মৎস্য পাথর ধান আর গানের জনপদ সুনামগঞ্জে নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে ওঠার পাশাপাশি পর্যটকের আগমনও বেড়ে গেছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের বৃহস্পতি থেকে রোববার পর্যন্ত চারদিনের সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি পাওয়ায় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সুনামগঞ্জের পর্যটন স্পটগুলোতে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়।
এ সুযোগে,কোথাও পর্যটকরদের সাথে কেউ কোন ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিলে অথবা ভোক্তা হিসেবে কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে পর্যটকবাহী হাউসবোট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। তিনি বলেছেন পর্যটকবাহী হাউসবোটের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে, ওই বোটকে চলতে দেওয়া হবে না টাঙ্গুয়ায়।
টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা পর্যটকদের প্রধান বাহন হাউসবোট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ায় চলাচলকারী হাসনতরী,জলছবি, রঙ্গিলা বাড়ই,হাওরের সুলতান, রূপকথা, সিন্দাবাদ তরী, মায়াবতী, নবাব দা হাওরভিলা, জলেরগান, জলনিয়াবাস গাংচিল সহ ১০০ টি হাউসবোট ও ছোট বড় প্রায় ২০০ পর্যটকবাহী বোটের সবগুলোই বুকিং হয়ে গেছে। নতুন করে কেউ চাইলেও এইসময়ে হাউসবোট বুকিং দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তারা।
রাজধানীর ঢাকার বারিধারা থেকে আসা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নুরুল আমিন,পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এসেছেন সুনামগঞ্জ শহরে। বললেন, একসঙ্গে ৩০ জন মিলে হাউসবোট মালিকের সাথে আগে থেকেই কথা বলে রেখেছেন তারা। দুই দিন-দুই রাত টাঙ্গুয়ার হাওর এবং আশপাশের শহীদ সিরাজ লেক ঘুরবেন তারা। খাওয়া-দাওয়াসহ সবকিছুই হাউসবোটের দায়িত্ব। সেভাবেই প্যাকেজে কথা বলেছেন তারা।
বৈষ্ণব কবি রাধারমণ, মরমি কবি হাসন রাজা, গানের স¤্রাট বাউল কবি কামাল পাশা,জ্ঞানের সাগর দূর্বীণ শাহ ও বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমসহ অসংখ্য সাধকের জন্মস্থান সুনামগঞ্জ। টাঙ্গুয়ার হাওর, লাউড়ের গড়, শহীদ সিরাজ লেক,হাসন রাজার বাড়ি,বারেকের টিলা,শিমুলবাগান,টেকেরঘাট-বাঁশতলা-মহেষখলা স্বাধীনতা উপত্যকা, পণতীর্থ, শাহ আরেফিনের মাজার,বাচ্চু টিলা ও ডলুরা ৪৮ শহীদের সমাধিস্থলসহ ভারত সীমান্তের বিভিন্ন পাহাড়ি লেক ঘুরে দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছেন পর্যটকরা।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের সমম্মেলন কক্ষে ভোক্তা অধিকারের সেমিনারে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম শেফু বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পর্যটকরা এখানে এসে হাউসবোট ব্যবসায়ীসহ পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভালো আচরণ পাচ্ছেন না। এমন অভিযোগ প্রায়ই শুনছেন তারা। অনলাইনে বুকিং নেবার সময় হাউসবোট মালিকগুলো যে অফার দিচ্ছে, বাস্তবে সেভাবে সেবা দিচ্ছে না। বুকিংয়ের সময় খাবারের যে ম্যানু’র তালিকা পর্যটকদের দেওয়া হয়। পরিবেশনের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। বোটে যেসব সুবিধার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়, বাস্তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি থাকে না। পর্যটকরা এখানে আসার জন্য হাউসবোট বুকিং দিয়ে কোন কারণে না আসতে পারলে, বুকিং ক্যান্সেল করলেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই শুনা যায়। এই বিষয়ে তারা কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে সভায় জানান তিনি। সভায় উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করার দাবী জানিয়ে বলেন,অন্যথায় জেলার বড় একটি শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পর্যটন উদ্যোক্তা ‘হাছনতরী’ এর স্বত্বাধিকারী অধ্যক্ষ শেরগুল আহমদ বলেন, পূজার ছুটিতে জমে উঠেছে টাঙ্গুয়ার হাওরভিত্তিক পর্যটন। গেল চারদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে হাওরে পানি ভরপুর থাকায় পর্যটকরাও পূজার ৪ দিনের ছুটি উপভোগে বেছে নিয়েছেন টাঙ্গুয়ার হাওরকেই। আমাদের হাউজবোটের প্রতি কোন পর্যটক যাতে অসন্তুষ্ট না হন, সেটি আমরা ঠিকমত দেখভাল করছি। তিনি বলেন,পর্যটকদের অধিকার রক্ষায় প্রশাসন,মালিক সংগঠন ও উদ্যোক্তারা মিলে সম্মিলিতভাবে একটি টেকসই শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণে যাতে কোন প্রতিবন্ধকতা না হয়,পলিথিন ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলে কেউ যাতে হাওরের সৌন্দর্য্য নষ্ট না করতে পারে সর্বোপরী কোনভাবেই পর্যটকরা যাতে কোন হয়রানির শিকার না হন এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে হাউসবোট মালিক ও শ্রমিকরা তাদের ব্যবসা করবেন। তিনি আরো বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে কতগুলো হাউসবোট বা নৌকা চলবে, কীভাবে চলবে, কোন কোন এলাকা দিয়ে চলতে পারবে, কোন এলাকা দিয়ে চলতে পারবে না, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে এসব বিষয়ে শীঘ্রই নতুন করে নীতিমালা তৈরি করা হবে। আলাদা সভা করে এই নিয়ে আলোচনা হবে। জেলা প্রশাসনের বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের হাওরে চলতে দেওয়া হবে না।(বাসস)