আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমাদের যে র ম্যাটেরিয়ালস রয়েছে, যেটা দিয়ে পিভিসি, পিপি, পিএস, রেজিং তৈরি হয়, এসব কাচামাল যারা বন্ড লাইসেন্স নিয়ে আসে, তাদের সাথে আমাদের প্রতিযোগীতা করাটা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই খাতে এক্সপার্ট বা দক্ষ কর্মীর অভাব। দক্ষ কর্মী না থাকাতে যেটা হচ্ছে প্রোডাক্টের কোয়ালিটি মেইনটেইন করাটা একটু কঠিন হয়ে যায়। অনেক সময় কর্মীদের কাছে জিম্মি ও হয়ে যেতে হয়। আর তৃতীয়ত যে চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলা করতে হয় সেটা হচ্ছে, আমার কোম্পানির জন্য চ্যালেঞ্জ এটা, যেটা এই সেক্টরের না। সেটা হচ্ছে- ব্যাংক লোন। এখন ব্যাংক লোনের সমস্যাটা আমরা মোটামুটি সমাধান করতে পারছি। কারণ এনআরবি ব্যাংকে যে লোনটা ছিল, সেই লোনটা আমাদের সাবেক যে ম্যানেজমেন্ট ছিল তারা ২৬ লাখ শেয়ারের বিনিময়ে সেটাকে এডজাস্টমেন্টের প্রসিডিউরে চলে গেছে। এটা হয়ে গেলে তখন সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যাংক ফিনেন্সের আর কোন সমস্যা হবে না। সুতরাং ব্যাংক ফিনেন্সের আর কোন সমস্যা না হলে বিদেশের দানাটা ইম্পোর্ট করে নিয়ে আসতে পারবো। এটা খুব জরুরী। কারণ লোকাল দানা কিনে আসলে প্রোডাকশন করে প্রফিটটা আসলে অন্যের ঘরে চলে যায়। নিজের ঘরে থাকেনা, দানা বলতে রেজিং বা র-মেটারিয়েলস মেজর যে র-মেটারিয়েলস , সুহৃদ ইন্ডাজট্রিজের প্রোডাক্টগুলো হলো দুই ধরণের। একটা ফিলম্ বানাচ্ছে। ডাইরেক্ট ফিলম্ সেটা হচ্ছে পিভিসি, পিএস, পিপি, এইচআইপিএস। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে এই ফিল্মগুলো থেকেই।
ডিসপোজেবল প্রোডাক্ট বানানো হচ্ছে। ওয়ান টাইম ডিসপোজেবল গ্লাস, কাপ, আইসকাপ, বাটি, লান্সবক্স, বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট ট্রে। পিভিসি ফিলমটা ফার্মাসিউটিক্যালস নিচ্ছে। আর পিপি ফিলমটা বিভিন্ন ফুড ইন্ডাজট্রিজে নিয়ে থাকে। ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের যে ব্লিস্টা ফিলম্ তৈরি করে, ট্যাবলেট, ক্যাপ্সুলের প্যাকেজিং যেটা হচ্ছে। যেটা আপনারা খেয়ে ফেলে দিচ্ছেন, সেই ফিলমটাই তারা আমাদের কাছ থেকে নিচ্ছে।
ব্লিস্টা প্যাকিং এর জন্য আমরা যখন শুরু করেছিলাম, তখন কোন ইন্ডাজট্রিজ ছিল না। এখন দু একজন করছে। বাংলাদেশে আমাদের সে রকম কোনো প্রতিযোগীতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে না। কারণ আমাদের মেশিন যেটা, সেটা ইতালি থেকে আনা, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি করা। আমাদের প্রোডাক্টও সে রকম স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করেএ মেইনলি ইম্পোর্ট সাবস্টিটিউট।
এই চ্যালেঞ্জগুলো থেকে উত্তরণের উপায় হল, বন্ড লাইসেন্সে যাদেরকে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, আর আমরা যখন ইন্ডাজট্রিয়ালরা আই আর সির মাধ্যমে ইম্পোর্ট করে নিয়ে আসছি, এই পার্থক্যটা কমাতে হবে। বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে দানা নিয়ে এসে, এই দানাটা হয়তো লোকাল মার্কেটেই বিক্রি করে দিচ্ছে। অথবা লোকাল প্রোডাকশনে ব্যবহার করছে। লোকাল প্রোডাকশনে ব্যবহার করলে তাদের শতভাগ সুবিধা। তাদের কোন ভ্যাট নেই, ডিউটি নেই, ট্যাক্স নেই, কিছুই নেই। আর আমাদের ডিউটি, ট্যাক্স মিলিয়ে ২৫ পারসেন্ট দিতে হচ্ছে। সুতরাং এই ২৫ পারসেন্টের গ্যাপের যে একটা পার্থক্য, তাতে আমাদের লোকাল মার্কেটে প্রতিযোগীতা করাটা একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সরকারকেই এখানে ইনিসিয়েটিভ নিতে হবে। আমাদের জন্যও কিছু সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। কারণ আমরা তো ইম্পোর্ট সাব্সটিটিউট। আমাদের এই প্রোডাক্টটা যদি আমরা