‘কোম্পানির নাম ‘অন্যরকম’। আমরা কিন্তুু অন্যরকম নামটা শুধু ভিন্ন রকম করার জন্য ব্যবহার করি না, বর্তমান বাংলাদেশ যেমন আছে, ভালো আছে; এর চেয়েও আরও ভালো কিছু করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। এই কারণেই নামটা অন্যরকম হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন কিছু করি, চেষ্টা করি যাতে নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে পারি এবং বাস্তবায়ন করতে পারি’।–বলছিলেন অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ। তাঁর অন্যরকম হওয়ার গল্প বলেছেন আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন এবিটিভি’র সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে কথপোকথনের চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।
অন্যরকমের শুরুটা যেমন করে
আমি যখন ২০০০ সালে এইচএসসি পাশ করি তখন আমার বয়স ১৯ বছর। আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে আমাদের এই ব্যবসাটা শুরু করি। প্রথমে আমি শুরু করি পরে আমার বন্ধু লিটন আমরা সঙ্গে যোগ দেয়। দুজনে মিলে এই ব্যবসাটা শুরু করি। শুরুটা ছিল মূলত একটা প্রশ্ন থেকে, আমি যখন স্কুলে ছিলাম তখন থেকেই স্যারদের অনেক বেশি প্রশ্ন করতাম। যে কোনও জিনিস না বুঝলে ভালো লাগত না আর প্রশ্ন করলেই তার রেশ ধরে আরও প্রশ্ন আসত মাথায়। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন টিচাররা আমাকে অনেক সার্পোট দিতেন। আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশ্ন করার ব্যাপারে অনেক প্রশয় দিতেন কিন্তু ঢাকায় আসার পর অন্যরকম চিত্র দেখি, যেখানে প্রশ্ন করলে ঝারি খেতে হয়। যখন এইচএসসি ফাস্ট ইয়ার তখন কিছুটা পিছিয়ে যাই সেকেন্ড ইয়ারে মোটামুটি সিলেবাস শেষ করে ফেলি। আর সেখান থেকেই আমার এই চিন্তা-ভাবনা যে আমি একটা প্রতিষ্ঠান করব যেখানে প্রশ্ন করলে কেউ ঝারি খাবে না,মুখস্ত বিদ্যা হবে না, মানুষ বুঝে পড়বে যাতে সে তার ব্রেনটাকে ব্যবহার করতে পারে। সে যদি ব্রেনটাকে কাজে লাগাতে না পারে তাহলে সে কিসের মানুষ? এভাবেই আমার এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ ৮ বছর পরে আমাদের প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে তখন আমরা আমাদের নীতিতে অটল ছিলাম যে আমরা নোট গাইড ভিত্তিক কোচিং সেন্টার দিবনা আমদেরটা হবে মূলত ইউনিক থিংকিং বেইজড লারনিং সেন্টার । এর শুরু হয় ২০০০ সালের ডিসেম্বরে। আমাদের আরেকটা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাইলেপস যার প্রথম নাম ছিল জেবাফস। এটা শুরু করি ২০০২ সালের শেষের দিকে। আসলে বলতে হয়, এগুলো আমার ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই