এম.এম. মোস্তফা বিলাল:
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানিতে আমি কাজ শুরু করেছি এপ্রিল মাসে। এনবিএফআই সেক্টরে আমার এটা নতুন চাকরি, নতুন অ্যাসাইনমেন্ট। ওভার অল ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে বর্তমান আমাদের গ্রোথটা একটু কম। বিভিন্ন লেন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখেমুখি হচ্ছি। ব্যবসায়িক কার্যক্রম সেভাবে হচ্ছে না। আরেকটা বিষয় ব্যাংকের সাথে কমপিটিশন করতে হচ্ছে। ব্যাংক মনে করে যে তাদের কস্ট অব ফান্ড অনেক কম এবং এনবিএফগুলোতে অনেক সময় ব্যাংক থেকে বড় অংকের টাকা এনে ইনভেস্ট করতে হচ্ছে বা লোন দিতে হচ্ছে। তো একই ব্যবসায় ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এখানে তাদের একসেস টু ডিপোজিট অনেক বেশি। তাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট আছে। যেখানে কোনো ইন্টারেস্ট দিতে হয় না। সেভিংস অ্যাকাউন্ট আছে। তারা স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট মোবিলাইজড করতে পারে। এখানে তারা অনেক লো কস্ট অ্যাকাউন্ট করতে পারে। কিন্তু আমরা টার্ম ডিপোজিট ছাড়া আর কোন ডিপোজিট নিতে পারি না। আমাদের ক্যাশ ট্র্যানজেকশনের কোন ব্যবস্থা নেই। পৃথিবীর অনেক দেশে এনবিএফআইও ক্যাশ ট্র্যানজেকশন করতে পারে। আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। ফলে আমাদের খরচ বেশি পড়ে যায়।
একই সেক্টরে আমাদের কিন্তু কমপিটিশন করতে হয়। ব্যাংক যেমন কাস্টমারকে লোন দেয় আমরাও কিন্তু তাদের লোন দিই বা ফাইন্যান্স করি। এখন দেখা হচ্ছে যে, আমাদের প্রসেসটাকে যেন একটু দ্রুত করার চেষ্টা করি। অ্যাপ্রোভাল প্রসেস, ডিসবার্স প্রসেস দ্রুততার সঙ্গে করে দিই যাতে গ্রাহকের প্রয়োজনটা তাড়াতাড়ি পূরণ হয়। সেক্ষেত্রে যেখানে ব্যাংকে কাস্টমারের প্রসেসটা একটু লেনদি হয়। যারা এই দীর্ঘ প্রসেসটা এড়াতে চায়, যাদের ফান্ডটা তাড়াতাড়ি দরকার পড়ে, সেই ধরনের কায়েন্টকে আমরা বেশি এন্টারটেইন করি। আমরা এখন চেষ্টা করছি আমাদের পাবলিক ডিপোজিট বেইজটা বাড়ানোর জন্য, ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রেও আমরা নতুন নতুন অ্যাভিনিউ বের করার চেষ্টা করছি।
আমরা এসএমই, রিটেইল, এ রকম বিভিন্ন নতুন নতুন আইটেম বের করার চেষ্টা করছি এবং ফাইন্যান্স করছি। আমরা রিটেইল বা এসএমইতে যাওয়ার চেষ্টা করছি কারণ এক্ষেত্রে কস্ট অব ফান্ড কম। যেখানে কাস্টমারের রেট সেন্সিটিভ কম, যাদেরকে আমরা এডিশনাল চার্জ করতে পারি। আরেকটা আমরা চেষ্টা করি যে টোটাল লোন এবং ডিসবার্স যতটা সম্ভব শর্টলি করার চেষ্টা করি, যাতে করে তাদের প্রয়োজন মিটে। ব্যাংকের তুলনায় খরচ একটু বেশি হলেও তাদের আনা সম্ভব হয়। কারণ আমরা তাড়াতাড়ি তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারছি। তখন সে কিন্তু আমাদের কাছে আসে। আরেকটা আমরা চেষ্টা করি যেগুলো অন্য লোন,নরমাল লোন আনার জন্য চেষ্টা করছি । আমাদের অন্যতম একটা দিক হচ্ছে, ইক্যুইটি মার্কেট বা শেয়ার বাজার যেখানে তারা লিস্টেড হয়ে লাভবান হচ্ছে। আমরা এরকম নতুন নতুন প্রসেস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এ রকম কিছু নতুন নতুন পদ্ধতিকে চিহ্নিত করে আমরা আমাদের ব্যবসা এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। যারা অনেক বড় গ্রুপ খুব সহজেই ফাইন্যানশিয়াল প্রসেস ব্যাংকের কাছে সাবমিট করতে পারে তারা কিন্তু আমাদের টার্গেট কাস্টমার না। কারণ তাদের আমরা ব্যাংকের সাথে তুলনা করে এ্যাকাউটেন্ডড করে রাখতে পারব না। যার জন্য আমাদের টার্গেট কাস্টমার হচ্ছে এসএমই, রিটেইল বা যারা একটু লেস সেন্সিটিভ তাদের আমরা ফোকাস করি ।
