বন্যায় কুমিল্লায় ৮৩ হাজার ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কুমিল্লার বানভাসি মানুষ। গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙনে পানির স্রোতে যেসব এলাকা দিয়ে গেছে সেসব এলাকায় ঘরবাড়িসহ স্থাপনা
ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কুমিল্লায় বন্যায় ৮ হাজার ৬৭৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৭৪ হাজার ৮১টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দারা নিম্ন আয়ের মানুষ হওয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারগুলো।
কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয় বলছে, জেলায় বন্যায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মানুষের আবাসিক খাতে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, জেলার মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে ঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বুড়িচং উপজেলায় সাড়ে ১৬ হাজার। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ১ শ ৪৩টি। মাটির এবং টিনের কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গেছে সবচেয়ে বেশি। গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙ্গনে পানির স্রোত যে এলাকা দিয়ে গিয়েছে সে এলাকায় ঘরবাড়িসহ স্থাপনা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ব্রাক্ষণপাড়ায ক্ষতিগ্রস্থ ৪ হাজার ৮০৫ টি,  এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ১৪৪টি, চৌদ্দগ্রামে  ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার ৫শ, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৪৫টি, নাঙ্গলকোটে ১১ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মধ্যে ১ হাজার ৫৬টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, আদর্শ সদরে ১৩ হাজার ৫শ’, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩৯টি, লাকসামে ১৪ হাজার ৫০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত৮১৫ টি, সদর দক্ষিণে ২ হাজার ৪ শ ৮২টি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের মধ্যে ১৩২টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলার বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়া গ্রামে রোজিনা বেগম (৪৫)। পানির তীব্র স্রোতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। জানা গেছে, সাজানো বসত-ভিটায় স্বামী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস ছিল রোজিনা বেগমের। স্বামী ফজলু মিয়া দিনমজুর। গোমতীর বাঁধ ভেঙ্গে ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে রাতেই দোতলা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। তারপর থেকে স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছেন তিনি। শিকারপুর গ্রামের নাজমা বেগম (৫০) জানান প্রতিবন্ধী এক মেয়েকে নিয়ে অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন। ঘরে ফিরে গিয়ে কোথায় থাকবেন চিন্তায় দিশে হারা হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। জানা যায় তার বসত ঘরটি বন্যায় হেলে পড়েছে। ঘরটি নতুন করে মেরামত না করা হলে বসবাস করা সম্ভব হবে না। হতদরিদ্র বিধবা শ্যমলা বেগম (৪০) জানান, অনেক আগে স্বামীকে হারিয়ে ১৬ বছরের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আমার দুঃখের সংসার। মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে কোনোমতে দিনাতিপাত করছেন। ছেলে এতিমখানায় থেকে পড়াশোনা করছে। বন্যায় তার মাটির ঘরটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। ঘর মেরামতের মতো কোনো অর্থ নেই তার। উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের ইন্দ্রবতী গ্রামের অন্তত ১৫টি মাটির ঘর ধসে গেছে। কোনো কোনোটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ঘরহারা হয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছে এসব পরিবার। রাজাপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বেগম বলেন, মাথা গোঁজার শেষ সম্বল বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে। আমরা এখন কোথায় যাব? যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ঘর ঠিক করব কী করে? নাজমা বেগম বলেন, বন্যায় ঘর ভেঙে গেছে। এখন পেটে ভাত দিব, না ঘর মেরামত করব এ চিন্তায় আছি। কেউ যদি সাহায্য করত, তাহলে কোনোরকম জান বাঁচাতে পারতাম। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার জানান, আমরা ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থস্ত বাড়ি ঘরের তালিকা তৈরী করেছি। উর্দ্ধতণ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘরের তালিকাও পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই পুনর্বাসনের কাজ শুরু করতে পারবো।
এ বিষযে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বাসসকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আমরা জেলার ১৪ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিযেছি। সরকারি ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবাইকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (বাসস)