তৈরি না করতাম, তাহলে এটা বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হতো। ডলার চলে যেতো বিদেশে। তাই আমরা যেহেতু ইম্পোর্ট সাব্সটিটিউট, আমরাও তো দেশের জন্য কন্ট্রিবিউসন করছি। আমাদেরও তো লোকজন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে। সুতরাং আমাদের জন্য করতে হলেও সরকারকে বন্ড লাইসেন্স এ যারা নিয়ে আসছে তাদের সম্পূর্ণ দিচ্ছে। আমাদের জন্যও তো কিছু কমানো দরকার, ২৫ পারসেন্ট এর জায়গায় হয়তো ১০ পারসেন্ট করা যায়। ভ্যাট, ডিউটি, ট্যাক্স সব কিছু মিলিয়ে আমরা যদি ১৫ পারসেন্ট ছাড় পাই, তাহলেও প্রতিযোগিতামুলক বাজারে এগিয়ে যাব।
আমরা যেহেতু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইম্পোর্ট সাব্সটিটিউট, আমরা বাইরে থেকে দানাটা নিয়ে আসছি, আমাদের নিজেদের ব্যাবহারের জন্য, কমার্শিয়াল না। যারা কমার্শিয়ালি দানা নিয়ে আসছে, তাদের জন্য সরকার যে পরিমান ভ্যাট, ট্যাক্স, ডিউটি নিচ্ছে সেটা নেক। সেটা নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্ন নেই। আমরা যারা ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য ব্যবহার করছি, তাদের জন্য মনে হয় সরকারের একটু চিন্তা করা দরকার। তাদের টিকে থাকার জন্য, প্রতিযোগিতামুলক বাজারে টিকে থাকার জন্য অবসসই এটা কমানোর দরকার। কারণ বন্ডের লাইসেন্সে যারা নিয়ে আসছে তারাতো শুরুতেই ২৫ পারসেন্ট লাভ করছে। সুতরাং তার সাথে আমাদের প্রতিযোগীতা করাটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ১৫ পারসেন্ট ছাড় দিয়ে যদি ১০ পারসেন্টও করা হয় তাহলে আমরা তাদের সাথে প্রতিযোগীতা করতে পারব।
আমরা পরবর্তীতে যেটা চাচ্ছি সেটা হল প্রোডাক্ট ডাইভারসিফিকেশান। এরপর এখনো আমাদের যেহেতু সিদ্ধান্ত হয়নি, সিদ্ধান্ত হলে আমরা আরও ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে আসব। যেমন আমরা পিভিসি পাইপ বানানোর পরিকল্পনা করছি। এই ধরনের ভিন্ন ভিন্ন জতীয় প্রোডাক্ট নিয়ে আসা। এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড কিছু প্রোডাক্ট আমরা করব। আমাদের যে ডিসপোজেবল প্রোডাক্টগুলো আছে, সেই ডিসপোজেবল প্রোডাক্ট গুলো ইউরোপীয় দেশগুলতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে সেই মানের করতে হবে। এখন আমরা বিশ্বমানের করার চেষ্টা করছি। এটাকে আমরা আরও উন্নত মানের করেই এক্সপোর্ট করব।
এক্সেসটিং প্লানে আমাদের ডিস্পজেবল প্রোডাক্ট গুলো করা যাবে। সেই জন্য আমরা একটা ডিক্লারেশন দিয়েছি, সেটা হচ্ছে আমরা আমাদের চার তলা কনস্ট্রাকশন রয়েছে, পাচঁ তলা পযর্ন্ত করতে যাচ্ছি। পাচঁ তলার উপরে গ্রীন ইন্ডাসস্ট্রিজের জন্য ১০০কিলো ওয়াটের একটা সোলার প্যানেল বসানো হবে। এতে আমাদের যে পরিমান প্রয়োজন, সে পরিমানের বাইরে অতিরিক্তটুকু ন্যাশনাল গ্রিডে যোগ হবে, এজন্য মিটারিং থাকবে। এখান থেকে আমাদের কিছু লাভ হবে। গ্রীন ইন্ডাসস্ট্রিজ দরকার, কারণ আমরা যখন এক্সপোর্ট করবো, বাইরের বিভিন্ন সুবিধা, ফরেন ফান্ড যদি আমরা নিতে চাই, তাহলে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধরা জন্য আমাদের ইন্ডাসস্ট্রির বেশ কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকে, সেই হিসাবে আমাদের এটা সাপোর্ট দিবে। আমাদের চার তলা ভবন থেকে পাঁচ তলা করেছি এই খরচ আমরা বোনাস শেয়ার থেকে নিয়েছি। আমাদের বাইরের কোন লোন আপাতত প্রয়োজন হচ্ছে না। আমাদের এই প্রজেক্ট থেকে লাভ হলে, শোয়ার হোন্ডাররাও লাভবান হবেন। সুহৃদ ইন্ডাসস্ট্রিজ বিশ^মানের প্রেডাক্ট উৎপাদন এবং এক্সপোর্ট করারও পরিকল্পণা হাতে নিয়েছে। কোম্পানীর লাভ হলে শেয়ার হোল্ডাররাও লাভবান হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান,
চেয়ারম্যান, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড