এসএস ভিশন লিমিটেডের পরিচালক মাসুমা চৌধুরী বলেছেন, ‘নতুন একজন নারী উদ্যোক্তার জন্য প্রথম যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হচ্ছে পারিবারিক সমর্থন। পরিবার থেকে সাপোর্ট না পেলে কোনো কিছুতেই এগোনো সম্ভব নয়। যে সকল নারী ব্যবসায় এসেছেন তাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রত্যকেরই পরিবারের সাপোর্ট রয়েছে। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া সম্ভব নয়। ব্যবসাই হোক বা অন্য যে কোনো কাজ হোক। সফলতা পেতে হলে প্রথম দরকার হয় পারিবরিক সমর্থন। এরপর সরকারের সহযোগিতা তো প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগবে। যেমন- ব্যবসা করতে হলে তো ব্যাংকে যেতে হবে। সেখানে মেয়েদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা সরকার রেখেছে কি না সেটাও দেখতে হবে। শুনতে পাই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যখন ফেস করি সেভাবে কিন্তু তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না। এখনও পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ডেএকজন পুরুষের সাপোর্ট লাগে। স্বামী বা বাবার সাপোর্ট দরকার হয়। একজন নারীকে এখনো ব্যাংক ওইভাবে একসেপ্ট করতে পারেনি’। আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন, এবি টিভির সঙ্গে তাঁর কথপোকথনের চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।
মেয়েদের জন্য কাজের পরিবেশ অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। দশ বছর আগেও মেয়েদের অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। এখন দৃষ্টিভঙ্গির বদল এসেছে। এর সুফল আমরা পাচ্ছি। আশা করি সামনের দিনগুলোয় পুরুষের মানসিকতার আরও বদল হবে। মেয়েরা এগিয়ে আসছে বলে সবাই একসেপ্ট করে নিতে শুরু করেছে। মেয়েরাও কাজ করতে পারে তা অনেকটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা সফল হচ্ছে। শুধু ব্যবসার জগতে নয়; বর্তমানে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের ভূমিকা রয়েছে। নারীদের এমন সফলতার কারণে পুরুষদের মানসিকতারও বদল হয়েছে। এখন অনেকটা নারীদের ওপর নির্ভরশীলও হয়ে পড়েছেন তারা। নারীদের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হচ্ছে। একদিনে তো কোনোকিছুই সম্ভব নয়। আস্তে আস্তে হবে। এখনও অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে যেগুলো ঠিক হতে একটু সময় লাগবে। তবে আমরা আশাবাদী অতি দ্রুতই সব সমস্যা সমাধান হবে।
নারীদের পিছুটান থাকেই
সমাজ কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুরুষকে যেভাবে এক্সেস দেয় নারীকে সেভাবে সর্বক্ষেত্রে এক্সেস দেয় না। নারীদের জন্য এখনও পুরোপুরি উদারতা তৈরি হয়নি। তবে এতকিছুর পরও আমি বলব – অনেক এগিয়েছে সমাজ। এভাবে এগোলে বর্তমানে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার সমাধান হতে খুব বেশি সময় লাগবে না।
নারীদের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে পারিবারিক কমিটমেন্ট। সামাজিক কিছু কমিটমেন্ট থাকে যেগুলো পুরুষদের থাকে না। এসব কারণে কিছুটা হলেও পিছুটান তৈরি হয়। সন্তান, পরিবার এসবের দায়িত্ব এখনও মেয়েদেরই পালন করতে হয়। সমাজ মনে করে মেয়েরা অন্য যাই করুক না কেন এসকল দায়িত্বও মেয়েদেরই পালন করতে হবে।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কারণে এগুলো এখনও ধারণ করে আছি। কিন্তু দেখেন ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোতে কিন্তু এসব নেই। ফলে তারা অনেকটা এগিয়ে গেছে। তাই বলতেই হয় আমাদের সোস্যাল কমিটমেন্টের কারণে অনেকটা পিছিয়ে আছি।
ব্যবসার বর্তমান পরিস্থিতি
ব্যবসা নিয়ে সব সময়ই আশাবাদী আমি । তবে এখন ব্যবসার গতি একটু শ্লথ বলে মনে হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা বা আইন প্রয়োগের কারণে এমনটা হতে পারে। অথবা সরকারের দিক থেকে নানা চাপ কিংবা মুভমেন্টের কারণে ব্যবসায়ীরাও কিছুটা শঙ্কিত। নতুন কোনো প্রজেক্টে যেতে বা নতুন কোনো ব্যবসা নিয়ে চিন্তা করতে ভয় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা
ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বর্তমানে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে গ্যাস সমস্যা। ব্যবসা ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো কিছুর মধ্যে গ্যাস সমস্যা প্রধান সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিগুলো ঠিকমত গ্যাসের লাইন না পাওয়ার ফলে ব্যবসায় গতি আসছেনা। অনেকেই অনেক টাকা ইনভেস্ট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। অথচ বছরের পর বছর গ্যাস লাইন না পেয়ে আবার শিল্পটিকে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে এ অবস্থা দেখে ইনভেস্ট করতে ভয় পাচ্ছেন। অন্য দিকে টার্ন নিচ্ছেন। যে ব্যবসায় গ্যাসের প্রয়োজন নেই সেই সব ব্যবসার কথা ভাবছেন। অনেকে বাইরেও চলে যাচ্ছেন। বাইরে ইনভেস্ট করছেন। যেখানে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।
নতুন নারী ব্যবসায়ীদের জন্য পরামর্শ
নতুন একজন নারী উদ্যোক্তার জন্য প্রথম যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হচ্ছে পারিবারিক সমর্থন। পরিবার থেকে সাপোর্ট না পেলে কোনো কিছুতেই এগোনো সম্ভব নয়। যে সকল নারী ব্যবসায় এসেছেন তাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে প্রত্যকেরই পরিবারের সাপোর্ট রয়েছে। পরিবারের সাপোর্ট ছাড়া সম্ভব নয়। ব্যবসাই হোক বা অন্য যে কোনো কাজ হোক। সফলতা পেতে হলে প্রথম দরকার হয় পারিবরিক সমর্থন। এরপর সরকারের সহযোগিতা তো প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগবে। যেমন- ব্যবসা করতে হলে তো ব্যাংকে যেতে হবে। সেখানে মেয়েদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা সরকার রেখেছে কি না সেটাও দেখতে হবে। শুনতে পাই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যখন ফেস করি সেভাবে কিন্তু তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না। এখনও পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ডেএকজন পুরুষের সাপোর্ট লাগে। স্বামী বা বাবার সাপোর্ট দরকার হয়। একজন নারীকে এখনো ব্যাংক ওইভাবে একসেপ্ট করতে পারেনি।
আমি নিজের কথা যদি বলি- আমার পরিবার থেকে বেশ সাপোর্ট পাই। বরং কাজ করি পরিশ্রম করি বলে একটু আলাদা যতœও জোটে। কিন্তু অনেক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে পারি নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। এসব কারণে পিছিয়ে পড়ছে নারীরা। অনেকে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিচ্ছে।
এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সামাজিক পরিবর্তনটা জরুরি। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যদি এমন হয়, না, নারীরাও পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করবে। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশ গ্রহণ জরুরি। এ ধরনের মেন্টালিটি গ্রো করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সরকারের কাছে চাওয়া
বাইরের দেশের কথা যদি বলি- কিছু দিন আগের ঘটনা। আমার হাজব্যান্ড অফিসিয়াল কাজে ভিয়েতনাম গিয়েছিলেন। তিনি একটি ফ্যাক্টরি ভিজিট করতে গিয়ে দেখেন ফাঁকা মাঠের মধ্যে গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎসহ সব কিছু সংযোগ দেওয়া রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি এখনো হয়নি। ইন্ডাস্ট্রি হলে সেখানে সব কানেক্ট করে দেওয়া হবে। আর আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রি করার পর বছরের পর বছর ঘুরতে হয় বিভিন্ন সংযোগ পেতে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি করে কার্যক্রম চালু করার আগেই ব্যাংক ইন্টারেস্ট গুনতে হয়। তাই সরকারের কাছে আমার চাওয়া আগে এসকল দিক সমাধান করে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করুন। তারপর উদ্যোক্তাদের ডাকুন। কারণ একজন উদ্যোক্তার তো বসে থেকে ব্যাংক লোন গোনার মতো সামর্থ্য নেই। এভাবে চললে সে তো ব্যবসা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে। তাই বলব- আগে সুযোগ সুবিধাগুলো দিন এরপর তাদের ডাকুন। আমাদের দেশে এই জায়গাটায় অনেক ল্যাকিংস রয়েছে। এ জায়গাটায় আমাদের কাজ করা উচিত।
ঠিক আছে আমাদের দেশ অনেক দিক থেকে অনুন্নত। অনেক দিক দিয়ে আমাদের সরকার সেভাবে পেরে ওঠে না। তার মধ্য দিয়েও তো সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। আমাদের দেশে অনেক কিছুই রয়েছে। আমাদের ম্যান পাওয়ার আছে। যা অনেক দেশেরই নেই। অথচ আমাদের এই ম্যান পাওয়ার কাজে লাগাতে পারছি না। অধিকাংশ বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছে। আর বড় একটা অংশ বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই যে সম্পদ রয়েছে এগুলো কাজে লাগিয়েই অনেক দূর যাওয়া সম্ভব। এজন্য সঠিক পরিকল্পনা, সরকারের সদিচ্ছা ও ভালো একটি সরকার দরকার। অর্থাৎ সদিচ্ছার সরকার দরকার। সু-শাসন দরকার।
মাসুমা চৌধুরী, পরিচালক, এসএস ভিশন লিমিটেড