বাজেট: আমাদের দেশে কৃষিতে অনেক বড় কর্মসংস্থান আছে। বিগত দিনে ক্ষেতমজুরে কাজ করাটা কর্মসংস্থান ছিল। এখন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোক্তারা এখন শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। নতুন করে তারা কাজ শুরু করেছে। উদ্যোক্তারা মুরগি, মাছ, গরুর খামার করছে। গরুর খামার থেকে মাংস বিক্রি করছে। ফল, সবজি, মাঠ ফসল করছে। সর্বক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব শুরু হয়েছে। এই কৃষি বিপ্লবের জন্য সরকারের অনেক বিনিয়োগ করতে হবে। আমি মনে করি, কমপ্লিট এগ্রিকালচার ভ্যালু চেইনে, ইনোভেশনে বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে প্রাইভেট সেক্টরেকে আনতে হবে। সেখানে সরকারের বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। যাতে প্রাইভেট সেক্টরকে সাপোর্ট দিয়ে ক্যাপাসিটি বিল্ড করে কৃষিতে ইনোভেশন লোকালী ডেভেলপড করতে পারে।
এখাতে অনেক কিছু করার আছে। যেমন সারে ভর্তুকি কন্টিনিউ করতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি আরও বাড়াতে হবে। এর ফলে প্রোডাকশন কষ্ট কমে যাবে। খামারিরা কৃষিতে আগ্রহী হবে। যান্ত্রিক রোডের আরও পরিধি বাড়াতে হবে। এতদিন ধান, গম, ভুট্টা নিয়ে যান্ত্রিক রোডে সীমাবদ্ধ ছিল। এটাকে অন্যান্য ফসলেও নিয়ে যেতে হবে।
সরকার কৃষি যান্ত্রিকরণের জন্য তিন হাজার দুইশত কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করেছে। এটাকে আরো বাড়াতে হবে। এর ফলে প্রোডাকশন অফ কস্ট কমবে। প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে। ইল্ড বাড়বে। ভোক্তারাও কম দামে কৃষি পণ্য কিনতে পারবে।
এখনও পর্যন্ত আমাদের পোস্ট হারভেস্টে বেশি কাজ করা হয়নি। মূল ফোকাস ছিল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। দেশে সেই উৎপাদনও বেড়েছে। আমাদের দেশে পোস্ট হারভেস্টে বিনিয়োগ করতে হবে। ওয়্যার হাউজ বাড়াতে হবে। ধান পেঁয়াজ, টমেটো, আম, মাছ, দুধ সংরক্ষণের জন্য ওয়্যার হাউস সব জায়গাতে করতে হবে। কোল্ড ভ্যান রাস্তায় ছেড়ে দিতে হবে। যাতে করে কোল্ড ভ্যানে করে কৃষি পণ্য গ্রাম থেকে শহরে আসতে পারে। এর ফলে ওয়েস্টেজ অনেক কমে যাবে।
আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে প্রসেসের ক্যাপাসিটি বিল্ড করতে হবে। সরকারের প্রণোদনা দিতে হবে। ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সাপোর্ট দিতে হবে। রিটেইল চেইনে পণ্য বিক্রি করলে ট্যাক্স, ভ্যাট দিতে হয়। আমি মনে করি, পাঁচ বছরের জন্য যদি এটাকে ছাড় দেয়া যায়, তাহলে ইনফরমাল মার্কেট-দোকানগুলোর সমতা আসতো। এই রিটেইল চেইনে গ্রোথ বেড়ে যেত।
ইনোভেশন থেকে শুরু করে প্রাকটিস, প্রোডাকশন, হারভেস্ট, পোস্ট হারভেস্ট, প্রসেসিং এবং রিটেইল চেইন এগুলোর পুরোটা লিংক হলে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতো না। আমাদের দেশে খাদ্য পরিস্থিতি আরো ভালো হতো। দেশের মানুষ ভালো থাকতো। কৃষকরাও লাভবান হতো।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: সিঙ্গাপুরে খুব বেশি কিছু উৎপাদন হয় না। আমদানি করে তারা সারাদেশে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। অর্থাৎ পোর্ট থেকে শুরু করে টেবিলে যাওয়া পর্যন্ত পুরো ভ্যালু চেইনটাকে স্টাবলিস্ট করেছে। পোর্টে প্রোডাক্ট আসলো, রিলিজ করে সেখানে ওয়্যার হাউজ রয়েছে, কোল্ড চেইন আছে। কোল্ড চেইন মেইন্টেন হল। প্রসেস করার জন্য ফ্যাক্টরি আছে। এসব পণ্য তাদের রিটেইল চেইনে বিক্রি হচ্ছে। তাদের খুচরা দোকানে বিক্রি হয় না। এসব পণ্যের জন্য রিটেইল চেইন আছে। পুরো খাদ্য ব্যবস্থাটা একটা সিস্টেমে থাকার কারণে কোথাও অবনতি হচ্ছে না, দাম কম- বেশি হচ্ছে না।
আমাদের দেশে সমস্যা হচ্ছে, যেহেতু আমাদের ভ্যালু চেইন নেই। হঠাৎ করেই ডিমান্ড বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে। যখন ডিমান্ড বেড়ে যায় তখন দাম বেড়ে যায়। আমাদের দেশের বাজারের রিটেইলার এক বস্তা চিনি কিনতে গিয়ে দেখলো, আগের দিনের থেকে ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তখন রিটেইলারের মধ্যে একটি প্যানিক তৈরি হয়। যখন আপনি বাজারে যাচ্ছেন, তখন আপনাকে বলছে চিনির দাম বেড়ে গেছে। আপনি চাল বেশি করে নিয়ে যান। চালের দাম বেড়ে যেতে পারে। রিটেলারের সাথে আপনার রিলেশন ভালো আছে। সেটা বিল্ডআপ করার জন্য সে এটা করেছে। আপনি আরো পাঁচ কেজি চাল বেশি কিনে নিলেন। আমাদের দেশে সাপ্লাই চেন ওভাবে স্টাবলিস্ট হয়নি। প্রসেস, ট্রান্সপোর্ট, স্টোরেজের লিমিটেশন আছে। যেখানে প্রোডাক্ট আসবে, বিক্রি হবে, সেখানেও লিমিটেশন আছে। তখন হঠাৎ করেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই কারণেই ডিম, দুধ, মুরগির দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই সিচুয়েশনে ভ্যালু চেইনটাকে স্টাবলিস্ট করতে পারলে আমার মনে হয়, ওভারঅল খাদ্য পরিস্থিতি ভালো থাকবে। স্ট্যাবল প্রাইজে সবাই কিনতে পারবে।
ড. এফ এইচ আনসারী
প্রেসিডেন্ট, এসিআই এগ্রি বিজনেস