আমার একটা ব্যক্তিগত চিন্তা ছিল যে আমি ভিন্ন কিছু করবো। আর যখনই ভিন্ন কিছু করা যায় সেটা হয় চ্যালেঞ্জিং। আমার এটা ভালো লাগতো। একটা অংক করতে গেলে যেমন কঠিন বা থিউরি বুঝতে গেলে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, ব্যবসার ক্ষেত্রেও তাই। এ কারণেই আমাদের কোম্পানির নাম ‘অন্যরকম’। আমরা কিন্তুু অন্যরকম নামটা শুধু ভিন্ন রকম করার জন্য ব্যবহার করি না, বর্তমান বাংলাদেশ যেমন আছে, ভালো আছে; এর চেয়েও আরও ভালো কিছু করার জন্য আমরাচেষ্টা করি। এই কারণেই নামটা অন্যরকম হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করি যাতে নতুন কিছু ক্রিয়েট করতে পারি এবং বাস্তবায়ন করতে পারি।
সকল কাজের পিছনে মানুষের একাধিক কারণ থাকে
মানুষ যখন কাজ করে সেটা একটা কারণে করেনা তার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। এটা আসলে বলা যায় না যে কোন্ কারণে মানুষ কোন্ কাজটা করল? যেমন আজকে আপনি সাদা শার্ট পড়েছেন, তো আমি যদি বলি ভাই আজ সাদা কেনো চয়েস করলেন? আসলে এটার উত্তর দেওয়া কঠিন। ঠিক তেমনি আমাদের রকমারির ব্যাপারটা। রকমারির উদ্যোক্তা আমি, লিটন ভাই ছাড়াও বাইরে আমাদের আরও তিনজন জুনিয়র আছেন। আমাদের মোট ৫ জন উদ্যোক্তা। রকমারির উদ্যোগটা একটু আলাদা। রকমারি বলতে আমার তিন ফ্রেন্ড ওরা অন্য একটা উদ্যোগ নিয়ে এসেছিল। তাদের কথা শুনে মনে হলো নতুন কিছু করা যাবে তখনই নতুনভাবে ৫ জন মিলে শুরু করি । সে সময় আমরা যে প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলাম সেটা বন্ধ হয়ে যায়। আবার আমরা নতুন করে কিছু করার চিন্তা করি যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-কমার্স করা যায় কিনা। ওরা তিনজন বলে যে বই হলে কেমন হয়? তখন আমরা বই ব্যবসাটাকেই নির্বাচন করি। আবার ব্যবসা শুরু না করার ব্যাপারেও আমরা চিন্তিত ছিলাম। ঠিক সেই সময় ওরা তিন জন একদিন এক চায়ের দোকানে এক স্কুল টিচারের সাথে গল্প করতে করতে চা পান করছিল । তিনিই প্রস্তাব করেন যে রকমারি নামটাই দেন। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নামটা দিলাম। তখন একুশে বইমেলা চলছিল। অনলাইনে বই পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের রকমারি অন্যতম। বই পড়ার কাজে আমরা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, এর কারণ হচ্ছে শেখা। মানুষ বই পড়েই শিখে। ইতিহাসে জ্ঞানী পন্ডিতেরা যা করে গেছেন তা নিয়ে জন্য বই লিখেছেন। ওইসব বই থেকে আমরা শিখতে পারি। এভাবে বললে বলা যায় যে পিঁপড়া ২০০শ’ বছর আগে যেভাবে খাদ্য সঞ্চয় করত এখনো সেভাবেই করে এবং দুই হাজার বছর পরেও তাই করবে যদি খোঁজ নিয়ে জানা সম্ভব হয়। কিন্তু আমরা মানুষ ২ শ’ বছরে কত চেনজ হয়েছি আরো হবো । এর অনেক কারণ আছে, পিঁপড়া তার পরবর্তী প্রজম্মের শেখার জন্য কিছু রেখে যায়নি, রিজার্ভ করার কোনো ওয়ে তাদের কাছে নেই, কিন্তু মানুষ প্রাচীন বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে নিউটন পর্যন্ত যা আবিষ্কার করে গেছেন তার সবকিছু লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সেখান থেকেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে বা শেখার পথ খুঁজে পেয়েছি। যেমন এখন ৩০০শ’ বছরের পথ কিন্তু আমি তিন মাসে পাড়ি দিচ্ছি এবং এটার সাথে আমি কিছু যোগ করে রেখে যাচ্ছি, দ্যাটস হোয়াই, আমাদের উন্নত জাতি হতে হলে আমাদের শিখতেই হবে ।
সব উদ্যোগ সফল হবে না, বই কেবলই শেখায়
সবার সব উদ্যোগ যে সফল হবে তা নয়, সেটা যে দেশেই যান না কেন। ১০০শ’র মধ্যে ২০ভাগ সফল হবে বাকি ৮০ ভাগই ব্যর্থ হয় এটাই স্বাভাবিক। ১০ জন যদি নতুন কিছুর চেষ্টা করে তার মধ্যে ৮ জন ফেল করবে। এখন আমার ৮টি প্রতিষ্ঠান টিকে আছে কিন্তু আমি যতগুলো উদ্যোগ নিয়েছি তার সবগুলো সফল হয়নি। এখন আমি রকমারি নিয়ে ব্যবসা করছি। সেই নামে মানুষ আমকে চিনে কিন্তু আমার যে আরও কতগুলো প্রতিষ্ঠান বসে গেছে সেটা তো মানুষ জানে না। মানুষ যখন ১০টা উদ্যোগ নিবে, সবগুলোই দাঁড়াবে এমন নয়, তার মধ্যে ৮টা বসে যাবে, ২টা দাঁড়াবে এটাই বোধহয় সিস্টেম ।
একটা উদ্যোগ যে দাঁড়াবে তার পিছনে অনেক ইস্যু লাগে। আবার আমেরিকায় একটা কোম্পানি দাঁড়াতে খুব কম সময় লাগে কারণ তার কাছে সব ইস্যু রেডি। আমেরিকায় একটা ই-কর্মাস শুরু হলে সেটা ভেরিফাই কিভাবে হবে সেটা নিয়ে উদ্যোক্তাকে চিন্তা করতে হয়না । এরকম অনেক প্রফেশনাল কোম্পানি আছে জাস্ট ই কমার্স তার হাত পর্যন্ত পৌছাতে পারলেই হলো। কিšু‘ বাংলাদেশে কোন কিছুর উদ্যোগ নিলে সব কিছু ‘আমাকেই’ চিন্তা করতে হচ্ছে কিন্তু আমেরিকায় এই চিন্তা তাকে করতে হয় না । বাংলাদেশে যেহেতু এই উদ্যোগ বিষয়টাই নতুন সেহেতু ভুল হবে তাই স্বাভাবিক। এটা করতে করতে আস্তে আস্তে ঠিক হবে। যেমন একটা বাচ্চা আছাড় না খেয়ে হাঁটতে শেখে না উদ্যোগের ব্যাপারটাও ঠিক তেমনি । আবার আরেকটা দিক যে যারা ভুল করে তারা যদি না শেখে তাহলে তাদের মোটিভেট হওয়ার দরকার নেই বা এটা ভাববার কোন কারণ নেই যে আমি একদিন এমনি এমনি সফল হবো। না এমনি এমনি শেখার কোনও কারণ নেই। আমি যে ভুল করেছি সেখান থেকে আমি শিখেছি কিনা, নিয়মিত মাথা ঘামাচ্ছি কিনা এটি রড় রিষয়। এরকম অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা পড়ালেখাই করেননি কিন্তু তারা সফল হয়েছেন । আবার বিল গেটসের কথা বললে তিনি দিনে এখনো ৫০০ পাতা পড়েন। আগে কমপক্ষে ৮০০-১০০০ পাতা পড়তেন। এ থেকেই বোঝা যায় তারা কী