টেক্সটাইল ব্যবসায়ী প্রবীর কুমার সাহা একইসঙ্গে এফবিসিসিআইয়েরে পরিচালক। নিজের পুরনো ব্যবসার পাশাপাশি সেবা খাতের ব্যবসায় হাত দিয়েছেন, নরসিংদী শহরে গড়ে তুলেছেন বিনোদন পার্ক ড্র্রিম হলিডে। আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন, এবি টিভির সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যবসার নানা বিষয়ে নিজের মতামত দিয়েছেন। আলোচনার প্রধান প্রধান অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।
প্রতিটা পার্বণেই আমি চাই একটা নতুনত্ব
এফবিসিসিআই থেকে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ দিয়েছি। এবং আজকে আমি আপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই যে, তিনি ব্যবসায়ীদের মনের কথাটা বুঝে অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, যেহেতু এটা ব্যবসাবান্ধব সরকার, তিনি সবসময় বলে থাকেন, আমরাই মনে করি, সেটা অনুধাবন করে তিনি এটা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বলেছেন, আগের যে আইনটা ছিলো, সেটাই থাকবে আগামী দুই বছর। এজন্য আমি সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই। তবে, যেহেতু একটা বিশাল অংকের বাজেট হয়েছে, এবং সেই বাজেটে কিন্তু এই ভ্যাটের একটা হিসাব করা আছে। আমাদের নতুন ভ্যাট আইনটা যদি ১ তারিখ থেকে কার্যকর হতো, সেক্ষেত্রের আমাদের নিয়মিত একটা আয় হতো, সেটা ধরেই কিন্তু ক্যালকুলেশন করা হয়েছে বাজেটটা। এখন নিশ্চয়ই সেই বাজেটে ঘাটতি আসবে। যেহেতু আমি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনে আছি, সুতরাং ব্যবসায়ীদের মনের কথা আমাকে বুঝতে হবে। আবার সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য যে বাজেট দিয়েছে, সেই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখা, সে ব্যাপারেও আমাদের সহযোগিতা করতে হবে, এটাই বাস্তব সত্যি কথা। এখন, ভ্যাট আসলে প্রচল আছে। কিন্তু সরকার চেয়েছিলো আইনটাকে এমন একটা ধারায় আসুক যেন, সবকিছুর মধ্যে যেন ভ্যাট ইম্পোজ হয়। ভ্যাট কিন্তু আমরা দিচ্ছি, এখনও দিচ্ছি। কিছু েেত্র থাকতো যে, আমাদের খুচরো দোকানদার বা স্মল এবং মিডিয়াম কটেজ ইন্ড্রাস্ট্রি যেগুলো, তাদের দাবি খুব জোরালো ছিলো। তাদের বক্তব্য ছিলো যে, আমরা ছোট ছোট শিল্প কারখানা করে খাই, আমরা যদি ১৫% ভ্যাট দিই। সেেেত্র আমাদের শিল্প-কারখানাগুলো বা ছোট ছোট ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর ভ্যাট যদি আমরা ইম্পোজ করি, তাহলে সাধারণ যারা ভোক্তা, যারা কনজ্যুমার তারাও তিগ্রস্ত হবে। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কিন্তু আমরা সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছি। যদিও এই ভ্যাট আইনটা ২০১২ সালেই পাশ হয়েছে এবং ২০১৭ সালে ইম্পোজ করার কথা ছিলো। তো যাই হোক, আমরা মনে করি যে, এখনও আমাদের দেশে প্রচুর ব্যবসায়ী আছেন, শিল্প উদ্যোক্তা আছেন, ভ্যাটের আওতার বাইরে এখনও ওনারা আছেন। