ড. এফ এইচ আনসারী : বাংলাদেশের কৃষকদের আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে এসিআই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্র্রামে বাস করে। আর সেখানকার অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের কৃষকরা এখনও অজ্ঞ।
এদেশের ৪৭ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। আর কৃষি হলো একটি ডাইনামিক বিষয়। আমাদের কৃষিতে এখনও অবধি টেকনোলজি অপ্রতুল। কৃষককে সম্পদশালী করতে গেলে তাদের মাঠে টেকনোলজির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
এদেশে গরীব কৃষকের সংখ্যা বেশি। তাহলে কি করে এতো বড় জনসংখ্যার মানুষকে সম্পদশালী করা সম্ভব হবে? সম্পদশালী করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় এটা আমরা জানি। আমাদের কৃষকদের কৃষি জ্ঞান আছে ঠিকই কিন্তু তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব থাকায় অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও তারা সমৃদ্ধশালী হতে পারেননা। চ্যালেঞ্জটাকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের অনেক বড় ভিশন রয়েছে। আমাদের ভিশন হলো ‘ক্রিয়েটিং ওয়েলথ ফর দ্য ফার্মার’।
এক্ষেত্রে টেকনোলজির মাধ্যমে বীজ লাগানো থেকে শুরু করে যে কোনো কৃষি ব্যবস্থাকে সম্প্রসারণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কৃষককে কিভাবে হাইটেক বীজের ব্যবহার করতে হবে তা শেখানোই আমাদের লক্ষ্য ।
কৃষককে হাইটেক বীজ লাগানোসহ যুগোপযুগি টেকনোলজি শেখাতে কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদফতর অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করেছে। তারা কৃষকদের হাতে-কলমে কৃষি টেকনোলজির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
এ প্রকল্পে প্রায় ১০-১২ হাজার ডিলারকে আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদেরকে ক্রেডিটে সেবা দিচ্ছি পরে তারা প্রান্তিক কৃষকদের সাথে হৃদ্যতা বাড়িয়ে সেই সব টেকনোলজি প্রান্তিক পর্যায়ে পৌছে দিচ্ছে।
আমাদের দেশে কৃষি বিষয়ে মিডিয়ার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের সেবা আরো সহজভাবে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌছে দিচ্ছে দেশের মিডিয়াগুলো। এ ক্ষেত্রে প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা অনেক। এ বিষয়ে মিডিয়ার আগ্রহেরও কমতি নেই। আমরা এ সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চেষ্টা করছি।
এরই মধ্যে আমাদের প্রশিক্ষণ নেয়া ৬ হাজার কর্মী আছে যারা গ্রামে-গঞ্জে যাচ্ছে, সেখানে তারা কৃষকদের হাতে কলমে টেকনোলজি শেখাচ্ছেন।
তাছাড়া সারাদেশে আমাদের ১০ থেকে ১২ হাজার ডিলার আছে। তারা প্রান্তিক কৃষকদের কাছে আমাদের সেবা পৌছে দিচ্ছেন। যেসব কৃষক এ যাবত সিঙ্গেল ক্রপ করে থাকতেন তাদের আমরা মাল্টি ক্রপ করা শেখাচ্ছি। যাতে করে কোনো ফসলে সে লোকসান গুনলে অন্যটির মাধ্যমে তা পুষিয়ে নিতে পারে। লক্ষ্য করা গেছে, এই চর্চার মাধ্যমে তাদের আয় বাড়ছে।
টেকনোলজি ব্যয়বহুল এ কথা ঠিক। এটা ব্যবহারকারীদের জন্য যেমন সত্য তেমনি টেকনোলজি যারা প্রোভাইড করে তাদের জন্যেও বটে। তার কারণ হলো আমাদের দেশে মডার্ণ টেকনোলজি খুব ধীরে ধীরে কৃষকের ঘরে পৌছায়। বৈশ্বিক কৃষিতে যেসব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে তা আমরা দেশে নিয়ে আসছি। সেগুলো মাঠ পর্যায়ে ট্রায়াল করছি। যেসব প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্য ও আবহাওয়াপোযুগী তা রেখে বাকি গুলো বর্জন করছি।
টেকনোলজিতে আমরা বিশাল অংকের বিনিয়োগ করেছি। আমরা গরু মুরগীসহ গৃহপালিত প্রাণীর ফার্মিংয়ে বিডিং করছি। আমাদের প্রযুক্তি কৃষকের কাছে এখন জনপ্রিয় এবং সহজে গ্রহণযোগ্য।
একটা প্রযুক্তি প্রথমে ধনী কৃষকদের কাছে পৌছানো হয়। সে প্রযুক্তি ব্যবহারে সফলতা আসলে পরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত কৃষকদের মাঝে সেটি পৌছানো হয়। তবে ফলন অধিক হলে তা সংরক্ষণের জায়গা অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকের অধিক লাভবান হওয়াটা ঝুঁকিতে পড়ে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে কৃষককে মাল্টিপল ক্রপিং প্যাটার্ন শিখিয়ে দিচ্ছি।
সামাজিক কৃষি এখানে ক্ষতি এড়াতে সহায়তা করবে। সামাজিক কৃষি হলো, একটি গ্রামে যত কৃষক রয়েছে তারা সবাই একসাথে বসে কে কি ফসল ফলাবে, চাহিদা কতটুকু সে অনুযায়ী চাষ ও উৎপাদন করা। একই সাথে সবাই উৎপাদন ও বিপণনে যাবে।
এসিআই বোর্ড মূল্যায়ণ করে দেখেছে, আমরা ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ কৃষককে লাভবান অর্থাৎ সমৃদ্ধশালী করতে সমর্থ হয়েছি। আর এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আমরা আশাবাদী যে আগামি ২০২০ সালের মধ্যে এটি ৪০ শতাংশে উন্নীত হবে। এভাবে আমরা সারাদেশের কৃষককে আগামি ১০ বছরের মধ্যে সমৃদ্ধশালী করতে সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি।
ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, এসিআই এগ্রি বিজনেস