পরিমাণ পড়াশুনা করে? আমি দেশে এর একটা বড় গ্যাপ দেখেছি, আমাদের মধ্যে শেখার প্রবণতা কম, জাস্ট কমনসেন্স দিয়ে কাজ চালাতে চাই। কমনসেন্স একটা নির্দিষ্ট টাইমের পরে আমাকে আর এডভানটেজ দেবে না। কমনসেন্স দিয়ে আমি এগোতে পারব বাট একটা সেটেল লেভেলের পর এটাকে আর ক্রস করতে পারব না। এ জন্য বই পড়ার প্রসঙ্গ এখানে চলে আসল । সব কিছুর মধ্যে আমরা সব সময় যে বলি পড়, পড়। কারণ পড়ার মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি। কিন্তু সব ধরনের বই পড়লে হবে না যার যেটা দরকার তার সেই বইটা পড়তে হবে আন্দাজে পড়লে হবে না। এরকম অনেক মানুষ আছে যারা অনেক বেশে ষ্টাডি করে কিন্তু তেমন কিছু করতে পারে না। তাই একজন কী শিখবে কোন দিকে যাবে সেদিক চিন্তা করে সেই ধরনের বই পড়া উচিত। সফল মানুষেরা সব সময় দিক নিদের্শনা নিয়ে শেখার জন্য বই পড়েছেন এবং তারা শিখেছেন, সফলও হয়েছেন। শিখতে শিখতে শেখা হয় বা মজা লাগে ভালো আর যারা সাকসেসফুল হয়না তারা শেখার জন্য পড়ে না এন্টারটেইন হওয়ার জন্য পড়ে সামান্য হয়তো কিছু শেখে । এটা হয় একজন পড়ছে শেখার জন্য আরেকজন মজা পাওয়ার জন্য। শুধু মজা পাওয়ার জন্য নয় আমি যদি সাকসেস হতে চাই তবে সেভাবেই পড়তে হবে। আমার লাইফে যে পড়ার প্যাটার্ন তার মধ্যে একটা বড় পরিবর্তন আসে ২০১২ সালে, এর আগে আমি ননফিকেশন বই বলতে গেলে পড়িই নাই। আমার ছোট বেলা থেকে ফিকশন বই বেশি পড়া হয়েছে। যেমন গল্প,উপনাস, রবীন্দ্রনাথের অনেক বই আমার ওপর প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন বই পড়ে আমি নন ট্যাডিশনাল কিছু করার সাহস পেয়েছি। সবাই বলছে যে এটা করোনা। তো সেটার জন্য বইয়ের একটা বড় ভূমিকা ছিল। ২০১২ সালেও আমি ফিকশন বই পড়তাম এবং ননফিকশন বই জাস্ট উদাহরণ বলে ভাবতাম। আমি মনে করতাম এটা সেলসের বই, ম্যানেজমেন্ট শেখার বই এগুলো থেকে শেখার কিছু নেই কমনসেন্স দিয়েই সব হয়ে যাবে। কিন্তু এটা যে ভুল সেটা আমি বুঝতে পারি ২০১২ সালে। তখন আমি যে ধারণাগুলো পাই এগুলো যদি আরও ৫-৭ বছর আগে পেতাম তবে আমার প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ভালো অবস্থানে থাকত। এটা আমি খুব প্রপারলি বিশ্বাস করি।
২০১২ সালে আমি যখন আমেরিকায় যাই তখন আমেরিকান কোম্পানির একজন আমাকে একটা বই দেন, ফাইভ ডিসফাংশনস্ অব এ টিম বইটা পড়ার পরে আমার প্রথম চেঞ্জ আসে। এবং কত বিষয়ে শেখার আছে সেগুলো সব আছে। পরে আমরা ওই আমেরিকান কোম্পানির কাছ থেকে কপিরাইট নিয়ে বাংলায় অনুবাদ করে গত বছর প্রকাশ করেছি। এবং এর ভুমিকাও অনেক যে বইটা আমি পাবলিশড করলাম। তখন আমার ধারণা বদলে গেল বইটি ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কত কিছু শেখার আছে। এরপর