জাতীয় সম্পদ সুন্দরবন বর্তমানে সর্বোচ্চ হুমকিতে রয়েছে দাবি করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন,রামপাল বিষয়ক উদ্বেগ দূষণ ও ধ্বংসের হাত থেকে সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য বিতর্ক এড়িয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞানসম্মত অস্থান প্রকাশ করতে হবে। কারণ দেশ বিদেশের আধুনিক বিজ্ঞান ও ইউনেস্কোর পরিষ্কার গবেষণায় তথ্যসহ বলেছে, রামপাল পকল্প সুন্দরবন বিধ্বংসী হবে এবং তার ক্রমবর্ধমান প্রভাব শেষ পর্যন্ত সবটুকু বনই ধ্বংস করবে।
শনিবার ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে “সুন্দরবন ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্তঅ ও করণীয়” বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবনের ওপর অনাকাঙ্খিত অত্যাচার বন্ধের লক্ষে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নির্দষ্ট পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির আহ্বায়ক এ্যাড. সুলতানা কামাল।
সুলতান কামাল বলেন,সাম্প্রতিক বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে পশুরর নদের ভাঙ্গন। আমারা চিরায়ত নিম জানি (নদীর এপাড় ভাঙে ওপার গড়ে)। কিন্তু পশুরর নদী তার ব্যতিক্রম ঘটছে। তার দুপাড় একই সাথে বাঙছে। আর এ দৃশ্যের প্রধাণ কারণ হচ্ছে শিল্প মালিকদের শিল্প স্থাপনের জন্য যথেচ্ছ নিচু জমি ভরাট করা। এমনকি তার জমি সীমাণা ছাড়িযে আশেপাশের খাল জলাশয় ও পানি চলাচলের সকল নালায় মাটি ফেলা। প্রতিদিন জোয়ার ভাটায় পশুরর নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপ।
তিনি বলেন,আমরা জানি২০১৭ সালে ৬ আগস্ট সুন্দরবন ঘেঁষে ৩২০ টি শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নব্বই দশকের শেষের দিকে ১৮৬টি, ২০১৫ সালের পর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়প্রাপ্ত ১১৮ টি ও নতুন ১৬ টি স্থাপিত প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ১৬ টির মধ্যে আটটি এলপিজি বোতলজাতকরণ কারখানা, যা মারাত্মক দূষণকারী লাল ক্যাটাগরীভুক্ত। আর বাকি আটটি বড় বা মাঝাড়ি আকৃতির স্থাপনা।
সংগঠনটির আহ্বায়ক বলেন,বন বিধ্বংসী উন্নয়ন ও শিল্পায়ন সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক নেতিবাচক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসনের নামে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনের বাফার জোনের মাত্র চার কিলোমিটারের মধ্যে অর্থাৎ বনের পাশ ঘেঁষে রামপালে নির্মিত হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যাৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ৪০০ একর জমির মাটি ভরাট করে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে, অর্থাৎ মূল কাজের ৩ শতাংশ।
‘বিভিন্ন সূ্ত্রমতে, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জলযান চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভারতের সাথে পশুর নদীর ব্যাপক ও দীর্ঘ মেয়াদী ড্রেজিং এর চুক্তি হয়েছে। অথচ আমাদের বিশাল ও উজ্জ্বল সৌরশক্তি রয়েছে। দেশি বিদেশী বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের মহলের তথ্য-যুক্তিতে এটি আজ সু-প্রমাণিত যে, আমাদের সার্বিক জাতীয় বিদ্যুৎ বা জ্বালানী শক্তি অর্জনের জন্য জঘন্য দূষক কয়রা বা চরম বিপদজ্জনক পরমাণু বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন নেই।’
সুন্দরবন নিয়ে সরকার ভুল ব্যাক্ষা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার তথ্য প্রচার নাগরিকদের বিভ্রান্ত করছে। বন বাঁচাতে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার মাধ্যমে উজানের নদীর (গঙ্গা) থেকে বনের মধ্যে স্বাদু পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো মনিটরিং মিশন প্রদত্ত বন বিষয়ক সকল সুপারিশ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির জোর দাবি:
১/ রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সকল কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২/ সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি কর্তৃক সরকারের নিকট জমাকৃত ১৩ টি গুরুত্বরপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদন ও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির জুলাই’১৭ সভার সুপারিমের ভিত্তিতে বন রক্ষায় সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩/ উক্ত ১৩ টি গবেষণাপত্র বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারের কোন বিজ্ঞানসম্মত দ্বিমত থাকলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে তা প্রকাশ এবং সে বিষয়ে সরকার ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, উভয় পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য দিন ও সময়ের উন্মুক্ত আলোচনার জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪/ সুন্দরবনের পার্শবর্তী বা অভ্যন্তরের নির্মাণাধীন ও পরিকল্পিত ৩২০ টি ও সকল সরকারী-বেসরকারী প্রকল্প ও স্থাপনা অপসারণ, নির্মাণাধীন প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ, বরাদ্দকৃত সকল প্লট অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৫/ সুন্দরবরেন উপর আরোপিত অন্যান্য সকল অনিয়ম অত্যাচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বন বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও তাদের কাজের পরিধি, একাগ্রতা, সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
আজকের বাজার : এলকে/ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