অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

সানজিদা আক্তার খানমঃ বর্তমান সময়ে অণলাইন ব্যবসা আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন গ্রাহকের হাতে। ফলে গ্রাহকদের অনেক সময় বেচে যাচ্ছে। ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। পছন্দের পণ্যটাও পেয়ে যাচ্ছেন চাওয়া মাত্র। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ব্যবসা নতুন হলেও ইতিমধ্যে সারাদেশে এর প্রসার হয়েছে। এর মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি গৃহিণীরাও এগিয়ে আসছেন। ফলে অনলাইন মার্কেটিংয়ে দেখা দিয়েছে অমিত সম্ভাবনা। আর এই সম্ভাবনাময় খাতের নানা সমস্যা, সম্ভাবনা, ভালো-মন্দ বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে দেশের প্রতিথযশা অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাইট চয়েজ ডট কম ডট বিডি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানজিদা আক্তার খানম ও পরিচালন প্রধান কে এম মহিদুল হক পলাশের সংগে আজকের বাজারের আলাপচারিতায়।

বর্তমান অনলাইন বাজারের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সানজিদা আক্তার খানম জানান, রাইটচয়েজ প্রায় তিন বছরের একটা প্রতিষ্ঠান। শুরুর দিকে বেশি সাড়া না পেলেও এখন আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ভালো। আসলে মানুষের প্রয়োজনের জন্যই এখন এই ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমান যান্ত্রিক সমাজে সবাই ব্যাস্ত। অনেকের হাতেই বাড়তি সময় নেই যে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করবে। যদিও সামান্য সময় পাওয়া যায় তাও আবার যানজটে শেষ হয়ে যায়। আর এজন্য অনলাইন মার্কেট দিনদিন প্রসার লাভ করছে। যেভাবে মানুষ এর উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে অনলাইন মার্কেট আরো জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আমি মনে করি।

বিভিন্ন উৎসবে অনলাইন মার্কেটের সাড়া সম্পর্কে সানজিদা আকতার খানম বলেন, আসলে আমাদের দেশে তো উৎসব পার্বণ উদযাপন কেনাকাট ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সে সময় আমাদেরও আয়োজন থাকে আলাদা করে। বিভিন্ন উৎসবে আলাদা ধরণের পণ্য, পোষাক আমরা নিয়ে আসি। গ্রাহকদের চাহিদাও সেরকম থাকে। গত ঈদে তো আমাদের নিজস্ব সার্ভিস ম্যান বাড়াতে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের হোম ডেকরের চাহিদা তখন বেড়ে যায়। উৎসবের সময় আমাদের বিক্রি বেড়ে যায়, তখন আমাদের দম ফেলার সময় থাকে না।

অনলাইন গ্রাহকের কোন ধরনের পন্যের প্রতি আগ্রহ বেশি, সে সম্পর্কে রাইট চয়েজের হেড অব অপারেশন কে এম মহিদুল হক পলাশ বলেন, অনলাইনে কেনাকাটার জন্য মানুষের অভ্যাস এখন পরিবর্তন হয়েছে। এখন সবাই এ ধরনের কেনাকাটায় আগ্রহী, যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা শুধু ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই আমাদের পণ্য সাজাই।

বিভিন্ন উৎসবকেন্দ্রীক জামাকাপড়ের চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। তখন আমাদের সেটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়। আমরা বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরণের পণ্য নিয়ে এসেছি, এগুলোতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। শুধু কাপড় চোপড় আছে তা কিন্ত না, বর্তমানে আপনি অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের পণ্যই পাবেন।

নারীদের সেবা প্রদান সম্পর্কে সানজিদা আকতার খানম জানান, আমাদের এখানে মেয়েদের জামাকাপড়, কসমেটিকস্, জুয়েলারিসহ প্রায় সব ধরণের পণ্যই পাওয়া যায়। এর প্রায় সবগুলোর গুণগত মান আমরা নিশ্চিত করি। আমদানি করা কসমেটিকসের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে নিজে ব্যাবহার করে মান যাচাই করি। তারপর সেগুলোকে অনলাইনে বিক্রি করি।

প্রডাক্টের কোয়ালিটি সম্পর্কে পলাশ বলেন, আমাদের মূল কথাই হলো কাস্টমারের সন্তুষ্টি। এটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান সময়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করা বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। অন্যদের সাথে আমাদের পার্থক্যটা এখানে। আসলে আমরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারি দিয়ে থাকি। আজ পর্যন্ত আমাদের এমন কোন রেকর্ড নেই যে, আমরা সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হয়েছি। ঢাকার বাইরে কুরিয়ারে পাঠাতে হয়, সেখানেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সার্ভিস নিশ্চিত করি। আর যেটা না বললে নয়, সেটা হলো আমাদের ডেলিভারি চার্জও কম।

এ ব্যাপরে সানজিদা আক্তার খানম জানান, আমাদের প্রাইভেট কুরিয়ার সার্ভিসের অবস্থা খুবই খারাপ। তারা সেভাবে পণ্যের ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারে না। এ জন্য অনেক সময় ক্রেতারা তাদের পণ্য সময়মতো রিসিভ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে পণ্যটা আমাদের কাছে ফিরে আসে। এতে করে আমাদের বদনাম হয়। এজন্য আমরা এখন আমাদের নিজস্ব সার্ভিস ম্যান রেখেছি। যাতে ক্রেতারা তাদের পণ্য সময়মতো পায়।

পলাশ বলেন, কাষ্টমারের চাহিদা মতোই আমরা পণ্য ডেলিভারি দেই। এর আগে আমরা নিশ্চিত হই পন্যের কোয়ালিটির উপর। যদি দেখি যে, পণ্যের মাণ নিয়ে আমরা নিজেরা সন্তুষ্ট না, তখন আমরা পণ্য ডেলিভারি করি না।

সানজিদা বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ছবির সাথে পণ্যের কোন মিল থাকে না। এতে করে কাষ্টমার প্রতারিত হন। তারা ছবি দেখে যে পণ্য অর্ডার করেন, সাপ্লাইয়ের পর দেখা গেল ছবির সাথে পণ্য ঠিক হয় না। তখন একটা কনফ্লিক্ট তৈরি হয়। এজন্য আমরা খুবই সতর্ক আছি। অনেকে এমন করার ফলে আসলে অণলাইন ব্যবসায় একটা খারাপ প্রভাব পড়ছে। তাদের জন্য আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।

ব্রান্ড বা নন ব্রান্ডের পণ্য সম্পর্কে তারা বলেন, আসলে আমরা ব্যাপারটা ব্রান্ড বা নন ব্রান্ড হিসেবে দেখছি না। পণ্যের মাণ ও ক্রেতার চাহিদা অনুসারে তাদের সন্তুষ্টিকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আর ব্রান্ডের কথা বলতে গেলে আমাদের প্রায় ৩০০-৪০০ মার্চেন্ট বা ব্রান্ড রয়েছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদকদের সাথে আমাদের ভালো একটা সম্পর্ক আছে, যার মাধ্যমে তাদের সবচেয়ে ভালো পণ্যগুলো আমার ক্রেতার কাছে তুলে দিতে পারছি।

ভবিষ্যতে অনলাইনে একই ছাদের নিচে সব পণ্য পাওয়া যাবে কি না সে ব্যাপারে পলাশ বলেন, আসলে অনলাইনে এমন ধারণার এখনও সৃষ্টি হয় নি। অনলাইন মার্কেটিং করতে গেলে যে অর্থনৈতিক সাপোর্টের প্রয়োজন সেটা সবার নেই। এর ভবিষ্যৎ উজ্জল হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সারা দেশে সবাই এখনও অনলাইনে কেনাকাটায় অভ্যস্ত না। এর জন্য হয়তো এমন কোন ভাবনার অনলাইন এখনও তৈরি হয় নি। তবে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বড় পরিসরে তৈরি হবে।

ক্রেডিট কার্ডে পণ্য ক্রয় করা সম্পর্কে কে এম মহিদুল হক পলাশ বলেন, যদি আমাদের পণ্য আপনার পছন্দ হয়, তাহলে সেটার ছবি নিয়ে এর পেমেন্ট অপশনে গিয়ে ক্যাশঅন না ক্রেডিড কার্ডে পে করবেন, সেটা সিলেক্ট করে যে নির্ধারিত মূল্য আছে তা আপনি অনলাইন ক্রেডিড কার্ডের মাধ্যমে আমাদের নির্ধারিত ব্যাংকে পরিশোধ করতে পারেন। এর জন্য আমাদের সাইটে ব্যবস্থা রাখা আছে। তাছাড়া ব্রাক ব্যাংক, ইবিএল, এইচএসবিসি ব্যাংক এর সাথে আমাদের এফিলিয়েশন করা আছে।

এ বিষয়ে সানজিদা আক্তার খানম বলেন, দেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। মফস্বলে আগে দেখা যেত পণ্য ফেরি করে বিক্রি করছে। এখন আর সেটা প্রায় নাই বললেই চলে বা খুব বেশি দেখা যায় না। এখন বিক্রেতারা ঘরে বসেই মোবাইলে তাদের পণ্য লাইভ দেখিয়ে বিক্রি করছে।

যে কারণে দেখা যাচ্ছে প্রতিটা পরিবারেই অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অনেকটা বেড়েছে। তারা আমাদের মতো করে অফিস নিয়ে, ওয়েব করে বড় আকারে ব্যবসা করতে পরছে না। কিন্ত আর্থসামাজিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে তারা ভালোই করছে।

এটাও কিন্ত একটা পজেটিভ দিক। তাদের সামর্থ্য বাড়লে হয়তো একসময় আমাদের মতো করে তারাও এগিয়ে আসবেন। তখন কিন্ত সারা দেশের অণলাইন ব্যাবসার মাধ্যমে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।

সানজিদা আক্তার খানম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রাইট চয়েজ ডটকম ডটবিডি