২০১০ সালের পর থেকে আমাদের ক্যাপিটাল মাকের্টের অবস্থা খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। তাছাড়া ২০১০-এ যারা কোনো ফান্ডে ইনভেস্ট করেছিল, তাদের ফান্ডটা আটকে আছে। এনবিএফাআইগুলোতেও তাদের ফান্ড আটকে আছে। এখন এনবিএফআইয়ের ফান্ড ক্যাপাসিটি তো কম। আর ডিপোজিটের ব্যাপারেও তো রেসটিকশন আছে। এখন তো বাংলাদেশ ব্যাংকেরও একটা সার্কুলার আছে যে, ইক্যুইটির একটা অংশ আপনি ক্যাপিটাল মার্কেটে ইনভেস্ট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কারো যদি ১০০ কোটি টাকা থাকে তাহলে সে ২৫ কোটি ইনভেস্ট করতে পারবে। এখন দেখা যাচ্ছে যে ২০১০ সালে সে যা ইনভেস্ট করে রেখেছে এখন আর তার বাড়ানোর মতো শক্তি নেই , আবার অনেকের হয়তো লিমিট পড়ে গেছে যেটাকে আরও কমিয়ে আনতে হবে।
যদিও আমার ক্যারিয়ার ব্যাংকার হিসাবে শুরু করেছি তারপর আমি দীর্ঘ দিন ক্যাপিটাল মাকের্টেও সাথে সম্পৃক্ত ছিলামএ। সেখানে আমি ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছি। এখন আমি এনবিএফআইতে ডিএমডি হিসাবে কাজ করছি। এটা আমার জন্য একটা নতুন ক্ষেত্র।
আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট ২০১০ সালের পর থেকে কঠিন সময় পার করেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মার্কেটের গতি আসছে এবং আমরা যদি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর -অক্টোবরের কথা বলি তাহলে তিন-চার মাসের একটা ভালো মুভমেন্ট বা পার্টিসিপেশন ছিল। তখন আমরা আশা করেছিলাম যে, এই গতিটা থাকবে। পরে দুঃখজনক ভাবে ২০১৭ এর এপ্রিল থেকে মার্কেট স্লো হয়ে যায়, টার্নওভার কমে আসে। আবার যদি লক্ষ্য করেন জুনের মধ্য সময় থেকে মার্কেট গতি ফিরে পেয়েছে এবং এই গতি অব্যাহত থাকবে আমরা আশা করছি।
আরেকটা পজিটিভ দিক হচ্ছে যে, ২০১০ থেকে ১০১৬ এর ডাটাগুলোকে রিভিউ করলে দেখা যায়, এ সময় অনেক ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এসেছে আমাদের এই ক্যাপিটাল মার্কেটে। তো এটা আমাদের মার্কেটের জন্য ভালো দিক যে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আসছে। এর প্রভাবে লোকাল ইনভেস্টররাও এগিয়ে আসবে। আবার আমাদের দেশে একটা সমস্যা হচ্ছে, মাঝে মাঝে বড় ইনভেস্টররা কেমন যেন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তখন ২-৩ মাস একটা গতি পেলো আবার হঠাৎ করে ধীর হয়ে গেলো। নিষ্ক্রিয় হওয়ার দুটো কারণ থাকতে পারে, একটা তাদের ইনভেস্টেবল ফান্ডের অভাব। দ্বিতীয়ত তারা রিজনেবল প্রফিট নিয়ে নিয়েছে। এর পর কিছু দিন দেখে মার্কেট আরেকটা প্রাইজ লেভেল আসার জন্য অপেক্ষা করতে পারে। তখন আবার নতুন করে ইনভেস্ট করে। আবার আমাদের অন্য চিত্রে দেখা যায় যে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মার্কেট যখন বাড়তে থাকে তখন আসে। আবার মার্কেট যখন কমতে থাকে, স্লো বা স্টে থাকে তখন তারা মার্কেটে পার্টিসিপেট বা অ্যাকটিভিটি করেন না। যেমন আমাদের এখন ব্যাংকিং সেক্টরে ডিপোজিট এবং লেনদেনের রেট দুটোই কিন্তু অনেক কমে এসেছে। একসময় ডিপোজিটি ছিল ১৪-১৫%। এখন সেটা ৫-৬% এ চলে এসেছে। লেনডিং ছিল ১৮-২০% এখন সেটা ৮-৯% এ চলে আসছে। এখন অনেক ব্যাংক অনেক করর্পোরেট হাউজকে লেনডিং করছে ৮-৬% সুদে। তো যখনি কোন ইকোনোমি বা ইন্ড্রাষ্টিতে ইনটারেস্ট কমে যাবে, তখন কিন্তু ক্যাপিটাল মার্কেটে ফান্ড আসবার কথা। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে, বিদেশী ইনভেস্টররা আমাদের এখানে আসছে তার মানে কি? বিদেশী ইনভেস্টররা কিন্তু অনেক রিসার্স ও এনালাইজড করে ইনভেস্ট করে। তারা বাংলাদেশ মার্কেটটাকে পটেনশিয়াল মনে করছে বলেই তারা আসছে। তাছাড়া আমাদের ডিপোজিট প্রোডাক্ট এবং লেনডিং প্রোডাক্ট দুটোতেই আমাদের কিছু নতুনত্ব আনতে হবে। যার যার মতো করে সে তার প্রডাক্টে নতুনত্ব আনবে। তারপর আমাদের টোটাল লোন প্রসেজিং টাইমটাকে কমিয়ে আনতে হবে। যাদের একসেস টু ক্রেডিট কম তাদেরকে টার্গেট করতে হবে। আমাদের ফান্ড সোর্স হিসাবে আমরা যেমন বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন বা ক্রেডিট নিচ্ছি, এটার উপর থেকেও নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। আমি যদি আমার প্রতিযোগীর কাছ থেকে ফান্ড নিই, তাহলে তো আমি তাদের সঙ্গে কমপিটিশনে পেরে উঠব না। সেজন্য আমাকে পাবলিক ডিপোজিটের উপর নির্ভর করতে হবে। এরকম ডিপোজিটের বেইজ আমাকে বাড়াতে হবে। ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ও নেটওর্য়াক বেশি থাকার কারণে তারা সার্ভিসটা বেশি দিতে পারছে। সে ক্ষেত্রে ফাইন্যাান্স কোম্পানিগুলোকে ব্যাংকের তুলনায় কিছুটা ইন্টারেস্ট রেট বেশি দিতে হবে। তাহলে পাবলিক ডিপোজিট ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আসবে। একটা উদাহরণ দিয়ে বলছি, আমি যদি একটা ব্যাংক থেকে ৮% ফান্ড নিই এবং সেটা পাবলিককে বিতরন করি, তাহলে ব্যাংকের মতই ৫-৬ শতাংশ হারে দিতে হবে। আর যদি ব্যাংক থেকে না নিয়ে পাবলিক থেকে নিই, তখন আমি পাবলিককে ডিরেক্ট ২-৩% বেশি দিতে পারি। তাহলে আমার পাবলিক ডিপোজিট বেজটা বাড়ছে। এখন আমরা কি করছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংক ৫-৬% নিচ্ছে সে তার ২-৩% লাভ রেখে আমাকে দিচ্ছে। তাহলে আমি কিন্তু ৮ সাড়ে ৮ শতাংশ রেটে ব্যাংক থেকেই নিচ্ছি।
আমার কথা হচ্ছে, ২-৩% আমি ব্যাংককে না দিয়ে যদি পাবলিককে দেই, তাহলে পাবলিকও আমাদের কাছে ডিপোজিট করবে এবং তারা খুশি হবে। যেমন সে তার বাসার কাছে ডিপোজিট করলে হয়তো ৫% পাবে, একটু কষ্ট করে আমাদের কাছে আসলে আরো ৩% বেশি পাবে বা ৮% পাচ্ছে।
আসলে প্রথম থেকেই আমাদের প্রতিষ্ঠান ভাল ব্যবসা করে আসছে। আমি রিসেন্টলি জয়েন করেছি। আমরা যেটা ফোকাস করেছি, সেটা হলো আমরা সার্ভিসটা স্পেশাল করে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। স্বল্প সময়ে লোন প্রসেসটা দ্রুত সম্ভব করছি, মানে এইখানে লিড টাইমটাকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যেখানে একটা লোন পেতে ব্যাংকে ১ থেকে দেড় মাস সময় লেগে যায় আমরা সেটাকে ১ সপ্তাহ বা ১০ দিনে করার চেষ্টা করছি।
এম.এম. মোস্তফা বিলাল
উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড-বিআইএফসি