আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণ ব্যবসা অস্বচ্ছ- শুল্ক গোয়েন্দা

                     আপন জুয়েলার্সের ৫টি শো-রুমে এক যোগে অভিযানের পর প্রতিষ্ঠানটির স্বর্ণ ও ডায়মন্ড ব্যবসায় অস্বচ্ছতার প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

অন্যদিকে; বনানীর রেইনট্রি হোটেলে অননুমোদিত মদ জব্দ করা হয়েছে। ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার সময় মদের ব্যবহার হয়েছিল কিনা তার তদন্তে এ তথ্য ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী সংস্থাকে অবহিত করবে শুল্ক গোয়েন্দা।

গতকাল রোববার,১৪ মে রাতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি নামের হোটেলে দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মেসার্স আপন জুয়েলার্স এর মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম ও তার ছেলে শাফাত আহমেদ এর চোরাচালানের সাথে যুক্ত থাকার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে।

কোন কোন তথ্যে দেখা যায়, আপন জুয়েলার্স এর মালিকরা অবৈধ ব্যবসার আড়ালে ‘ডার্টি মানি’ অর্জন করেছেন, যা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ধর্ষণের সাথে এ ডার্টি মানির যোগসূত্র থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, এ ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগটি খতিয়ে দেখা এখন ‘পাবলিক ডিমান্ড’ হিসেবে আমরা দেখছি। এর অংশ হিসেবে ১১ মে আপন জুয়েলার্স এবং এ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের তথ্যাদি চেয়ে বিএফআইইউ, বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছিল।

এ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রোববার, ১৪ মে সকাল থেকে আপন জুয়েলার্স, ডিসিসি মার্কেট শাখা (বিন- ১৮১৪১০১১৯২৭), সীমান্ত স্কোয়ার শাখা (বিন-১৯১৫১০২১৭৩০), উত্তরা শাখা (বিন- ১৮০২১০২৮৭৮৫), মৌচাক শাখা (বিন- ১৯০৬১০০৫৯৬৪) এবং গুলশান এভিনিউ শাখা (বিন- ১৮১৪১০৭১৬৫৭) শাখায় একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে গুলশান এভিনিউ শাখা (বিন- ১৮১৪১০৭১৬৫৭) বন্ধ থাকায় এটি সিলগালা করা হয়।

তিনি বলেন, অভিযানে মৌচাক মার্কেট শাখায় ৫৩ কেজি ৫১৮ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার ও ১৭ দশমিক ৩৫ গ্রাম ডায়মন্ডের অলঙ্কার, সীমান্ত স্কোয়ার শাখায় ৮১ কেজি ৬৮৮ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার ও ৩৩ দশমিক ৪৪ গ্রাম ডায়মন্ডের অলঙ্কার, উত্তরা শাখায় ৮২ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ও ৯ দশমিক ৭ গ্রাম ডায়মন্ডের অলঙ্কার, ডিসিসি মার্কেট শাখায় ৬৮ কেজি ৪৬২ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কারসহ মোট ২৮৬ কেজি স্বর্ণালংকার ও ৬১ গ্রাম ডায়মন্ড পাওয়া গেছে। স্বর্ণের মোট মূল্য প্রায় ৮০ দশমিক ২৩ কোটি টাকা এবং ডায়মন্ডের মোট মূল্য প্রায় ৫ দশমিক ১৫ কোটি টাকা। সর্বমোট স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের মূল্য প্রায় ৮৫ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা।

এ স্বর্ণ ও ডায়মন্ড সাময়িকভাবে আটক করে শুল্ক আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এখন এসব মূল্যবান পণ্যের কাগজ-পত্রাদি গভীরভাবে যাচাই করা হবে। এ অনুসন্ধানে কোন অনিয়ম প্রমাণিত হলে এ প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান মালিকদের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মানিলন্ডারিং এর অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরো জানান, আজকের অভিযানে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের বৈধ উৎস ও পরিশোধযোগ্য শুল্ককরাদি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আপন জুয়েলার্সের এ সকল শাখা কর্তৃক উপস্থাপিত দলিলাদি অভিযান পরিচালনাকারী দলের নিকট অপর্যাপ্ত প্রতীয়মান হয়েছে। তাছাড়া উপস্থাপিত দলিলাদিতে উল্লিখিত স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের পরিমাণের সাথে জব্দ স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের পরিমাণের গরমিল পাওয়া যায়। জব্দ করা দলিলাদি অধিকতর পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ড. মইনুল খান জানান, গত ৫ বছরে দেশে কোন বাণিজ্যিক আমদানি না থাকায় প্রাথমিকভাবে শুল্ক গোয়েন্দার কাছে আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের ব্যবসায় ‘অস্বচ্ছতা’ প্রতীয়মান হয়েছে।

তিনি জানান, আলোচিত চার তারকা হোটেল ‘রেইন ট্রি’তে অভিযান চালিয়ে একটি কক্ষ থেকে ১০ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। শুল্কফাঁকি দিয়ে মদ বিক্রির অভিযোগে তদন্তপূর্বক শুল্ক আইন ও মানিলন্ডারিং আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

এ হোটেলের কোন বৈধ বার লাইসেন্স নেই। এ আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ক্রেতার কাছ থেকে ৮ দশমিক ৩৭ লক্ষ টাকা আদায় করলেও মাত্র ৯ হাজার ৩২৬ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।

আজকের বোজার:এলকে/এলকে/ ১৫ মে ২০১৭