প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশে মেডিকেল ও লাইফ সাইন্সের অন্যান্য শাখার উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের জন্য একটি বিশ্বমানের জাতীয় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা এই বায়োব্যাংককে বাস্তবে পরিণত করতে একসঙ্গে কাজ করি। এ বায়োব্যাংক আশাবাদের প্রতীক-যা আমাদের একটি উন্নত ও স্বাস্থ্যকর বিশ্বের দিকে পরিচালিত করবে।’
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের সঙ্গে বায়োব্যাংকিং : রোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধে একটি যৌথ পদ্ধতি’- শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ), ব্রাসেলসে বাংলাদেশের দূতাবাস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের জাতীয় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার একটি ভিত্তি তৈরি করা।
একটি বায়োব্যাংককে সাধারণত মানব জৈবিক নমুনা ও গবেষণার উদ্দেশ্যে একটি পদ্ধতিগত উপায়ে সংগঠিত সংশ্লিষ্ট তথ্যের সংগ্রহশালা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
গোলটেবিলে অংশগ্রহণকারী সকলকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সাথে একটি সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতা এবং বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের কোটি কোটি নাগরিকের মঙ্গল ও কল্যাণ জোরদার করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ায় আমরা এখানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্লিনিক্যাল কেয়ার, চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বেশ কয়েকটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের সাংবিধানিক এবং বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবে, তাঁরা গ্রামীণ পর্যায়ে প্রায় ১৮,৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা খাতে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা চালু করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
তবে তিনি মনে করেন, নির্ভরযোগ্য ক্লিনিক্যাল ডেটা অবকাঠামোসহ বায়োম্যাটেরিয়ালের অভাবে বিস্তৃত চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কম প্রতিনিধিত্বের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গবেষণা সক্ষমতার উন্নয়নের জন্য একটি বিশ্বমানের বায়োব্যাঙ্ক তৈরি করা জরুরি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বায়োব্যাঙ্ক চিকিৎসা ও জীবন বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে সহায়তা করবে।
তিনি আশা করেন, ‘এটি রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং ব্যক্তিগতকৃত যতেœর ক্ষেত্রে সক্ষমতার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির এ ধরনের সুবিধাগুলোর ব্যবস্থা করার সক্ষমতা রয়েছে। ২৬৫০ শয্যা বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ স্নাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এর ৮টি অনুষদ, ৬৮টি বিভাগ এবং প্রায় ৫০০ ফ্যাকাল্টি সদস্য রয়েছে।
তিনি বলেন, এই বায়োব্যাঙ্কের অবদান শুধুমাত্র একটি আর্থিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি মানবিক কাজ। এটি বিশ্বের একটি আশার প্রতীক। সেখানে প্রত্যেকের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমি জোর দিয়ে বলছি যে আপনাদের অবদান নিছক সংখ্যাগত মানকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি জীবনের সংরক্ষণ, পরিবারের সুরক্ষা এবং একটি জাতির ক্ষমতায়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে যা আঞ্চলিকভাবে সামগ্রিক গবেষণার সক্ষমতার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।’ (বাসস)