আইন সংশোধনীর পর প্রথম রায়: টাঙ্গাইলে ধর্ষণ মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

টাঙ্গাইলে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় বৃহস্পতিবার পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে আইন সংশোধনীর পর এটি প্রথম রায়।

দুপুরে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন এই দণ্ডাদেশ দেন। একই সাথে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার চারালজানী গ্রামের বদন চন্দ্র মনি ঋষির ছেলে সঞ্জিত (২৮), সুনীল চন্দ্র শীলের ছেলে সাগর চন্দ্র শীল (৩৩), সুনিল মনি ঋষির ছেলে সুজন মনি ঋষি (২৮) ও মনিন্দ্র চন্দ্রের ছেলে রাজন চন্দ্র (২৬) এবং একই উপজেলার গোলাবাড়ি গ্রামের শ্রী দিগেন চন্দ্র শীলের ছেলে গোপী চন্দ্র শীল (৩০)। রায় ঘোষণার সময় সঞ্জিত ও গোপী চন্দ্র শীল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য তিন আসামি পলাতক রয়েছেন।

টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি একেএম নাছিমুল আক্তার নাছিম জানান, গত ২০১২ সালে ভূঞাপুরের একটি দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্রীর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আসামি সাগর চন্দ্র শীলের পরিচয় হয়। একই বছর ১৫ জানুযারি ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে তাকে ভূঞাপুরের সালদাইর ব্রিজের কাছ থেকে জোর করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে এলেঙ্গা নিয়ে যান সাগর। সেখান থেকে মধুপুরে তার বন্ধু রাজনের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। কিন্তু সাগর হিন্দু বলে ওই ছাত্রী বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান।

পরে সাগর ওইদিন রাতে রাজনের বাড়িতে আটক করে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। আবার ১৭ জানুয়ারি রাতে মধুপুরের বংশাই নদীর তীরে নিয়ে গিয়ে পাঁচ আসামি মিলে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে সেখানে ফেলে রেখে যান। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্বজনরা গিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। পরদিন ১৮ জানুয়ারি ওই ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে ভূঞাপুর থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই আসামি সুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সুজন ১৯ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তারা পাঁচজনে মিলে ভিকটিমকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করেন বলে জবানবন্দীতে সুজন উল্লেখ করেন।

২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। আটজন সাক্ষী চাঞ্চল্যকর এই মামলায় সাক্ষ্য দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার বিচারক এ রায় দেন।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ জারি করেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।

দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যে এই পদক্ষেপ নিল সরকার।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী- ৯(১) উপধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ‘নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিদ্যমান আইনের ৯ (১) অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনার অনুমোদনের জন্য খসড়া বিলটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করে। এতে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রস্তাব দেয়া হয়। মন্ত্রিসভা এই প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হয়েছে।’ তিনি বলেন, শক্তহাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন রোধে সরকার আইনটি সংশোধন করছে।

তবে সংসদ অধিবেশন আপাতত চলমান না থাকায়, সরকার সংশোধিত আইনটি একটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করতে পারে বলেও জানান খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।