ইতিহাসের সেরা রোনালদো

শুক্রবার রাতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারের পঞ্চম ব্যালন ডি’অর জেতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করার মত মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় নি। আসলে এই সময়ে ফুটবল মাঠে রোনালদো যা করছেন, সেটা তাকে বর্তমান ছাড়িয়ে অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত করেছে সর্বকালের সেরাদের কাতারে। তবে রোনালদোর লক্ষ্য যে সর্বকালের সেরাদের একজন হওয়া নয়, সেটা বোঝা গেলো বিশ্বের সামনে আরেকবার ব্যালন ডি’অর পুরস্কারটা উঁচিয়ে ধরার পর।
গর্ব ভরেই আত্মবিশ্বাসী রোনালদো ঘোষণা করলেন, ‘আমিই ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। সেটা ভালো সময়ে কিংবা খারাপ সময়েও।’
গত দশ বছর ধরেই আধুনিক ফুটবল সম্রাট রোনালদোর সাথে একটা লড়াই চলছে আর্জেন্টিনার খুদে জাদুকরখ্যাত লিওনলে মেসির। সেই লড়াইটা সেরাদের সেরা হওয়ার লড়াই। ২০০৮ সালে প্রথম বিশ্বসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর জিতে শুরুটা করেছিলেন রোনালদো। কিন্তু এরপরের চার বছর টানা এই পুরস্কার জিতে রোনালদোকে ছাড়িয়ে অনেকটাই এগিয়ে যান তার প্রবল প্রতিপক্ষ মেসি।
যদিও এই সময়ে অন্তত দুবার রোনালদোর এই পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল বলে মনে করেন অনেক বোদ্ধা। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে আবার বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। গত পাঁচ বছরে রোনালদো চারবার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। শুধু তাই না, গত বছর থেকে ফিফার দুনিয়া সেরা ফুটবলারের পুরস্কার আর ব্যালন ডি’অর আলাদা হয়ে যাওয়ার পর দুটি পুরস্কার শোভা পাচ্ছে রোনালদোর শো-কেসে।
বর্তমানে ব্যালন ডি’অর জয়ের ক্ষেত্রে রোনালদো আর মেসি সমানে সমান। দুজনেই ফ্রান্স সাময়িকীর দেয়া সেরা ফুটবলারের এই সম্মান জিতেছেন পাঁচবার করে। ইউরোপের সেরা গোলদাতার পুরস্কার আছে দুজনের চারটি করে। কিন্তু ইউরোপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার রোনালদো জিতেছেন তিনবার আর মেসি দুইবার। অন্যদিকে ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার রোনালদো জিতেছেন তিনবার আর মেসি একবার।
অর্থাৎ সব বিবেচনাতেই মেসিকে পেছনে ফেলে এখন অনেকদূর রোনালদো। তাইতো ফ্রান্স সাময়িকীতে দেয়া সাক্ষাৎকারে রোনালদো জানিয়েছেন, ‘আমি প্রত্যেকের পছন্দকেই সম্মান জানাই। কিন্তু কখনোই আমার চেয়ে ভালো কাউকে দেখিনি, এটা আমি সবসময়ই ভাবি। আমি যা পারি তা আর কোনো ফুটবলারই পারে না। আমার চেয়ে পরিপূর্ণ কোনো ফুটবলারও নেই। আমি দুই পা দিয়েই ভালো খেলি। খুব দ্রুত, শক্তিশালী ফুটবল খেলি। মাথা দিয়েও দুর্দান্ত খেলি। গোল করতে পারি। গোল করাতেও সহায়তা করতে পারি।
সিআর-সেভেন আরও বলেন,‘অনেকেই আছেন যারা নেইমার এবং মেসিকে অধিক ভালোবাসেন । কিন্তু আমি তাদের বলব, আমার চেয়ে পরিপূর্ণ কোনো ফুটবলার নেই।’
নিজের সাফল্যের রহস্য সম্পর্কে রোনালদো জানান, ‘যে কোন সাফল্যের পেছনেই অনেক গল্প থাকে। আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু সেটাই সব নয় । আমার মেধা আর জেদ, সব মিলে আমার এই সাফল্য। এই মুহূর্তে আমি যতগুলো ব্যক্তিগত ট্রফি জিতেছি তা আর কারও শোকেসে নেই। এখানে শুধু যে, ব্যালন ডি’অরের কথাই বলছি তা নয়।’
এক সময়ে মেসির থেকে পিছিয়ে পড়া সম্পর্কে রোনালদো বলেন, ‘মেসিরও আগে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলাম আমি। তারপর আমাকে ছাড়িয়ে যায় সে। একটা সময় টানা চারবার এই পুরস্কার জেতে সে। আমি আসলেই সেই সময় খুব ক্ষুব্ধ আর হতাশ ছিলাম। আমি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতাম, কিন্তু জিততাম না। একটা সময় আমি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ি। আমি অনুষ্ঠানে যেতে চাইতাম না। কেবল ছবি তোলার জন্য যাওয়া আমাকে আগ্রহী করতো না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভেতরে সব সময়েই একটা জেদ কাজ করেছে। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। একটা সময় আমি নিজেকে বদলাতে শুরু করি। তার ফলও পাচ্ছি আমি।’
রোনালদোর ভাষায়, ‘জীবনের শুরু এবং শেষ আছে। কিন্তু ফুটবলে শেষটাকেই মনে রাখে মানুষ, সূচনাটাকে নয়। আমি শেষ করব আমার মত করেই।’
রোনালদো এখানেই থেমে থাকতে চান না। আগামী বছরেও তিনি জিততে চান ব্যালন ডি’অর আর ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার। তিনি আসলে জিততে চান কমপক্ষে সাতটি ব্যালন ডি’অর ।
যদিও আগামী বছর এই দুটি পুরস্কার জেতা খুব সহজ হবে না বলে মনে করছেন রোনালদো। কারণ ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবল। স্বপ্নের সেই আসরে সর্বোচ্চ সাফল্য ছাড়া এই পুরস্কার পাওয়া খুব কঠিন হবে, জানেন তিনি ।
তাই আপাতত ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ শিরোপাটাকেই পাখির চোখ করেছেন রোনালদো । রোনালদো যেমন জেদি, তাতে স্বপ্নের বিশ্বকাপ শিরোপাটা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার হাতে দেখা যাওয়া খুবই সম্ভব। আর সেটা যদি হয়, তবে ইতিহাসে রোনালদো হয়ে থাকবেন অদ্বিতীয়, এতে কোন সন্দেহ নেই।
তখন শুধু রোনালদো নয়, সবাই তার সাথে সমস্বরে চিৎকার করে জানাবে ফুটবল ইতিহাসের সেরা শুধু একজন, তিনি হচ্ছেন কিং রোনালদো।
আজকের বাজার: সালি / ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