্শ দিলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দেখা যায় পরে আর কাজ হয় না। কাজটা যদি এক সপ্তাহের মধ্যে হয়, তা হলে আমরা দুই সপ্তাহের ভেতর অর্থনীতিতে এর রিফেকশন পাবো ইনশাআল্লাহ।
টি ট্রি হোটেল নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো টি গার্ডেন হলো আমাদের ‘সুরমা টি স্টেট’। মূলত এখান থেকে টি রিসোর্ট, টি রিসোর্ট থেকে টি ট্রি- এই থিমটাকে মূলত আমরা কাজে লাগিয়েছি। এই নামে দেশের অন্যান্য জায়গাতে আমরা চেইন হোটেল করার পরিকল্পনা করছি। চট্টগ্রাম,সিলেট, খুলনাসহ ভালো পর্যটন নগরীতে আমরা আমাদের হোটেল করবো। এটা আমাদের স্বপ্ন।
এম সাঈদ চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
টি ট্রি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস
আজকের বাজার: জেডএইচ/ডিএইচ/আরআর/ ০১ জুন ২০১৭