লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি নামছে ধীরগতিতে, পানিবন্দি সাড়ে ৫ লাখ মানুষ

জেলায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নামছে। ফলে এখনও জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচলাখ  মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন । আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে এখনও ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আছেন। অন্যদিকে, পানিবাহিত রোগ-বালাই বাড়ছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিন থেকে ধীরগতিতে বন্যার পানি কমছে। আজ বুধবার পর্যন্ত কোথাও ১ ফুট, কোথাও ২ ফুট পানি কমেছে। তবে রামগতি ও রায়পুর উপজেলার পানি দ্রুত কমেছে।
এদিকে পানি নিষ্কাশনের গেটগুলো খোলা থাকলেও জেলার ছোট বড় খাল গুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে দখল ও ময়লা আবর্জনা ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং অপরিকল্পিত ব্রিজ কালভার্ট তৈরির কারণে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হচ্ছেনা। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে খালের বাঁধ কেটে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের  নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান জানান, নোয়াখালীর বানের পানি লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া, ডাকাতিয়া নদী, রহমত খালী, ওয়াপদা ও মহেন্দ্র খাল দিয়ে মেঘনা নদীতে চলে যায়।
পানি নিষ্কাশনের গেটগুলো খোলা আছে এবং মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচে রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে খালে বাঁধ নির্মাণ, খালের পাশে ভবন নির্মাণ, ময়লা আবর্জনা ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে পানি নিষ্কাশনে বাধা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ বাঁধ কেটে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ কবীর জানান, জেলায় বন্যায় পানিবাহিত রোগ, ডায়রিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ১৩ দিনে জেলায় ৫টি উপজেলায় ডায়রিয়া, চর্ম রোগ ও সর্পদংশনে আক্রান্ত হয়েছে একহাজার ৩১৮ জন। এরমধ্যে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৭৮৭ জন মানুষ। তার মধ্যে বেশিরভাগ শিশু। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৬৪টি মেডিকেল টিম নিরলসভাবে কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জেপি দেওয়ান বলেন, জেলায় বন্যা বর্তমানে ৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়েছে আছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখনও ২৫ হাজারের বেশি মানুষ আছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, বন্যা কবলিত এলাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও পানিবন্দিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, স্বেচ্ছাসেবী এবং বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ও এনজিও গুলো পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)বন্যার কারণে বিভিন্ন বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে জানান, ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং এতে প্রায় চারশ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুকুর-দিঘিসহ ৮ হাজার ৫৬২ টি জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। প্রাণিসম্পদে অবকাঠামো ও খাদ্য বিনষ্টসহ খামারি-গৃহস্থদের পশুপাখির মৃত্যু হয়েছে। এতে প্রায় ৮ কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের ৩২ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়েছে এবং এতে প্রায় একশ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  এছাড়াও, গ্রামীণ জনপদের ২৯ কিলোমিটার সলিং ও কাচা রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৪৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। (বাসস)