জোবায়ের হোসেন : আমাদের পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনতে ডিএসই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার খুঁজছিলো। এ বিষয়ে তারা দরপত্র আহ্বান করেনি ঠিকই, তবে তারা বাজার সংশ্লিষ্টদের সাথে নেগোসিয়েশন করার চেষ্টা করছিলো। দেশি-বিদেশি নানা কোম্পানি আমাদের বাজারে ঢুকার সুযোগ খুঁজছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ডিএসই চীনের সাংহাই, সেনজেনকে দেশের পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করতে যাচ্ছে। ডিএসই বোর্ড এটিকে অনুমোদন দিয়ে বিএসইসির অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। যা বর্তমানে অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের টোটাল স্টক হোল্ডাররাও এ সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমরা থাকি অর্থাৎ আমাদের মাধ্যমে তারা মার্কেটে আসেন। তাই দিনশেষে কিন্তু সিকিউরিটিজ হাউজ বলেন কিংবা ব্রোকার হাউজ বলেন, এগুলেই তাদের পাশে থাকেন। রেগুলেটর পর্যন্ত তারা যেতে পারেননা।
দেশের পুঁজিবাজার ২০১০ সালের পরে অনেক চড়াই উতরাই পার করেছে। আশার কথা এই যে, এখন ধীরে ধীরে সে অবস্থার উত্তরণ করছে। রেগুলেটরদের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণেই এটি পরিবর্তন হয়েছে। এখনও অবধি আমরা তার সুফল পায়নি, কিন্তু সেই পরিবর্তন গুলোকে আমরা ধারণ করতে পারলেই আগামি ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে আমাদের বাজার ভালো অবস্থানে যাবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এখন প্রয়োজন সে অনুযায়ী কাজ করা। এ বিষয়ে সরকার বা নীতিনির্ধারণী সংস্থা গুলো ২০২১ বা ২০৩০ কে টার্গেট করে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
এখানে মূল বিষয় হলো পরিকল্পনা আর সমন্বয়। এ দুটোর সমন্বয়ে বাজারকে এগিয়ে নেয়া গেলে এ বাজার অনেকদূর পর্যন্ত যাবে। একইসাথে বাজারে স্থিতিশীলতাও বাড়বে।
সাংহাই আর সেনজেন এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের বাজারে সম্পৃক্ত হয়েছে। তাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আর অংশগ্রহণ এই তিনটা বিষয়কে সম্পৃক্ত করে কাজ করতে হবে। দেশের বাইরের যে কোম্পানিগুলো দরপত্র জমা দিয়েছে গণমাধ্যমে দেখেছি ডিএসই কর্তৃপক্ষ দুটি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়ার জন্য অথরিটির কাছে ফরোয়ার্ড করেছে। অন্য একটি কোম্পানি অনুমোদনের সুপারিশ পায়নি। বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছি। তবে যে দুটি স্টক কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আমরা তাদের বিষয়ে আশাবাদী।
এক্ষেত্রে সুশাসন মেনে চলতে হবে। সমন্বয়হীনতা থাকা চলবে না। তারা টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য যে পরিমাণ বিনিয়োগ করবেন বলে বলছেন, তারা দশ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন। আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে এরা কি ভূমিকা রাখবে সে মূল্যায়ন করার সময় এখনও আসেনি। আগামী ৬ মাস বা ১ বছর পরেই সেটা মূল্যায়ন করা যাবে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে আমি বলব-যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতেই হয়, তাহলে কমপক্ষে এক বছরের জন্য করুন। কারণ এ বাজারে একদিন দুদিনে বা রাতারাতি টাকা দ্বিগুন তিনগুন করে লাভবান হওয়া যায়না। এটা অনেকটা ব্যাংকের এফডিআর বা ফিক্সড ডিপোজিট রাখার মত। অর্থাৎ অনেকটা মেয়াদী আমানতের মতো।
কেউ যদি ভালো শেয়ার পছন্দ করতে সমর্থ হয় অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী যদি ভালো শেয়ার নির্বাচন করতে পারেন, সেক্ষেত্রে দুই বছরে একটা শেয়ারে ৫০ শতাংশ বা শতভাগ লাভ করা যেতে পারে। আসলে এ মার্কেটে দীর্ঘ বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নাই।
ডে ট্রেডারের ভূমিকায় যারা আছেন তাদেরকে আমি অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। কারণ ডে ট্রেডাররাই আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন। তাদের কমিশনের টাকাতেই আমাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। সেজন্যই তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, ট্রেড করতে গিয়ে পুঁজি হারিয়ে ফেলবেন না।
শেয়ার ক্রয়ের পূর্বে বোর্ড অব ডিরেক্টর, ইপিএস, মৌলভিত্তি, ডিভিডেন্ড প্যাটার্ন দেখেই বিনিয়োগ করবেন। যেসব কোম্পানির নিয়মিত গ্রোথ আছে, ডিভিডেন্ড দেয় সেগুলো ক্রয় করবেন। অনেক কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মধ্যে দ্বন্ধ থাকে। অনেক কোম্পানির অডিট রিপোর্ট ঘষামাজা করা হয় সেগুলোর বিষয়ে চোখকান খোলা রেখে বিনিয়োগ করবেন।
এক্ষেত্রে যদি বুঝতে না পারেন, তবে বাজারে অসংখ্য মার্চেন্ট ব্যাংক আছে বা বাজার সম্পর্কে যারা অভিজ্ঞ তাদের সঙ্গে বিনিয়োগ করার বিষয়টা শেয়ার করে নেবেন।
চলতি বছরটা নির্বাচনের বছর। এ সময় বাজার ভালো হবে বলেই আশা করি একথা ঠিক, তবে এ সময় বাজারে অস্থিরতাও তৈরি হতে পারে। কারণ এখানে মানি মার্কেট সম্পৃক্ত। তাই নির্বাচনের বছরে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা জরুরি।
জোবায়ের হোসেন
সিইও (চলতি দায়িত্ব), স্টারলিং স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড