‘আমাদের মিশন কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধি করা। কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে সামগ্রিক উন্নতি হবে। তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হবে। বাড়িঘর করবে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা করাবে। দেশ বিদেশে ঘুরবে। এতে তো গতি বাড়াতে হবে। আগে গরুগাড়িতে চড়াতাম। তারপর পাওয়ার টিলারে চড়ালাম। এরপর ট্রাক্টর। ট্রাক্টরের গতি পাওয়ার টিলরের চেয়ে বেশি। এভাবে গতি বাড়ছে। এখন আমরা কৃষককে মোটরসাইকেলে চড়াতে চাই। মানুষের গন্তব্য এখন অনেক উঁচুতে। জাপান যেভাবে এগিয়েছে; চায়না এগিয়েছে। আমার দেশের কৃষকও সেভাবে এগোবে’।– এসিআই এগ্রি বিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড.এফ.এইচ আনসারি বাংলাদেশের কৃষকদের এভাবেই দেখতে চাইছেন। এটি আসলে কিভাবে সম্ভব সে বিষয়ে ও কৃষির আরও অনেক বিষয় নিয়ে তার ভাবনা শেয়ার করেছেন আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন এবি টেলিভিশনের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথপোকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।
কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারে সরকারকে স্বাগত জানাই। অন্য সব ক্ষেত্রের সঙ্গে করলেও বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কার্যকর করায় আমরা খুশি। কৃষকের ইনকাম বাড়াতে হলে কম খরচে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা করতে হবে। আর কম খরচে উৎপাদনের জন্য স্বল্প খরচে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার জরুরি। কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নেওয়ায় কৃষিতে যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়বে। ফলে উৎপাদনশীলতাও বাড়বে। এতে সরকারের যে ভিশন রয়েছে তাও পূরণ হবে।
এগ্রি বিজনেসের মানুষ হয়ে মোটর ব্যবসা সামলাবেন কীভাবে
এসিআই মেশিনারিজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আমরা মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত যুক্তিযুক্তভাবে টেকনোলোজি ব্যবহার করছি। এটা দিয়েই জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি। আর এগ্রি বিজনেসও এসিআই গ্রুপের একটি অংশ। সেখানেও কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধিতে কাজ করা হয়। আর কৃষকের সম্পদ বাড়ানোর জন্য তো টেকনোলজির ব্যবহার লাগবে। এসিআই মোটর লিমিটেড এই আয়োজনেরই একটি অংশ । এখন মোটরসাইকেলটাও সঙ্গে যুক্ত হলো।
আমাদের মিশন কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধি করা। কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে সামগ্রিক উন্নতি হবে। তার স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হবে। বাড়িঘর করবে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা করাবে। দেশ বিদেশে ঘুরবে। এতে তো গতি বাড়াতে হবে। আগে গরুগাড়িতে চড়াতাম। তারপর পাওয়ার টিলার চড়ালাম। এরপর ট্রাক্টর। ট্রাক্টরের গতি পাওয়ার টিলরের চেয়ে বেশি। এভাবে গতি বাড়ছে। এখন আমরা মোটরসাইকেলে চড়াতে চাই। মানুষের গন্তব্য এখন অনেক উঁচুতে। জাপান যেভাবে এগিয়েছে; চায়না এগিয়েছে। আমার দেশের কৃষকও সেভাবে এগোবে। এতে সুবিধা হবে এই যে দেশের অর্ধেক মানুষ যদি এভাবে গতি পায়। তখন এদেশ কিন্তু সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধিশালী দেশ হয়ে যাবে। এই গতি আনতেই আমরা আমাদের পণ্যতালিকায় মোটরসাইকেল যুক্ত করেছি। এখন প্রশ্ন হতে পারে এগ্রিবিজনেসে মোটর কেন? এক্ষেত্রে বলব- আমরা যে মোটরের ব্যবসা করি সেই ব্যবসায় সাকসেস স্টোরি আছে। আমরা কৃষককে যখন একটা যন্ত্র দিই তখন পর্যাপ্ত শিক্ষাটাও দিয়ে দিই। বুঝিয়ে দিই কীভাবে ব্যবহার করতে হবে। যখন সার্ভিস সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন তাদের মধ্যে আগ্রহ জন্মে। ব্যবহার করতে শুরু করে। এভাবে তারা লাভবান হয়। এখন যদি যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে তাহলে তো লস। কৃষি যন্ত্রের ক্ষেত্রে বছরে ২ থেকে আড়াই মাসের বেশি চাষবাস করার যন্ত্র ব্যবহার করা যায় না। বাকী সময় হয় পড়ে থাকে না হয় অন্য কাজে ব্যবহার করতে হয়। আর এখানে যদি একদিন বা দুই দিন যন্ত্রটা পড়ে থাকে তাহলে কৃষকের কী পরিমাণ ক্ষতি হবে? এজন্য আমরা বলি আমাদের যন্ত্র কিনলে যে কোনো সমস্যা হওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে তা ঠিক করে দেব। তহালে যন্ত্রটি একদিনও পড়ে থাকলো না। ওইদিনই সে কাজে যেতে পারলো।
আমাদের দেশে জাপানি ইয়ামাহা অন্য একটি কোম্পানির সঙ্গে ৪০ বছর ধরে মোটরসাইকেল বিজনেস করছে। মটরসাইকেলের মার্কেট সেল ২% বা ৩% এর বেশি হয় না। অর্থাৎ জনগণ প্রপার সার্ভিস পাচ্ছে না। অথচ এই সার্ভিসের দরকার আছে। কাস্টমার দেখে, কারা এই সার্ভিস ভালো দেয়, কমিটমেন্ট রক্ষা করে। অনেক অখ্যাত কোম্পানি বাজারে আছে। মানুষ তাতে আস্থা পায় না। আর এসিআইয়ের একটা সুনাম আগে থেকেই রয়েছে। আমাদের পাওয়ারটিলার ভালো সার্ভিস দিচ্ছে। তাই ইয়ামাহা বুঝে নিয়েছে এদের দিলে এরা মোটরসাইকেল সার্ভিসটাও ভালো দিতে পারবে। মোটরসাইকেলের ব্যবসা তো মূলত গ্রামে। গ্রামের রাস্তা খারাপ। শহরে আসতে হলে মোটরসাইকেলই ভালো মাধ্যম। এখন তারা বেশি বেশি ব্যবসা পাচ্ছে। আগে যেখানে ২% বা ৩% ব্যবসা পেত এখন প্রায় ৬% ব্যবসা পাচ্ছে। গতমাসে আমরা ৯% ব্যবসা দিয়েছি। এর কারণ হলো সব শ্রেণির মানুষ ইয়ামাহা পছন্দ করেছে। ডিজাইন সার্ভিস থেকে শুরু করে মাইলেজ সব কিছুতেই ইয়ামাহা মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন আমরা যে এগ্রিবিজনেসে মটর সাইকেলটি দিয়েছি। এটা পার্ট অব কমিটমেন্ট। আমরা যে কৃষকের জীবনে গতি আনতে চাই তারই অংশ হিসেবে মোটরসাইকেল যুক্ত করেছি। এরপর গাড়িতে ওঠাব। ক্রমে এক সময় প্লেনে ওঠাব।
মোটরসাইকেল বাজারের পরিস্থিতি
সব ব্র্যান্ড মিলে আমাদের দেশে গত বছর ২ লাখ ৭০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। বিক্রির গ্রোথ ছিল ৪৮%। এর কারণ বলবো, মানুষ সমৃদ্ধ হচ্ছে। সমৃদ্ধি আসলেই মানুষ গতি চায়। ৪৮% গ্রোথ কিন্তু ভালো পর্যায়ের গ্রোথ।
দামের তারতম্য হয় কেন
ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের কথাই যদি বলা হয়; পুরো মোটরসাইেেকল ম্যানুফ্যাকচার করে দেশে আনা হয়। পুরো ডিজাইন বা অধিকাংশ যন্ত্রপাতি জাপানে তৈরি। সেগুলো ইন্ডিয়াতে এসে অ্যাসেম্বল হয়েছে। এটা জাপানি ইয়ামাহার ক্ষেত্রে। আর আমাদের দেশে যখন মোটরসাইকেল আমদানি করি তখন; যে মোটরসাইকেলটা সিভিও কন্ডিশনে আনি তার ডিউটি থাকে ১৫২%। অর্থাৎ ১০০টাকা মূল্যের মোটরসাইকেলটির সঙ্গে আরও ১৫২ টাকা যোগ করে ২৫২টা বিক্রি করতে হয়। ১ লক্ষ টাকায় যেটি আমদানি করতে হয় ডিউটিসহ সেটির ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২লক্ষ ৫২ হাজার টাকা। আবার যেগুলো সিকেডি করা হয় সেগুলোর জন্য ১২৮% ডিউটি দিতে হয়। যদিও ১৫২ ও ১২৮ এর মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আর লোকাল যারা উৎপাদন করে তাদের জন্য ৯০%। এখন হিসাব হচ্ছে মানুষ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে না কেন?
মোটরসাইকেল এমন একটি জিনিস; এত হাই একটা ইড্রাস্ট্রি। এগুলো উৎপাদনের জন্য আমাদের দেশে তেমন প্রস্তুতি নেই। যারা লোকালি ম্যানুফ্যাকচার করছে সেগুলো মোস্ট অব ৯০ বা ১০০ সিসির মধ্যে। আর ইয়ামাহা মোটরসাইকেল যেগুলো আমদানি করা হচ্ছে সেগুলো ১১০ থেকে ১৫০ সিসির মধ্যে। যারা অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখে। অনেক দূরে যেতে চায়। একটু রিল্যাক্স চায় তারা কিন্তু এধরনের মোটরসাইকেলই কিনবে। বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশন এগুলোই খুঁজে।
আমি মনে করি যেহেতু আমাদের দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে; ধীরে ধীরে আমরা এটি পুরোপুরি শিখে নিব। এরপর ১১০ বা ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদন করা সহজ হবে। আমি আশা করছি আগামি ৩ বছরের মধ্যে আমরাও উৎপাদন শুরু করবো।
আমরা নেওয়ার পর ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের বিক্রি বেড়েছে। গত মাসেও ২০০০ পিস মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। যা আমাদের কাছে আসার আগে কোনোদিনও সম্ভব হয়নি। আগে সর্বোচ্চ ৮০০/৯০০ পিস বিক্রি হতো । মানুষ মডেল, প্রাই, এরপর সেফটি সব দিক বিবেচনা করেই ইয়ামাহা মোটরসাইকেল কিনতে চায়।
আগের ইয়ামাহা ও বর্তমানের ইয়ামাহার মধ্যে পার্থক্য
একটা ঘটনা বলা যাক। গতকাল আমি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম। কারওয়ানবাজার গিয়ে দেখলাম একটা ইয়ামাহা দাঁড়ানো। ওগুলো ১০০সিসি। প্রথম দেখে আমি চিনতে পারলাম না। মনে হলো অন্য কোনো কোম্পানির হবে হয়ত। এরপর ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম ওগুলো ইয়ামাহা কোম্পানিরই। তাদের কাছে এর বয়স জিজ্ঞাসা করতে একজন বললেন ২৮বছর আরেকজন বললেন ৩০ বছর। আর এখন যে ইয়ামাহা বাজারে আছে এটি রকেট সাইজের কাছাকাছি। যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং সাজানো হয়েছে পুরোটাই ডিফরেন্ট। আগেরগুলো ছিল ইফেক্টিভ, ওয়ার্কেবল এবং ব্যবহার উপযোগী। আর এখনকারগুলো অনেক ফেন্সি লুক, অনেক স্পিডি লুক, অনেক সুন্দর করে করা। বর্তমানে বাংলাদেশে যতগুলো কোম্পানির মোটরসাইকেল আছে তারমধ্যে সবচেয়ে কম ফুয়েল খরচে বেশি মাইলেজ হচ্ছে ইয়ামাহা।
একটি দেশকে এগোতে হলে আগে ওই দেশের মানুষকে এগোতে হবে। মানুষের জন্যই তো দেশ। প্রতিটি মানুষেরই দেশের কাছে বিশেষ প্রত্যাশা থাকে। একটি সুন্দর হাসপাতাল হোক, সুন্দর রাস্তা হোক, এমনটি যেমন আমরা চাই তেমনি একজন নাগরিক হিসেবে আমার সুন্দর একটি গাড়ি হোক সুন্দর একটি মোটরসাইকেল হোক এটিও আমাদের চাওয়া। মোটরসাইকেলটিকে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে দেখা হতো এবং ভ্যাট কমানো হতো তাহলে মানুষ অনেক কম মূল্যে মোটরসাইকেল পেত। অনেক কম দামে কিনতে পারলে অনেক বেশি মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহার করতো। এতে দেশের মানুষের গতি বাড়তো। ফলে মানুষ দেশের ইকোনোমিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারতো। সেটা ডিরেক্টই হোক আর ইনডিরেক্টই হোক। যেমন মোবাইল ফোন হওয়ার কারণে কমিউনিকেশন বেড়েছে। কমিউনিকেশন বাড়ার ফলে ব্যবসায় গতি এসেছে। একইভাবে মোটরসাইকেলের কারণেও গতি আসতে পারে। ডিউটি ধরে সরকার যে টাকা পায় তারচেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে যদি ডিউটি কমিয়ে দিয়ে জনগণের ব্যবহার বাড়ানো যায়। গরুর গাড়ির চাকা বিক্রি হলে যেমন ডিউটি লাগে না তেমনি মোটরসাইকেল বিক্রিতেও ডিউটি কমিয়ে আনা উচিত। মোটরসাইকেল মোটেও লাক্সারিয়াস আইটেম না যে এটায় এত বেশি ডিউটি ধরতে হবে। এদেশের অধিকাংশ নিম্নবিত্তের মানুষ মোটরসাইকেল চালায়। প্রয়োজনেই চালায়। সো এটি একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় আইটেম। তাই এর ডিউটি কমাতে হবে। আশা করি সরকার বিষয়টি সদয়ভাবে বিবেচনা করবেন।
ড. এফ এইচ আনসারী
নির্বাহী পরিচালক, এসিআই লিমিটেড