অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়াতে পারে চরমপন্থা:নাজিব

পুরো বিশ্বেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীদের আগ্রহের কারন, তাও বেশ অনেতদিন থেকেই। অনেক দেশই তাই এ অঞ্চলের বিভিন্ন ‘বিজনেস মডেল’ অনুকরণ করতে চান, জানতে চান ঠিক কোন উপায়ে সবচেয়ে কম সময়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া সমান বা কাছাকাছি মাত্রার উন্নতি করা যায়। তবে মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক শুক্রবার, ২৮ শে এপ্রিল উচ্চারণ করেছেন এক ভিন্ন সতর্কবানী।

ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অনুষ্ঠিয় আসিয়ান (অ্যাসোসিয়েশন ফর সাউথ ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস) সামিটের এক পর্বে মিস্টার নাজিব বলেন এখানকার রাষ্ট্রগুলো যদি নিজ দেশের আর্থিক উন্নয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারেন তাহলে তা চরমপন্থা বাড়াতে পারে, পাল্টে যেতে পারে এমনকি রাজনৈতিক চিত্রও। তিনি আরো যোগ করেন, আসিয়ান অঞ্চলের যা প্রবৃদ্ধি তাতে এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিনত হতে পারে কিন্তু তবে হওয়া উচিত ন্যায়সঙ্গত। ‘ আমরা চাইনা চরমপন্থা আর মৌলবাদের এইযুগে আমাদের নাগরিকরাও সেপথে একীভুত হোক’ -বলেন নাজিব। তিনি আরো বলেন, সমাজের কাছে কোন আশা করেন না এমন হতাশ নাগরিকদের সহজেই সন্ত্রাসীরা লক্ষ্যে পরিণত করতে পারে এবং মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিপথে টানতে পারে।

এ সপ্তাহে আসিয়ানের বৈঠকগুলোতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইনের পাইরেসি সমস্যা এবং ইসলামিক এস্টেট (আইএস) -এর ক্রমবর্ধমান হুমকি নিয়ে শংকার মুখে ধর্মীয় সহিংসতার বিষয়টি বেশি গুরত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষ করে জঙ্গীরা এই অঞ্চলের বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে মিশে সহজেই অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারে এবং উল্লেখিত তিন দেশের বিভিন্ন দ্বীপে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই আশংকার জায়গা থেকেও আলোচনা হবে।

মিস্টার নাজিব তাঁর বক্তব্যে আসিয়ানের সাফল্য টানতে গিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, এ বছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই জোটটি ৫০ বছর পূর্ণ করছে। আর এ সময়ে এখানকার মোট জিডিপি ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে ২.৭ ট্রিলিয়নে।
আসিয়ানে ১০টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে: থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন।

নাজিব তাঁর বক্তব্যে পশ্চিমা বিশ্বের উদাহরণ টেনে বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য রাজনীতির জন্যও বিপদজনক। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিশ্বায়ন -এসব কোন উপকারে আসেনা বলে যদি কোন জনগোষ্ঠীর ধারনা জন্মে তবে তা নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সিস্টেমকেও বদলে দিতে পারে যা পশ্চিম ইওরোপে ঘটেছে।

ফোর্বস ম্যাগাজিন অর্থনীতিবিদদের সূত্রে জানাচ্ছে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট। ৬২০ মিলিয়ন মানুষের এই অঞ্চলেই আবার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বিলিয়নেয়ারের বসবাস।

আসিয়ানকে তার জনগোষ্ঠীর কাছে এর কার্যক্রম আরো বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থাপনের ওপর জোর দেন মিস্টার নাজিব। এখনো প্রচুর ট্রেড ট্যারিফ রয়ে গেছে বলে মনে করিয়ে দিন তিনি এসবের দ্রুত অপসরানের দাবি জানান।

অনুষ্ঠানের ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট লেনি রব্রেদো মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে দরিদ্রদের প্রতি আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্ববান জানান।

‘দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক অসাম্যকে স্বাভাবিক বলে মনে করেছেন অনেকে। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিতরা এখন শুনতে চায়। প্রযুক্তি আর সামাজিক মাধ্যমের কারনে এঁদের হতাশা এখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পৌঁছে গেছে; এবং এঁরা বিশ্বায়ন, গণতন্ত্র এবং ঐতিহ্যিগত মিডিয়াকে বর্জন করছে’ বলেন মিজ লেনি।
সূত্র: বিজনেস টাইমস

আজকের বাজার:এসবিএম/এলকে/২৯এপ্রিল,২০১৭