মো. রহমত পাশা : মার্কেটকে সাধারণত তিন ভাবে দেখা যায়, স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী। যখন শেয়ার এর দাম বাড়ে এটা স্বল্পমেয়াদী, দীর্ঘ মেয়াদী বাজার যদি বাড়াতে হয়, তাহলে আমাদের ফান্ডামেণ্টাল কোনকিছুর পরিবর্তন হতে হবে। আমি মনে করি, কোন শেয়ার এর প্রফিট যদি ডাবল হয়ে যায়, তাহলে সেই শেয়ার এর দাম কখনো অর্ধেক হয়ে যেতে পারে না বা কমে যেতে পারেনা।
সম্প্রতি জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কারেকশন মার্কেট নিয়ে প্রত্যেকে জানি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর কিছু সার্কুলার ব্যাংকিং ইন্ডাসট্রিতে লিকুইডিটির কিছু শর্টফল বা প্রত্যাশা অণুযায়ী সাপোর্ট না আসাতে, ব্যাংকগুলো তাদের ডিপোজিট কালেকশান এর প্রতি এত মনোযোগী হয়ে যায় এবং সুদের পরিমাণ এত বাড়িয়ে দেয়, যে এখানে যারা ইনভেস্ট করে সেই সব ইনভেস্টররা বুঝে যায় তারা কোথায় রাখলে রিটার্ন বেশী পাবে, তখনি তারা শীফটিং করা শুরু করে, সেই শীফটিং থেকে ভলিউম কমে যায়।
ব্যাংকিং সেক্টর এ সবচেয়ে বেশী কারেকশান হয় গত বছর, যখন রেট বাড়ে তখন ব্যাংক এর শেয়ারগুলো বেশী বেড়েছিল, এবং এ বছর যখন হল ডিপোজিট ছাড়া লোন দেওয়া যাবে না, সবাই ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়ে দিল, এর মানে দাঁড়ালো ব্যাংক এর খরচ বেড়ে যাওয়া। খরচ বাড়লে প্রফিট বৃদ্ধিতে একটি হিট আসতেই পারে। কিন্তু যে পরিমাণ কারেকশান হয়েছে সেটা ওভার রিয়েক্ট, কারণ কেও বলেনি যে ব্যাংকিং এ খুব ক্রাইসিস চলছে।
না লিকুইডিটিতে, না ইনফ্লেশনে। সেন্ট্রাল ব্যাংক রেগুলেটরী হিসেবে যে কাজ তারা সেটাই করছে, নিয়ম এর মধ্যেই করেছে, কোন কঠিন নিয়ম করে দেয়নি। ইন্টারেস্ট রেট ৩ মাসে বাড়তে পারে, তাই বলে ৩ মাসে ১৫% ইন্টারেস্ট রেট বাড়ার কোন যৌক্তকতা নেই বলে আমি মনে করি। সেন্ট্রাল ব্যাংক এর পলিসি সাপোর্ট আসার পর থেকে মার্কেটটা আবারো সাধারণ যে গতি ছিল সেখানে ফিরে আসতে শুরু করেছে, তাই বলে এটা বলা যাবেনা যে ডাবল গতি পেয়েছে।
কারণ গত বছর দেখেছি ৭০০-৮০০ কোটি টাকা ট্রেড হয়েছে। ডাবল হলে তো ১৬০০ কোটি হওয়ার কথা, তা কিন্তু হয়নি। মার্কেটে যে পরিমাণ বিনিয়োগকারী আছে, বা মার্কেট এর যে অবস্থা তাতে ১০০০ কোটি টাকা ট্রেড হওয়ার কথা, যদি তা হতো তাহলে হয়তো মার্কেটকে স্থিতিশীল বলা যেতো। শেয়ার এর দাম বাড়ার চেয়ে ভলিয়মটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১০ সালে ৩০০০ কোটির ভলিয়মটা হয়ত বেশীই ছিল, তাই বলে আমরা কী অর্থনৈতিকভাবে এতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এই ৮ বছরে! সেটা এতো নিচেতো নামতে পারে না। ৩ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ ১০০০ কোটি আসতে পারে। তবে বাজার ১০০০ কোটি টাকা ট্রেড এর দিকে যাচ্ছে, কারণ স্ট্রাটাজিক পরিবর্তনসহ মার্কেটে নতুন প্রোডাক্ট আসবে।
শেয়ারবাজার এর সাথে সংশ্লিষ্ট কার কী করনীয় এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো, বিদেশীদের ১০% থেকে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে সেটা করা উচিত। তারা কিন্তু সুইচ করেনা, তারা বহিঃবিশ্বে ট্রিলিয়ন ডলার যদি ইনভেস্ট করতে পারে আমাদের এখানে তো করতেই পারে। যেহেতু ব্যাংকে লিমিটেশান দেওয়া থাকে, সুতরাং বিদেশী ইনভেস্টরদের আকৃষ্টসহ নতুন ভালো আইপিও আনার ব্যাপারে কাজ করতে হবে।
তাদের কাছ থেকে ভালো ভলিয়ম চাইতে গেলে তাদের পছন্দমত শেয়ার আনতে হবে। কোন কোন আইনগূলোকে তাদের অনুকূলে নিয়ে আসলে তারা এখানে এসে বিনিয়োগ করবে, সে সব আইন গূলোকে সংস্কার বা প্রয়োজনে নতুন আইন তৈরি করতে হবে, অর্থাৎ মার্কেটে ভালো শেয়ার আনাসহ বিদেশী ইনভেস্টরদের আকৃষ্ট করতে কাজ করতে হবে।
মো. রহমত পাশা
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটে।
রাসেল/