জেলায় অতিভারী বর্ষণ, মেঘনা নদীর তীব্র জোয়ার ও নোয়াখালী থেকে আসা বানের পানিতে নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা জুড়ে আগস্টের ১০ তারিখের পর থেকে অতিভারী বর্ষণ ও নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল গুলো অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ-র মধ্যে ২১ আগস্ট থেকে নোয়াখালী থেকে বানের পানি এসে ভয়াবহ বন্যাতে রুপান্তরিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ট, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তবে অবৈধভাবে খাল দখল, অপরিকল্পিত ব্রীজ কালভার্ট নির্মাণ, ময়লা আবর্জনা পেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। এখনও প্রায় ১ লাখ মানুষ পানি বন্দি রয়েছে, আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বেশি মানুষ। তবে জেলা সদরে কয়েকটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৪টি উপজেলা থেকে বন্যার পানি প্রায় নেমে গেছে। এদিকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করে বাসসকে বলেন, বন্যা জেলার ৫টি উপজেলায় বসবাসরত ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬২ জন মানুষের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বন্যা পানি বন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ হাজর ৬১৫ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, এতে ১৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ডুবে ২ হাজার ৭৪৬ কিলোমিটার কাঁচা, পাকা রাস্তা নষ্ট হয়ে ৩০১ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ১৯৬ টি ব্রীজ কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এতে ১৩ কোটি টাকার ক্ষতি। এদিকে কৃষি বিভাগে ৫৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিনের ফসল নষ্ট হয়ে ৬৩৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য বিভাগের ৩৭ হাজার ৭৬টি পুকুর ও জলাশয় ভেসে গেছে, এতে ২৩৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রাণি সম্পদের ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ১৩৪ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১০১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ১৩২ হেক্টর বনাঞ্চল, বনায়নে ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ১৩.৮৭ কিলোমিটার নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে ২৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এদিকে পানিতে ডুবে ১২ হাজার ৯৮৪ টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে ৩১ কোটি ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ২৯ হাজার ৩৭০টি ক্ষতিগ্রস্ত,এতে ২৯ কোটি ২১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৩টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৪০টি নৌকা ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া হ্যাচারীতে ১ হাজার ৩৭০ হেক্টরে ২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান আরও বলেন, ইতিমধ্যে বন্যা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুষমভাবে বন্টন করা হবে বলে জানান। ইতিমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া সার, বীজ ও নগদ অর্থ জেলার ৫টি উপজেলা ৬ হাজার কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। (বাসস)