আমি টপিকস ধরে ধরে শিখতে শুরু করি। যেমন ২০১৬ সালে আমার টার্গেট ছিল সেলস এ্যান্ড মার্কোটং বিশেষ করে সেলস। কারণ ২০১৬ মানে কি আমার প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৬ বছর হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আমার কম্পিউটার সেল সফল হয়েছে,আর্ন করছে। সেখানে ১০০০ মানুষ কাজ করছে। ২০১৬ সালে আমি যখন সেলস নিয়ে পড়লাম সারা বছর যত পড়ালেখা করছি তার মধ্যে প্রায় ৮০% বই পড়েছি সেলস অ্্যান্ড মাকের্টিং নিয়ে। পড়ার পড়ে আমাকে যদি এখন জিজ্ঞেস করেন যে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল স্টেজে সেলসটা যে লেয়ারে আছে সেই হিসাবে আমার যে দক্ষতা তার হিসাবে নিজেকে কত নম্বর দিব, ২০ দেব। কিন্তু ইন্টারন্যাশনালের সাথে তুলনা করি যখন আমি সেলস মার্কেটিং পড়ি নাই তখন পরীক্ষা নিলে নিজেকে ৫ দেব। এখন হয়তো ২০ বা ৩০ এই লেভেলে হয়তো আমি টেনেটুনে গিয়েছি। বাট বাংলাদেশের মধ্যে আমরা সাকসেসফুল কারণ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেন্ডের মধ্যে আমি একজন। ২০১৬ সালে সেলস-মার্কেটিং পড়ে যখন আমি এই প্ল্যানিংগুলো প্রয়োগ করতে শুরু করলাম আমার রকমারি এবং অন্যরকম প্রতিষ্ঠানে। ইলেকট্রিক সেক্টরে ওই বছরেই অন্য রকম ইলেকট্রিকে প্রায় অবিশ্বাস্য একটা টার্গেট ২৫০% গ্রোথ হলো। যেখানে দেশের অন্য কোম্পানিগুলো ১০-২০ ভাগ গ্রোথের চিন্তা করতে পারেনি যেখানে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো অছি আমরা। যেটা আমি জানতাম না যে এতো কিছু শেখার আছে। এক কথায় যার যে বিষয় দরকার সে বিষয়ে ষ্টাডি করলে সে শিখতে পারবে এবং ব্যবসায় সাফল্য আসবে। যেমন কিছু বই আছে সেলস মার্কেটিং,ম্যানেজমেন্ট,লিডারশিপ এগুলো ইংরেজিতে লেখা। আমাদের যেহেতু বাংলাদেশ যেহেতু আমরা এগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করে পাবলিশ করার চেষ্টা করছি । সেটা হয়তো কিছু উপকারে আসবে বাট বাংলায় অনুবাদ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে ইংরেজিতে হলেও কিছু পড়া দরকার আমোদিত হওয়ার জন্য না; শেখার জন্য।
তরুণ মানেই সম্ভাবনা
তরুণ মানেই সম্ভবনা কারণ তরুণরা নতুন করে চিন্তা করতে পারে,যে কোন সনাতন জিনিসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। এ সব উদ্যোগ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তি রয়েছে তাদের। তো সব কিছু মিলিয়ে তরুণদের জন্য আমার দেশটা পজিটিভ। বাংলাদেশের তরুণদের পজিটিভ জায়গার কথা বলব, যেমন আমি বললাম যে আমি ১০০ মধ্যে ৩০ পেতে পারি এমন নলেজ লেভেলের মানুষ অথচ আমি বাংলাদেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান করেছি; তাতে করে এটাই বোঝায় যে