‘ইভ্যালিকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে’

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিকে নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা-গুঞ্জনের ঝড় উঠেছে। মাত্র দেড় বছরে দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ইকমার্স ব্যবসায় কিভাবে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠলো? কি রয়েছে এর নেপথ্যে? কি টেকনিকে তারা এগোচ্ছে, কোন মডেল ফলো করছে তারা? এসব নানা ব্যপারে কেউবা হয়েছে ঈর্ষান্বিত, আবার কেউ হয়েছেন কৌতূহলী। কেউ মতামত দিচ্ছেন ইভ্যালির পক্ষে, কেউ দিচ্ছেন বিপক্ষে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে গিয়ে আজকের বাজারের নজরে এলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া হোসাইন জোকি’র একটি পোস্ট। আজকের বাজারের পাঠকদের কাছে হোসাইন জোকি’র পোস্টটি উপস্থাপন করা হলো।

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কোনো এক অজানা কারণে যাবতীয় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের শত্রু মনে করেন! সুযোগ পেলেই যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে পথে বসিয়ে দিতে পারেন। যে কোনো একটা ব্যবসা দাড় করানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। একজন উদ্যোক্তা তার মেধা, শ্রম আর সম্পদের ঝুঁকি নিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করেন। যে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো এই উদ্যোক্তারা। বাজারে উদ্যোক্তা না থাকলে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের হাজারো পলিসি কোনো কাজে লাগে না। এজন্য বিভিন্ন দেশের সরকার উদ্যোক্তা সৃষ্টি করার জন্য নানান প্রনোদনা দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সরকার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা ইত্যাদি নানান সমস্যা মোকাবেলা করে বাংলাদেশে ব্যবসা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা অনুকূল পরিবেশের ইন্ডিকেটর অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০ টি দেশের মধ্যে ১৬৮ তম। এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও আমাদের অনেক উদ্যোক্তারা বের হয়ে আসছেন। তেমনই উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। মাত্র দেড় বছরে হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রতিষ্ঠান হয়ে দাড়িয়েছে ইভ্যালি।

ঈর্ষান্বিত হয়ে, না অন্য কোনো অপশক্তির রোষানলে পড়ে, সম্প্রতি ইভ্যালিকে নিয়ে নানান বিরূপ প্রচারণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। সবার জানা আছে নিশ্চয়, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে, ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্রতিটি কাস্টমার রিভিউ, বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল কর্পোরেশনগুলো পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখে এবং অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করে।

আপনার যদি ইভ্যালির পলিসি ভালো না লাগে, তাহলে আপনি এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবেন না। আপনি যদি কোনো সার্ভিসে অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে গুগল বা ফেইসবুকে আপনার কারণ ব্যাখা করে রিভিউ দিন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যদি আপনার রিভিউ অ্যাড্রেস না করে, তাহলে এই বাজারে তারা টিকে থাকতে পারবে না। আর এটা নিশ্চয়ই কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান চাইবে না।

ই-কমার্স প্লাটফর্মে যেহেতু প্রচুর ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকে, তাই এখানে প্রতারণার ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি মাঝখানে গ্যারান্টর হিসেবে কাজ করে, যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষই কেনা-বেচায় আস্থা পায় এবং যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সেই কাজটি ভালোভাবে করতে না পারলে, সেই প্রতিষ্ঠান টিকবে না। সঠিক উপস্থাপনার অভাবে, কিংবা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ইভ্যালিকে নিয়ে যদি ভুল বুঝে, ভুল বোঝানো হয়, তাহলে বাংলাদেশের এমন একটা সম্ভাবনাময় উদ্যোগকে গলাটিপে হত্যা করা হবে। আমরা যদি এভাবে কোনো স্টার্টআপকে গলাটিপে হত্যা করি, তাহলে ভবিষ্যতে এদেশে কেউ ব্যবসা শুরু করার আগে আরও অনেকবার চিন্তা করবে। যার মানে হলো কেউ উদ্যোক্তা হতে চাইবে না।

ইভ্যালির কর্পোরেট অফিস পরিদর্শন করলেন আমাজন কর্মকর্তা

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইকমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন-এর এক কর্মকর্তা আমাদের দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিদর্শনে এসেছিলেন। রাজধানীর ধানমণ্ডিতে অবস্থিত ইভ্যালির করপোরেট অফিস পরিদর্শনে গত ২৫ আগস্ট আসেন অ্যামাজন সদর দপ্তরের কর্মকর্তা রুদমিলা আর। জানা যায় রুদমিলা অ্যামাজনের কর্পোরেট বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার। এসময় উভয় পক্ষের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে রুদমিলার এই পরিদর্শনটি অফিসিয়াল কিনা তা এখনো জানা যায়নি।

পরিদর্শনকালে রুদমিলা ইভ্যালির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ রাসেল- এর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের খবর নিশ্চিত করা হলেও কি নিয়ে আলোচনা হয় তা ইভ্যালির পক্ষ থেকে জানানো হয় নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ওই সময় অ্যামাজন কর্মকর্তা ইভ্যালি কার্যালয়ের সবগুলো ইউনিট ঘুরে দেখেন। ইভ্যালির গ্রাহক, পলিসি, মার্কেট শেয়ার, বিনিয়োগসহ ব্যবসায়িক ডকুমেন্টসহ ইভ্যালির নানা বিষয়ে জানতে আগ্রহ দেখান তিনি।

অনেক দিন হতেই বাংলাদেশের মার্কেট স্টাডি করে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করে দেখছে অ্যামাজন। এই কর্মকর্তার ঘুরে যাওয়াটা ইভ্যালিতে অ্যামাজনের বিনিয়োগ নিশ্চিত করে কিনা তা বলা সম্ভব নয়। তবে এটা বিনিয়োগের সূত্রপাতও হতে পারে বা বিনিয়োগের অগ্রগতিও বলা যেতে পারে।

জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে অ্যামাজনের আঞ্চলিক অফিস আসা নিয়ে আলোচনা-গুঞ্জন চলছে। ইভ্যালিই হতে পারে অ্যামাজনের আঞ্চলিক অফিস, এমন গুঞ্জনের কথাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না বলেও অনেকে মনে করেন।