ইডকল বা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। এটি একটি সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেসব কাজে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ লাগে ডলার বা টাকার অংকে তারা এ ঋণ দিচ্ছে। যেমন পাওয়ার স্টেশন, হোটেল, হাসপাতাল স্থাপনের মতো প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছেন তারা। এগুলোর পাশাপাশি সোলার হোম প্রোগ্রাম,সোলার ইরিগেশন, সোলার মিনিগ্রিড তৈরির কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরবর্তী বড় প্রকল্প সোলার ইরিগেশন ও মিনি গ্রিড। মিনি গ্রিডগুলোা বিশেষ করে চর অঞ্চলে করা হচ্ছে। যেখানে আর ই বি’র বিদ্যুতের সংযোগ খুব কম কিংবা বলা যায় যেখানে আর ই বি একেবারেই যাবে না। এর বাইরে ইডকল গার্মেন্টস কিংবা বড় কারখানাগুলোর ছাদের খালি জায়গায় ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম রুফ টপ সোলার বিদ্যুতের স্থাপনা নিয়ে গবেষণা করছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা মাহমুদ মালিক জানাচ্ছেন, তাদের কার্যক্রমের কথা। আজকের বাজার ও এবি টিভির কাছে বলা তাঁর কথামালার অনুলিখন প্রকাশ করা হলো তাঁরই ভাষায়।
ইডকল বা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড। এটি একটি সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেসব কাজে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ লাগে ডলার বা টাকার অংকে আমরা তা দিয়ে থাকি। যেমন পাওয়ার স্টেশন, হোটেল, হাসপাতাল স্থাপনের মতো প্রকল্পে আমরা ঋণ দিই। এগুলোর পাশাপাশি আমরা সোলার হোম প্রোগ্রাম,সোলার ইরিগেশন, সোলার মিনিগ্রিড তৈরির কাজ করছি। আমাদের পরবর্তী বড় প্রকল্প সোলার ইরিগেশন ও মিনিগ্রিড। মিনিগ্রিডগুলো আমরা বিশেষ করে চর অঞ্চলে করে দিচ্ছি। যেখানে আরইবি’র বিদ্যুতের সংযোগ খুব কম কিংবা বলা যায় যেখানে আরইবি একেবারেই যাবে না। এ রকম জায়গা বিশেষ করে চর, পাহাড়, দ্বীপ অঞ্চলের মানুষদের জন্য আমরা মিনিগ্রিড ব্যবস্থা প্রসার করতে চাইছি। সোলার হোম প্রজেক্টের আওতায় আমাদের ১০টি মিনিগ্রিড আছে। এ ছাড়া পাইপ লাইনে আছে আরও ২০-২৫টি। সব মিলিয়ে ভালো অবস্থানে আছে ইডকলের এসব প্রকল্প।
মিনি গ্রিড উন্নতমানের বিদ্যুৎ দিতে পারে
মিনিগ্রিড কিন্তু জাতীয় গ্রীড কোয়ালিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এই বিদ্যুৎ দিয়ে বাসার যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র চলবে। ছোট ছোট মিল কারখানাও চালতে পারে এই বিদ্যুতে। যেমন আইস মিল, লেদ মেশিন, সাইবার ক্যাফে, ফটোকপি মেশিন ইত্যাদি। এই বিদ্যুতের মান আমাদের শহরের বিদ্যুতের থেকেও অনেক ভালো। আসলে এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, কোনও একটি অঞ্চলে বিদ্যুতের সরবরাহ থাকলেই কেবল মানুষ পরিকলপনা করতে পারে যে কী করা যায়? আমি এমনও দৃষ্টান্ত পেয়েছি সোলার গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহের পর ওই অঞ্চলে সাইবার ক্যাফে গড়ে উঠেছে আগে যেখানে কিছুই ছিল না ।
মিনি গ্রিড কোথায় পৌঁছতে পারে
সাম্প্রতি আর ই বি একটি জরিপ করেছে, তাতে বলা হয়েছে যে,হাজার পঞ্চাশ বা এগারো’শ গ্রামে ওদের পক্ষে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যাবে। এখন যেসব জায়গায় আর ই বি যাবে না, ওইসব জায়গাই হলো আমাদের প্রকল্পের জন্য সম্ভাবনাময় এলাকা। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে খুব সহজে আমরা আরো কয়েকটি মিনি গ্রিড করতে পারি। কিছু কিছু এলাকা আছে যেখানে আমরা এখন মিনি গ্রিড করতে পারব না কারণ জনবসতি অনেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এমন জায়গায় লাইন টেনে ওভাবে মিনি গ্রিড স্থাপন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সরকারকেই কিছু করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারকে জানিয়ে দিবো, সরকার যে তালিকাটা করেছে সেখানে যতগুলো গ্রাম আছে তার মধ্যে কতগুলোতে আমরা যেতে পারব আর কতগুলোতে তারা যাবে। এর কারণ হচ্ছে ইডকল একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। টাকা বিনিয়োগ করলে সেই টাকা তাদের আবার ফেরত আনতে হবে। ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে চিন্তা করলে আমরা সর্বোচ্চ ৪০০-৫০০টি গ্রামে মিনি গ্রিড সুবিধা নিয়ে যেতে পারব।
ব্যবসা না করে উন্নয়ন চিন্তা করা যায় কি?