বাংলাদেশ ল্যান্ড অব পটেনশিয়াল। বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ এতো অল্প জায়গার মধ্যে থাকে যে এখানে মোটামুটি একটু মাথা খাটালেই ওপরে ওঠা সম্ভব। রেজাল্ট আনাও সহজ । সার্ভিস সেক্টরে কিন্তু আমাদের ভালো ওরিয়েনটেশন নেই। আমাদের হাসপাতালগুলোতেও দেখবেন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আপনি সার্ভিস নিতে গেলে বিরক্ত হচ্ছেন। সার্ভিস যে যেখানে যেমন দিচ্ছেন তাতে অন্যরা সন্তুষ্ট নয়। কারণ বাংলাদেশ হচ্ছে ল্যান্ড অব অপরচুনিটি। একজন ডাক্তারের কাছে গেছেন সে সব সময় রোগীর সঙ্গে মিসবিহ্যাভ করছে তবুও মানুষ তার কাছেই যাচ্ছে, কারণ তার এতো রোগী আছে যে দুর্ব্যবাহারের পরও মানুষ তার কাচ্ছে যাচ্ছে। কিন্তু সময় বোধ হয় বদলেছে। এখন তাকে সার্ভিস রিলেটেড হতে হবে। এরকম প্রচুর জিনিস আছে যেটার সার্ভিস ভালো না। অনেক জিনিস আছে যাদের প্রোডাক্টটাকে ইমপ্রেস করা যায়। এতো অল্প জায়গার মধ্যে এতো বেশি কাস্টমার খুব কম জায়গাতেই আছে। আর ইন্টারনেট আমাদের নতুন সুবিধা এনে দিয়েছে যার মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট বা নিউজ খুব সহজেই কাস্টমারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে । আমাদের বাংলাদেশে একটা পেইজ খুললে সেখানে হাজার হাজার লাইক পাওয়া যায়। অন্য দেশে যেমন আমেরিকান মার্কেটে বিজ্ঞান পাঠের আলাদা একটা পেইজ খুলেছিলাম আমি যেখানে ৫ ডলার খরচ করে একটা মাত্র লাইক পেয়েছি। তো এভাবেই বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া যাবে।
ব্যবসায় সফল হতে চাইলে কী করতে হবে
এটাকে আমি বুলেটও বলব না উত্তরও দেব না কারণ যারা আমার এই বক্তব্য শুনে সফল হতে চায় যে আমি কয়েকটা পয়েন্ট বলে দিব, সেটা শুনে তারা সফল হবে। না এভাবে তারা সফল হবে না। প্রথমত চিন্তা করতে হবে যে সফলতার রেসিপি কী? যখন আমার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সফল হলো তখন আমিও বোঝার চেষ্টা করছি হোয়াট ইটস মিন। বা আমরা পার্টনাররা মিলে চিন্তা করেছি যে আমাদের মধ্যে এমন কী আছে যাতে করে আমরা পারছি অন্যরা পারছে না। এটা ফাইন্ডআউট করা এতো সহজ না । আপনি ন্যাচারালি খুব ভালো ক্রিকেট শট খেলেন, এটা আপনি কিভাবে খেললেন অথবা কেউ মানুষের সামনে খুব ভালো কথা বলতে পারে, আরেকজন পারে না, সে জানতে চাইলো ভাই আপনি কিভাবে পারেন? এটার উত্তর কিন্তু আপনি এককথায় দিতে পারেন না। বলবেন আমি জানি না। এই জন্য আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম সফলতা কিসে আসলো? বই পড়ে? পৃথিবীতে যত বই লেখা হয়েছে সব বই-ই সফলতার রেসিপি। এভাবে কিছু বই খুঁজে খুঁজে পড়লাম তখন কিছুটা বুঝতে শুরু করলাম। তবে বিষয়টা এতটা সহজ ছিলনা। কারণ ১০০ জন মানুষ ১০০টা রেসিপি বের করেছে সব কিন্তু আলাদা আলাদা। সবগুলো অনুসরণ করা কঠিন তবে কমন কিছু প্যাটার্ন আছে বা যে বইগুলো আমি পড়লাম যেগুলো অনেক বছর রিসার্চ করে রচিত। সেগুলো যদি এতো সহজ হতো তাহলে কষ্ট করে রিসার্চ করতো না। এসব বই পড়ার পর আমর কিছুটা আইডিয়া হয়েছে। এজন্য আমি বলছি এটা শুনে যদি কেউ বলে যে আমি সফল হবো, তাহলে আমি বলব, ভাই এসব বুলেট পয়েন্ট শুনবেন না। সফল হবেন না। ট্রেইন দা জার্নি, ডিজাইন ইয়োর ওন পাথ, তোমার নিজের রাস্তা তুমি নিজে তৈরি করো। তোমাকে কী করতে হবে তুমি যদি আমার পরামর্শ চাও তাহলে আমি বলবো, যে বই আমি পড়েছি তুমিও সেগুলো পড়তে পারো। তবে বই শুধু পড়ে গেলে হবে না শিখতে হবে। বই পড়ে আমরা কিছু শিখতে চাইনা না, তবে এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা না। পৃথিবীর সব দেশেই এই সমস্যা আছে বাট বাংলাদেশে একটু বেশি। আমরা পড়ি এজন্য যে এটা পড়ে পরীক্ষার হলে কিভাবে লিখব। বাট এই ভাবে পড়ি না যে বইটাি পড়ে আমি কী শিখলাম বা কী কাজে ব্যবহার করব। ছোটবেলা থেকে অনার্স-মাস্টার্স টার্গেট করে পড়তে পড়তে অভ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা পড়ি এই মাইন্ড সেটআপ নিয়ে যে পড়ে পরীক্ষার হলে লিখব, এই পড়া দিয়ে কাজ হবে। তবে এখনও যদি বলি যে ভাই এটা পড়ে আসলে কী শিখেছি? তাহলে ভালো উত্তর পাওয়া যাবেনা। আমি বলব, সফল হওয়া নিয়ে যারা বই লিখে গেছেন বিশেষ করে অটোবায়োগ্রাফি সেগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমি বললে দুই তিন মিনিটে বলে শেষ করে দিতে পারি কিন্তু যারা বিশেষজ্ঞ মানুষ তাদের সারা জীবনের সফলতা লিখে গেছেন দীর্ঘ সময় ধরে। সেইসব বই পড়ে সফল হওয়া সম্ভব। স্বল্প সময়ে যদি তুমি সফল হতে চাও তাহলে ব্যর্থ হবে। শর্টকাট খোঁজা বাদ দিয়ে গো দা ডিটেইলস।
অন্যরকম গ্রুপের বিশেষত্ব
এই পৃথিবীতে সবাই বিশেষ। সব কিছ্ ুবিশেষ। আমাদের অন্যরকম গ্রুপে বিশেষত্ব হচ্ছে আমরা বাংলাদেশকে অন্য রকম দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আমাদের এখানে সবাই নতুন কিছু করার চিন্তা করে এবং মানুষের ভালো হোক তাই চায়। আমাদের গ্রাহককে ভালো সার্ভিস দেওয়াই আমাদের বিশেষত্ব। আমাদের চিন্তার মধ্যে এটা আছে যে বাকীরা আগে যা করেনি আমরা তা আগে করেছি। আমরা আমাদের প্রোডাক্ট তৈরি করে স্থানীয় বাজারেই দিচ্ছি কিন্তু আমরা যদি ৮ টা কোম্পানি না করে একটা করতাম তাহলে আরো ভালো হতো হয়তো গ্লোবালি চলে যেত আমাদের প্রোডাক্ট।
