অঙ্গীকারনামা দিয়ে পার পেল রবি

ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব পরিশোধের অঙ্গীকারনামা দিয়ে প্রথমবারের মতো পার পেল বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড। আজ বৃহস্পতিবার সরকারি পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকারনামা দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে সব ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট।

এর আগে সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিউ)-মূসক এর কমিশনার মো. মতিউর রহমান এর সই করা চিঠি দেওয়া হয়। এর আগে সকালে এলটিইউ এর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রবির ব্যাংক হিসাব জব্দে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

সকল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বৃহৎ করদাতা ইউনিট, মূসক দপ্তরের উক্ত পত্রের মাধ্যমে রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য (ফ্রিজ) করার জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়। অত:পর প্রতিষ্ঠান এ মর্মে অঙ্গিকারনামা দেন যে, অবলিম্বে সরকারি পাওনা পরিশোধ করবে। এমতাবস্থায়, প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব পরিচালনযোগ্য (আনফ্রিজ) করার অনুরোধ করা হলো।

এর আগে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) রনি থমি সই করা একটি অঙ্গিকারনামার চিঠি এলটিইউ কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে এলটিইউ কমিশনার মো. মতিউর রহমান অর্থসূচককে বলেন, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সিইও আমাকে বিদেশ থেকে এসএমএস করেছেন এলটিইউ এর যে রাজস্ব পাওনা রয়েছে তা দ্রুতই সমধান করা হবে। এছাড়া সিএফও আমাকে চিঠি পাঠিয়েছেন আজকে ব্যাংক হিসাব খুলে দিলে রোববার টাকা দিয়ে দেবেন। বাকি যে রাজস্ব রয়েছে যেগুলোর জন্য মামলা হয়নি সে টাকাগুলো দ্রুত দিয়ে দেবেন। তাদের কথার ওপর আস্থা রেখেই আমরা তাদের ব্যাংক হিসাব যে অপরিচালনযোগ্য (ফ্রিজ) করেছিলাম তা আজ পরিচালনযোগ্য (আনফ্রিজ) করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আশা করি রবি তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রোববার সরকারি পাওনা পরিশোধ করে, পরবর্তী পাওনা যদি সঠিকভাবে দিয়ে দেয় তাহলে রবি আইন অনুযায়ী যে সাপোর্ট পাওয়ার তা তারা পাবে। আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাহলে আমরা আবার শক্ত অবস্থান নেব।

রাজস্ব পাওনা আদায়ে রবির ব্যাংক হিসাব জব্দ অন্য কোম্পানিগুলোর জন্য সর্তক সংকেত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দের একই প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে আমরা দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করেছি। একটি থেকে ৩০ ও অপরটি থেকে ২০ কোটি টাকা আদায় করেছি। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এলটিইউতে যতগুলো কোম্পানি রয়েছে বা থাকবে তাদের প্রতি এলটিইউ এর প্রতিশ্রুতি হলো, আমরা সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের সার্ভিস দেব।

তিনি বলেন, তাদের যদি কোনো আইনগত ব্যাখ্যা লাগে তাহলে আমাদের কাছে আসলে আইনগত ব্যাখ্যা দেব। ট্রেনিং লাগলে ট্রেনিং দেব। সব ধরনের সহযোগিতা দেব, কিন্তু আমাদের একটাই দাবি সরকারের যে পাওনা আছে সঠিকভাবে দেবেন। না দিলে এলটিইউ এর পক্ষ থেকে ছাড় দেব না।

এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৩২ টাকা ৭০ পয়সা মূসক ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে এনবিআর রবির ব্যাংক হিসাব তিন কার্যদিবসের জন্য জব্দ রাখতে দেশের সব ব্যাংককে চিঠি পাঠায়। এই চিঠি ও সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান চ্যালেঞ্জ করে ২৭ ফেব্রুয়ারি রিট করে রবি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেওয়ার পাশাপাশি ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

এতে স্থগিতাদেশ চেয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আজ আবেদনের ওপর শুনানি হয়।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা এক আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান। রবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজিব-উল-উল আলম।

 

আজকের বাজার/এমকে