দেখুন, উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই আমরা এগোচ্ছি। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা এই কাজে সম্পৃক্ত আছি। তা না হলে অন্য একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক কিন্তু সোলার ব্যবসায় যাবে না । কিন্তু আমরা আবার অর্থহীন প্রকল্পেও যেতে চাই না যেহেতু এটি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের কথা হচ্ছে লাভ কম হোক যাতে ক্ষতি না হয়।
ইডকলের সহায়তায় অর্জন
মিনি গ্রিড সম্পর্কে তো বলা হলো। আমরা ৭০০ সোলার ইরিগেশন করেছি। এছাড়া আমাদের সোলার হোম প্রকল্পে দেশের মোট জনসংখার ১২ ভাগকে আমরা অন্তর্ভূক্ত করতে পেরেছি। সংখ্যার আকারে প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি।
বিদ্যুৎ সেবার বাইরে কত মানুষ
এটা আসলে বলা কঠিন কারণ সাম্প্রতি সরকার বেশ ক’টি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এক্ষেত্রে আমি বলবো আর ই বি’র সংযোগ কিন্তু খুব দ্রুত প্রসার হচ্ছে। প্রতি মাসে আর ই বি তিন থেকে চার লাখ নতুন সংযোগ দিচ্ছে। আমি বলবো আর ই বি কিন্তু খুব শিগগিরই বিদ্যুৎ চাহিদার অনেকটাই পুরণ করতে পারবে। কিছু কিছু জায়গায় হয়তো একটু সমস্যা হবে যেমন চর এলাকা, পাহাড়ি এলাকা ইত্যাদি।
লোডশেডিং এড়াতে সরকারের করণীয়
বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উন্ন্য়নে অনেক ভালো কাজ করে যাচ্ছে। এই খাতে আসলে রাতারাতি তো সব পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। গ্রিড উন্নয়ন থেকে শুরু করে কারিগরি অনেক কাজের ব্যাপার আছে। এগুলো এক দুই দিনে হবে না। আগের যেকোনো সরকারের থেকে আমি বলবো বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতে অনেক ভালো কাজ করছে।
সোলার রুফ টপের সম্ভাবনা
সোলার বিদ্যুৎ কি জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব? আসলে ছোট ছোট সোলার হোম প্যানেল সিষ্টেম তো, এটা খুব কঠিন। তবে, সোলারে আমরা একটা গবেষণা করছি তা হলো সোলার রুফ টপ। এটা বাসা বাড়ির জন্য নয়, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল প্রজেক্টের জন্য করা। যেমন টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ইত্যাদি। আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, বিভিন্ন বড় বড় কারখানায় ছাদের ওপর অনেক বড় একটা জায়গা খালি থাকে। আমরা যদি চাই তাহলে এখানে ৪০০-৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খুব সহজেই উৎপাদন করতে পারবো। পরীক্ষামূলকভাবে গাজীপুরের একটি পোল্ট্রি কারখানার ছাদে এই প্রকল্প চালু করেছি।
এই প্রকল্প সফল হলে লাভ
এতে করে সরকারের ওপর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের চাপ কমে আসবে । সরকার যদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এই প্রকল্পে যুক্ত হয় তাহলে আমরা জাতীয় গ্রিডেও এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারব।
ইডকল আর কী কী পরিকল্পনা নিয়েছে
আমাদের অবকাঠামো নির্মাণ বিভাগ অনেক শক্ত । সোলার হোম প্ল্যান্টে অর্থায়ন ছাড়াও প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অর্থ আমাদের পাইপলাইনে আছে। কনভেনশনাল পাওয়ার ড্রাইডক, শিপইয়ার্ড, রিভার পোর্ট নির্মাণ এসবের অংশ । এ ছাড়াও জাইকার সহায়তায় বেশ কিছু কারখানায় আমরা সশ্রয়ী বিদ্যুৎ খরচে মেশিন ব্যাবহারে সহায়তা করছি।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ইডকল
নতুনরা উদ্যোক্তারাও কিন্তু ইডকল থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে। যেমন কিছুদিন আগে আমরা প্যাট বটল রিসাইকিং প্ল্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সহায়তা দিয়েছি। এটা হলো ব্যবহৃত বোতল রিসাইকিং করে হাইগ্রেড আরো অনেক পণ্য বানানোর প্রকল্প। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক আগে বিদেশে চাকরি করতেন। বাংলাদেশে উনি নতুন ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। আসলে আমাদের এখানে সবাই আসতে পারেন।
ঋণ খেলাপের সুযোগ নেই
আমাদের এখানে এরকম কোনও সুযোগ নেই বললেই চলে। তবে ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন অনেকে লোকাল মার্কেট থেকে নি¤œমানের সোলার নিচ্ছে। গুণগত মান থাকে না ফলে আমাদের ব্যবসা অনেকাংশে কমে যায়। অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো আমাদের প্রতিষ্ঠানের টাকা দেওয়ার পরও কিন্তু দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আমাদের লক্ষমাত্রা অর্জনে বার বার ফলোআপ করতে হয় এবং ভালো ফলাফলের জন্য সব ধরনের সহায়তা করতে হয়।
ইডকলের প্রত্যাশা
সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হলো সরকার নতুনও বিকল্প এনার্জি প্রমোট করার জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা যেন অব্যাহত রাখে। আসলে এটা এমন একটি সেক্টর যেখানে সরকারের সহায়তা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে আমাদের সোলার প্ল্যান্ট নির্মাণের ব্যাপারে কোন ভ্যাট নেই। আশা করি সরকার এটিও অব্যাহত রাখবে।
মাহমুদ মালিক
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
ইডকল
আজকের বাজার: জেডএইচ/ডিএইচ/ আরআর/ ০১ জুন ২০১৭