আমার কাছে মনে হয়েছে যে যুদ্ধক্ষেত্রে যখন শত্রু বাহিনী পজিসন নিয়ে বসে আছে আর সেনাবাহিনী যাচ্ছে তাদের দখল করার জন্য তখন ফ্রন্ট লাইনে যে সৈন্য থাকে তারা সবাই মোটামুটি গুলি করতে থাকে। এবং মরে যায়। যারা মরে যায় তাদের লাইফ কিন্তু ব্যর্থ। তো সেই বিবেচনায় আমাদের অন্য রকম ব্যবসার বিশেষত্ব হলো ফ্রন্টলাইন বিশেষত্ব। আবার আমাদের অনেক উদ্যোগ হয়তো সফল হয়নি, আবার কিছু হয়েছে, সেগুলো সফল হলে আন্তর্জাতিক মানের কিছু হয়তো হতো। একটু একটু করে করার ফলে আমাদের পরের প্রজন্মের তরুণরা আমাদের উপর বিরক্ত হতে পারে। বলতে পারে দূর এরা কী করে? এরচেয়ে আমি ভালো করতে পারি। আমরা আসলে এরকমই চাই। ল্যাট দ্যান কাম অ্যান্ড টেক ইয়োর পজিসন। তরুণদের মধ্যে উদাহরণগুলো তৈরি করার চেষ্টাকে আমরা আমাদের বিশেষত্ব বলতে পারি । আমরা এই উদাহরণ ধরেই কাজ করছি। যেমন রকমারি’র ই-কমার্স নতুন একটি ধারার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, অন্যরকম বিজ্ঞান ব্যবসায় কাজ করছে। অনেক কিছুই করেছি কিন্তু সবগুলো হয়তে এতো সুন্দর হয়নি। অন্যরকম পাঠশালা নামে আমাদের একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে। এই চ্যনেলের সাবসক্্রইবার প্রায় ৬৭ হাজার। এতে যে ভিডিওগুলো আছে তার প্রথম ভিডিওটা করেছি ১৪ বছর আগে । তখন আমরা ভিডিও সিডি বানিয়ে স্টুডেন্টদের দিতাম। এই সিডির কোনও কপিরাইট আমরা করিনি। কিন্তু করার আইন আছে। আমাদের কথা হচ্ছে, তুমি যদি এটা পেয়ে থাকো তাহলে কপি করে আরেকজনকে দাও। এভাবে সিডি অনেক দুর পর্যন্ত পৌছে গেছে। যখন ইউটিউব, ইটারনেট আসলো তখন আমরা এটা ইউটিউবে দেওয়া শুরু করলাম। এর নাম দেওয়া হলো অন্যরকম পাঠশালা। গত বছর এর সাবসক্রাইবার ছিল ১০ হাজার আর এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার । বাংলাদেশে অনলাইন পাঠশালা বলতে মানুষ অন্যরকম পাঠশালাকে চেনে না, চেনে টেন মিনিটস স্কুলকেই। এখানে মাত্র ৩ জন স্টুডেন্ট কাজ করে। এদের মধ্যে দুজন মিলে এক সাথে একটা লাইভ করবে। টেন মিনিটস স্কুল সফল হলে আমার ভালো লাগে কারণ এই শিক্ষা নিয়ে বহুবছর আমি একটা কাজ করছি আর তা এতদিনে এসে সাকসেস হয়েছে। যেখানে আমার ৭০ হাজার সাবসক্রাইবার আর ওরা এমন একটা কাজ করেছে অল্প সময়ে যার সাবসক্রাইবার আড়াই লাখ; দ্যাট ইজ হিউজ সাকসেস। এটা অন্য রকম সাকসেস এই অর্থে যে আমরা একটা কিছু করছি সেটা ভালো হয়নি। তারা ভেবেছে আমরা এরচেয়ে আরো ভালো কিছু করবো। আমারা ফার্স্ট জেনারেশন হয়তো তেমন কিছু করে যেতে পারব না,আমাদের দেখে ইয়াংরা আরো বেশি কন্ট্রিবিউট করবে,অনুপ্রাণিত হবে। এবং আমাদের তুলনায় ব্রিলিয়ান্ট কিছু করবে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এটাই হবে। প্রত্যেকটা জায়গায় আমার স্টুডেন্টরা প্রত্যেকেই আমাকে ছাড়িয়ে যাবে। আমার জন্য এটাই হবে সবচেয়ে খুশির বিষয়।
মাহমুদুল হাসান সোহাগ
চেয়ারম্যান, অন্যরকম গ্রুপ