বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন: সন্তানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চান তাছলিমা বেগম

সন্তানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ দেখতে চান শহিদ শাওনের মা তাছলিমা বেগম। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট ঢাকার ধামরাই থানাধীন বাইপাইলে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন শাওন।
সন্তান হারানোর শোকে দিশেহারা তাসলিমা বেগম বাসস’কে বলেন, ‘সন্তান হারানো অনেক বেশি কষ্টের হলেও আমরা গর্বিত যে বাংলাদেশ স্বৈারাচার মুক্ত হয়েছে। এই আন্দোলনে আমার ছেলেসহ যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই নতুন বাংলাদেশ। আমার সন্তানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই’। যাদের ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হয়েছে, তিনি বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে তাদের পরিবারের প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানান।
শাহাবুল ইসলাম শাওন। দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের কাদেরের মোড়ের মেলাপাড়া নিবাসী দিনমজুর আজাহার আলী ও তাসলিমা বেগমের পুত্র। শাওন চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয়। নিহত শাওন গাজীপুর জেলার বাইপাইল এলাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করতো।
শাওনের বড় ভাই বাদল ইসলাম ঢাকায় দিন মজুরের কাজ করেন। বাদল বলেন, আমরা খবর পাই ৪ তারিখে বিকেলে শাওনের শরীরে গুলি লেগেছে। ধামরাই থানাধীন বাইপাইলে পুলিশের গুলিতে আহত হন শাওন।  শাওনের কোমরের পেছনে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্থানীয় এক লোক শাওনকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেন। প্রথমে তাকে বাইপাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে তার পকেট থেকে মোবাইল বের করে বাবার নাম্বারে ফোন দিয়ে বলা হয়, আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাড়াতাড়ি আসেন।
বাবা আজাহার আলীর ফোন পেয়ে বাদল প্রথমে বাইপাইল শেখ হাসিনা মেডিকেলে যান। কিন্তু বাইপাইলে রাস্তায় জ্যাম থাকায় হাসপাতালে পৌঁছতে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এদিকে শেখ হাসিনা মেডিকেল থেকে শাওনকে ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। বাদল যখন শেখ হাসিনা মেডিকেল হয়ে ইসলামপুর হাসপাতালে পৌঁছান তখন রাত ৯টা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ছবি দেখালে চিকিৎসক শাওনকে শনাক্ত করেন এবং একটু আগেই শাওন মারা গেছেন বলে জানান।
শাওনের ভাই বাদল বলেন, সময়মত চিকিৎসা করাতে পারলে শাওনকে বাঁচানো যেত। ধামরাই থানায় মামলা হয় রাত ১২টায়। পরের দিন ধামরাই থানা ও পৌরসভা জ¦ালিয়ে দেওয়ার কারণে ধামরাই থানা শাওনের মরদেহ সোহরাওয়ার্দী  মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়।
শাওনের স্ত্রী শারমিন আক্তার বাসস’কে বলেন, অভাবের সংসারে দিন ভালো যাচ্ছিল না। বাসা ভাড়া, নিজেদের খরচ আর গ্রামের বাড়ির শ্বশুর শ্বাশুড়ির খরচ দিতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তাই শাওনের কাঁচামালের ব্যবসার পাশাপাশি আমি গার্মেন্টসে কাজ শুরু করি। অফিসের ভিতরে থেকে আমি খবর পাই আমার স্বামী শাওনকে গুলি করা হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে লাশ অনেক খোজাখুজি করি। বিভিন্ন জায়গায় খোজ খবর নিয়ে দেখি লাশ ইসালমপুর হাসপাতালে। মৃত্যুর ৫ দিন পরে আমরা লাশ হাতে পাই।
আড়াই বছর বয়েসী এক পুত্র সন্তান নিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা শাওনের স্ত্রী শারমিন আক্তার।
শাওনের বাবা আজাহার আলী বলেন, আমার তিন ছেলের সবাই আলাদাভাবে চলে। আমাদের বাড়ি ভিটা ছাড়া কোন জায়গা জমি নাই। শাওন মারা যাওয়ার পর এখন তার স্ত্রী ছোট বাচ্চাকে নিয়ে আমার বাড়িতেই থাকছে। নিজেরাই দিন মজুরের কাজ করে চলি। এখন নাতি আর বৌমাকে কিভাবে চালাবো। তিনি শাওনের স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। (বাসস)