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমার এটা একটা বিনীত অনুরোধ থাকবে,আমরা চাই সেই সমস্ত ব্যবসায়ীদের বা ওই সমস্ত শিল্প উদ্যোক্তাদের ভ্যাটের আওতায় আনা হোক। আমরা তাদের উৎসাহিত করতে চাই। যারা রাজস্ব বোর্ডের দায়িত্বে আছেন কর্মকর্তারা, অনেক সময় ওনাদের কারণেও কিন্তু অনেকে ভ্যাট বা ট্যাক্স বিমুখ বা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কর্মকর্তাদের আচরণের কারণে বা একটু বাড়াবাড়ির কারণে এমনটা হচ্ছে। আমরা এনবিআর এর সাথে কয়েকবার মিটিং করেছি, সেখানে আমরা কথাগুলো বলেছি। একজন কমিশনার যিনি দায়িত্বে আছেন, ওনারও কিন্তু বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। এসব সভায় আমি যখনই যাই, আমার একটা বক্তব্য থাকে, বিশেষ করে কমিশনারের উদ্দেশ্যে যে, আপনি একজন কমিশনার। আপনার উপর এত বড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি চারজন ব্যবসায়ীকে ডেকে এনে এক কাপ চা খাইয়ে বলেন ভাই, আপনারা দেশের চালিকাশক্তি; আপনারা যদি আমাদের ভ্যাট বা ট্যাক্স সঠিকভাবে না দেন তাহলে দেশটা চলবে কিভাবে? সেেেত্র ওনার এই এক কাপ চায়ের বিপরীতে যদি ১০ পার্সেন্ট রেভিনিউ আর্ন করা যায় তাহলে কিন্তু বাজেট ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতো। আমাদের দেশে দেখেন, এটা সবচেয়ে দুঃখজনক যে, আমরা ১৬ কোটি মানুষ। যেখানে সাড়ে চার কোটি – পাঁচ কোটি ব্যবসায়ী। চাকরিজীবী, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি চাকরিজীবী সবাইকে কিন্তু ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ ব্যবসায়ীর নিবন্ধন আছে, তার মধ্যে ১১ ল ব্যবসায়ী ট্যাক্স দেয়। এটা বলতে খুব খারাপ লাগে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ শ্রীলংকা, সেখানে ৭৩ পার্সেন্ট ব্যবসায়ী কিন্তু ভ্যাট ও ট্যাক্স দেয়। সেেেত্র আমরা পিছিয়ে এই জন্য যে, আমরা না দিয়ে অভ্যস্ত, যেটা বাস্তব সত্য কথা। আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বলতে চাই আমরা না দিয়েই অভ্যস্ত। কারণ আমরা একজন আইনজীবীকে ধরে প্রথমেই বলি যে, ভাই আমি এই ভ্যাট-ট্যাক্সের ঝামেলা বুঝি না; এখন বলেন কী করতে হবে? তখন উনি কী করেন? উনি নিজের জন্য রাখেন ৫০ভাগ, আর হয়তো একজন কমিশনার বা জয়েন্ট কমিশনার, যারা এই ফাইলগুলো দেখেন, ওনার জন্য একটা বাজেট দেন ৫০। এতে ১০০ কিন্তু চলে গেল। হয়তো ১০ বা ২০- এর একটা পে-অর্ডার করে গভর্নমেন্টের কাছে জমা দিয়ে দেয়, যেটা বাস্তব সত্যি কথা।
আমি মনে করি যে, আমাদের আইনজীবীরা মানে ট্যাক্স আহরণ করার জন্য যে সমস্ত আইনজীবী আছেন, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় করতে হবে, কারণ ওনাদেরও কিন্তু একটা ভূমিকা আছে। এখন একজন কমিশনার বা ট্যাক্স কালেক্টর, উনি যদি মনে করেন একজন আইনজীবী বা ল-ইয়ারের কোনো ভূমিকা নেই, এটা কিন্তু ভুল। আমি মনে করি, যদি ব্যবসায়ী, আইনজীবী, ট্যাক্স ক্যারিয়ার, ল-ইয়ার বা ল-মেকার এবং এনবিআরের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে এগুলো নিয়ে একটু আলাপ-আলোচনা করলে আমার মনে হয় ভালো একটা রেজাল্ট আসবে। আমি যেহেতু ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনে আছি, আমি জানি যে আমার কোন কোন এলাকায় ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের আওতায় আছেন বা ভ্যাটের আওতায় নেই। আমার একটা প্রস্তাব, সেটা আমি আগেও দিয়েছি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সভায় আমি বলেছিলাম, প্রতিটা জেলার চেম্বার অব কমার্সকে যদি সম্পৃক্ত করা হয়, সেই চেম্বার অব কমার্সের মাধ্যমে যদি ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে, তাদের ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা হয়, আমরা ১৫% এর জায়গাতে প্রয়োজন হলে না হয় ৫% থেকেই শুরু করি, এখন কেউ দিচ্ছে না, আমরা যদি অল্প কিছু দিয়েও শুরু করি, তাহলে আমার মনে হয়, আমাদের দেশ ডেভেলপমেন্টের জন্য বাইরে আর হাত পাততে হবে না -এটা আমার বিশ্বাস। কারণ আমাদের ছোট দেশ, আমরা সবাই যদি মিলিতভাবে সেই প্রচেষ্টা রাখি এখানে আপনাদেরও একটা ভূমিকা আছে, অর্থাৎ এই জিনিসটাকে ভয়-ভীতির বাইরে নেওয়া দরকার। ট্যাক্স-ভ্যাটের ভীতি মন থেকে দূর করতে হবে। তাহলেই আমার মনে হয় এটা সাকসেস আসবে।
এফবিসিসিআই উদ্যোগ নিতে পারে
এফবিসিসিআই একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন। এটা কিন্তু পলিটিকাল প্ল্যাটফর্ম নয়। এখানে বিভিন্ন মতের বা দলের লোক থাকতে পারে, কিন্তু উই আর ইউনাইটেড, আমরা সবাই ব্যবসায়ী। ভ্যাট ভয় কাটাতে এফবিসিসিআই থেকে আমরা কিন্তু চেষ্টা করছি, টাইম টু টাইম কথা বলছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে মিটিং করছি। কিন্তু এই ভূমিকাটা নিতে হবে সরকারের প থেকে। আসলে ভ্যাট ভীতি দূর করার এই উদ্যোগটা সরকারকেই নিতে হবে। আমাদের প্রস্তাবগুলো আমলে নিয়ে যদি অন্তত কিছুটা বাস্তবায়ন করা হয় তবে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আমি এখন প্রস্তাব দিয়ে গেলাম, কিন্তু আমার কোনও প্রস্তাবই গ্রহণ করা হলো না, তাহলে আমিও কিন্তু একটু পিছিয়ে যাবো। আস্থার সংকট দেখা দিবে। আমি মনে করি, সরকারিভাবে যারা এই দায়িত্বে আছেন, ওনাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
সবকিছু সরকারকে বহন করতে হবে কেন
আমার খারাপ লাগছে যে, সবকিছুই কেন সরকারকে একা বহন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তো আমাদের সবসময় যাওয়ার সুযোগ হয় না। তাই আমরা মনে করি যে, যাদেরে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা যদি দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতেন, তারা যদি ব্যবসায়ীদের মনের কথাটা বুঝে এই জিনিসটা যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা সংসদে উত্থাপন করতেন, যে আমরা এইভাবে একটা বাজেট প্রণয়ন করেছি কিন্তু তাতে এইসব নেগেটিভ দিক আসতে পারে। সেই দিকগুলো বিবেচনা করলে এতকিছু হতো না। আজকে কেন ব্যবসায়ীদের রাস্তায় নামতে হবে? কেন আজকে সারা দেশে এটা নিয়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে? এই আতংকটা তো আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে, আরও তি করেছে। আমি মনে করি, প্রথমত আমাদের আতংক বা ভয় দূর করতে হবে -আমি আগেই বলেছি। তাহলে কিন্তু সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হবে।
কর্পোরেট ট্যাক্স বেশি না কম
কর্পোরেট ট্যাক্সের বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটা দাবী ছিল যে, কর্পোরেট ট্যাক্সটা আমাদের অত্যন্ত বেশি। আর কর্পোরেট ট্যাক্সটা বেশি হওয়ার কারণে ফাঁকি দেয়ার একটা প্রবণতা থাকে। আপনি জানেন যে, একটা লিমিটেড কোম্পানি ইচ্ছা করলে সে বিভিন্ন খাতে খরচ দেখাতে পারে। আমি যদি ইনকামের আওতায় আসি, তাহলে তো সরকারকে এত পার্সেন্ট ট্যাক্স দিয়ে দিবো। তখন সে কী করে, বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে তার কোম্পানি লোকসানি -এরকম একটা ডিকারেশন দিয়ে বসে থাকে। তাই কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর বিষয় নিয়ে আমরাও দীর্ঘদিন বলেছি। আমি মনে করি যদি এই ট্যাক্স কমানো হয়, তাহলে সরকারের রেভিনিউ আরও বাড়বে। কারণ, তখন সবাই এটা দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ হবে। সরকার একটা বাজেট করছে, সেখানে যা খরচ হবে, তার একটা তালিকা আছে। এখন এটাকে সমন্বয় করতে গেলে কোথা থেকে টাকা আসবে? মনে করেন, আমার হাতে চারটা আঙ্গুল আছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তো আমার চারটা আঙ্গুলকেই দেখাতে হবে। সুতরাং আমার মনে হয়, এটা না করে আগের মতো রাখলেও এত বিতর্ক হতো না। কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে সোর্স ট্যাক্স বাড়িয়ে দিয়েছে -এর প্রয়োজনটা কি ছিলো? ঘুরে ফিরে আমি আবার একই জায়গায় চলে গেলাম।
ভ্যাট অনলইন : অভ্যাস হয়ে যাবে
ভ্যাট অনলাইন নিয়ে আমি একটা টেলিভিশনের টক শো -তে বলেছি, প্রথম যখন একটা মোবাইল ফোন আমরা হাতে পাই, তখন আমরা ম্যাসেজ অপশন বা নাম সেভ করাটাও কিন্তু করতে পারি নি। কিন্তু এখন আমরা সবকিছুই করতে পারছি। সুতরাং ভ্যাট অনলাইনের যে ধারাগুলো আমি পড়েছি, ওখানে অনেকগুলো ভালো দিক আছে। কিন্তু যেহেতু প্রথমেই আপনাকে ১৬ পৃষ্ঠার একটা ফরম ধরিয়ে দিয়েছে। তখন ওই ফরম পেয়ে এটা-সেটা, এত ঝামেলার দরকারটা কী? আমি অত কথা বুঝি না, আমি এত টাকা আয় করছি, আমি এইটা তোমাকে দিয়ে দিবো – এগুলো ব্যবসায়ীদের কথা। যেটা প্যাকেজ, এই কথাটা নিয়ে আসছে। যেমন, প্রতি বছর আমি আপনাকে এখন দিই দশ হাজার, এবার আমি বিশ হাজার টাকা দিচ্ছি, তবু আমি এত ঝামেলার মধ্যে নেই। এই হলো বিষয়টা। সুতরাং নতুন কিছু শুরু হলে, এটা নিয়ে একটু তর্ক-বিতর্ক হবেই। তবে আমরা দেখছি। পর্যবেণ করছি, যদি মনে করি যে, এটা সহনশীল তাহলে ঠিক আছে। আর যদি দেখি এটা নিয়ে একটা বিতর্ক হচ্ছে, তাহলে বিকল্প ভাববো ।
আমার নতুন ব্যবসা সেবা খাত, বিনোদন পার্ক
আসলে আমার আসল ব্যবসা টেক্সটাইল, এটা প্রথমেই বলেছি। এটা আমার ব্যবসা না, আসলে আমি এটা কিছুটা শখ করে করেছি। আপনি জানেন যে, বিনোদন একটা সেবা খাত। তাই এটাকে আমি একটা সেবা হিসেবে নিয়েছি। আমার সৌভাগ্য হয়েছে, ব্যবসার সুবাদে আমি অনেক দেশে ভ্রমণ করেছি। সেখানে আমি দেখেছি যে, প্রত্যেকটা সিটিতে একটা বিনোদনমূলক পার্ক থাকে। কারণ লেখাপড়ার পাশাপাশি বা কাজের পাশাপাশি একটা মেন্টাল রিল্যাক্সের দরকার আছে। সেই মেন্টাল রিল্যাক্সের জায়গা হলো, আপনি একটা জয়গায় গেলেন, সেখানে যদি গিয়ে দেখেন যে অনেক বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গেলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি এগুলো তার মেধা বিকাশে সহায়তা করে। সেই চিন্তা থেকে আমি নরসিংদীতে ড্রীম হলিডে পার্ক প্রতিষ্ঠা করি। আপনাদের দোয়ায় আজকে এটা এত বড় প্রতিষ্ঠান হয়েছে, সেটার পেছনে অনেক মেধা এবং শ্রম আমার ছিলো। আমি আমার নিজের টেক্সটাইল মিলেও এত সময় দিইনি, যত সময় আমি এখানে দিয়েছি। এটা একটা নেশার মতো। যেমন আপনি সাংবাদিকতা পেশায় আছেন, এটাকে যদি আপনি পেশা এবং নেশা হিসেবে নেন, তাহলেই কিন্তু আপনি সাকসেসফুল হবেন। সেনকম কেউ যদি এটা করতে চায়, তাহলে পেশা এবং নেশা -দুইটাই তার মধ্যে থাকতে হবে। আপনার মাধ্যমে আমি বলতে চাই, আমাদের বাংলাদেশে এটার প্রয়োজন আছে। আমাদের বাংলাদেশের লোক কিন্তু পর্যটন পিপাসু, ভ্রমণ পিপাসু। ঈদের সময় দেখি, সব শ্রেণী-পেশা ও বয়সের মানুষ এখানে আসছে এবং এরা খুব এনজয় করছে। আমিও তাদের সাথে মিশে কথা বলি, কথা বলে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আমি আমলে নিই। যেটাকে ওনারা ভালো বলেন সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো আমি আর একটু বাড়াই, আর যে অসুবিধাগুলোর কথা বলেন, লিপিবদ্ধ করে আমি সেগুলো দূর করার চেষ্টা করি। প্রতিটা পার্বণেই আমি চাই একটা নতুনত্ব। আমাদের পার্কে প্রতি তিন মাস পর পর গেলে আপনি বুঝতে পারবেন যে, এর মধ্যে একটা নতুনত্বের ছোঁয়া আছে। একজন লোক আজকে আসলো, সে যদি তিন মাস পরে এসে একই জিনিস দেখে, তখন তার যে উৎসাহ বা আগ্রহ, সেটা কিন্তু কিছুটা বিলীন হবে। তাই আমি সবসময় নতুনত্বের সন্ধান করি, সেটা যদি ব্যয়বহুল হয়, তাহলে কাছাকাছি কিছু একটা করার চেষ্টা করি। সুতরাং আমি চেষ্টা করি, নতুনত্বের একটা ছোঁয়া ওখানে সেট-আপ করতে এবং আপনাদের দোয়ায় আমি এমন সব জিনিস সেট-আপ করি যে, প্রত্যেকে গেলে ওখানে খুব এনজয় করে।
বিনোদন পার্কে সবসময় নতুন কিছু সংযোজন করি
সর্বশেষ এই ঈদে আমি আমার পার্কের পেছনে একটা নদী খনন করেছি। প্রায় এক কিলোমিটার খনন করে ওখানে একটা জাহাজ সেট-আপ করেছি। নদীর ধারে আমি সুন্দরবনের আদলে বনায়ন করে ওখানে হরিণ ছেড়ে দিয়েছি। এছাড়া কিছু দ্বীপ তৈরি করেছি, পাহাড় তৈরি করেছি। সেখানে বানর, হনুমান, দেশীয় পাখি এগুলো আমি ওখানে রেখে দিয়েছি। চায়না থেকে আমি কিছু আর্টিফিশিয়াল হাতির পাল, সিংহ, কুমির এনেছি। যখন আপনি জাহাজে ঘুরবেন, তখন মনে হবে যে সত্যি সত্যি তারা হাটছে। কিন্তু আসলে এগুলো আর্টিফিশিয়াল, এগুলো সেন্সরের মাধ্যমে মুভ করে। দেখে দেশে বাচ্চারাসহ সব বয়সের মানুষই খুব আনন্দ পায়। এগুলো আমি নতুন সংযোজন করেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে আমি এই কনসেপ্টগুলো কালেক্ট করি।
আগামী ঈদের জন্য কিছু চমক আমি রেখেছি। সেগুলো অলরেডি সেট-আপ চলছে। খুব সুন্দর জিনিস এবং এটা আগামী কোরবানির ঈদের দর্শনার্থী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য উপহার থাকবে। আমি আপনার মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল ভ্রমণপিপাসু মানুষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি যে, আপনি নরসিংদীতে একবার আসেন ড্রীম হলিডে পার্কে, ভালো লাগবে। তার পরও দেখুন, অনেকে অর্থ-বিত্ত খরচ করে বাইরে যাচ্ছে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক দেখার জন্য, আমিও একসময় গিয়েছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত এশিয়ায় যে কয়টি আমিউজমেন্ট পার্ক আছে, আমার মনে হয় না আমাদের নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্ক তারচেয়ে কোনো অংশে কম।
এতিম, প্রতিবন্ধী আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পার্ক ফ্রি
এখানে কয়েকশো বিঘা জমির উপরে আমি এটা করেছি। আমাদের দেশে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ প্রচুর। এখন কিন্তু তারাও ঘুরতে বের হন। তাদের কথা চিন্তা করে আমি আমার পার্কে এমন ভাবে সেট-আপ করেছি যে, একটা মানুষ টিকেট কেটে প্রবেশ করে তার অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে যদি কোনও রাইড কিনে উঠতে না পারে, কিন্তু সারাটা দিন সে যাতে ওখানে বসে, বেড়িয়ে, হেঁটে চলাফেরা করতে পারে, সে ব্যবস্থা আছে। এছাড়া পার্কে আরেকটা জিনিস করেছি, সেটা হলো শারিরীক প্রতিবন্ধী, দরিদ্র বা এতিমখানার ছেলেমেয়েদের জন্য আমি আমার পার্ক ফ্রি করে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও আমার পার্ক ফ্রি। যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা ভালো রেজাল্ট করছে, গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পাচ্ছে, তাদের উৎসাহিত করার জন্য আমার পার্ক ফ্রি করে দিয়েছি, বিভিন্ন গরিব স্কুল যদি আমার কাছে অ্যাপ্লিকেশন করে, সেেেত্র বড় অঙ্কের একটা ছাড় দিয়ে তাদের আমরা পার্ক ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দিই। এগুলো আমি নিজ থেকে করছি। প্রথমেই বলেছি যে, এটাকে আমি সেবা হিসেবে নিয়েছি। এগুলো করে আমি খুব আনন্দ পাই, খুব তৃপ্তি পাই।
পার্কে বিয়ের আয়োজনও করা সম্ভব
খুব আনন্দের সঙ্গে বলছি, আমাদের এখানে প্রচুর কর্পোরেট প্রোগ্রাম বা এজিএম হচ্ছে। ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, গার্মেন্টস থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান আমাদের এখানে হচ্ছে। এমনকি এখানে যদি কেউ বিয়ে-শাদির জন্যও অ্যাপ্লাই করে, তাহলে আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিই। সেখানে যাতে ওরা অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে পারে, এজন্য ওই ধরনের পরিবেশ আমার করা আছে। পার্কের বিভিন্ন কর্নারে আমি এই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ৫০ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত মানুষের জন্য প্রোগ্রাম করার ব্যবস্থা আছে আমাদের এখানে।
এখানে রাত কাটানোর সুযোগ-সুবিধা আছে, কিন্তু কমার্শিয়ালি আমি এটা দিচ্ছি না। আমার এখানে অনেকগুলো রিসোর্ট আছে। আর্থি ব্যাপার গুরুত্ব না দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
প্রবীর কুমার সাহা
পরিচালক, এফবিসিসিআই
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ড্রিম হলিডে পার্ক লিমিটেড