ইলিশের বিশ্বে বাংলাদেশ শীর্ষে

বিশ্বে যে পরিমাণ ইলিশ ধরা হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। মোট ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ এখানে ধরা পড়ে। জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএওর পার্টনারশীপ প্রকল্প বে অব বেঙ্গল লার্জ মেরিন ইকোসিস্টেমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।

খবরে ইলিশ ধরায় মিয়ানমারের বর্তমানকে অবস্থানকে আশঙ্কাজনকভাবে তুলে ধরা হয়। সেখানে ইলিশ নিয়ে সচেতনতা না তৈরি হওয়ার ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। মিয়ানমারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়, একসময় মিয়ানমার সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি করতো। কিন্তু দশকের পর দশক ইলিশ ধরার ব্যাপারে সচেতন না হওয়ায় তারা এখন ইলিশ ‘শূন্য হতে’ চলেছে। ইলিশের ওজন যেখানে ৩ কেজিরও বেশি পর্যন্ত হয়ে থাকে, সেখানে বর্তমানে মিয়ানমারে ৩০০-৫০০ গ্রামের ওপরে ইলিশ পাওয়া ভার।

দেশটিতে বর্তমানে বৈশ্বিক ইলিশের ১৫-২০ শতাংশ ধরা পড়ে। যার অবস্থান বাংলাদেশের পরেই। বেসরকারি সংস্থা ওয়াল্ডফিসের মাইকেল একেস্টার জানান, মিয়ানমারে ইলিশ ধরার জন্য সর্বনিম্ন কোনো আকার নেই। তাই সেখানে ২৫ সেন্টিমিন্টারের নিচে মাছ ধরা হচ্ছে অহরহ। এর অর্থ ইলিশকে পরিপক্ক হতে দেওয়া হচ্ছে।

মিয়ানমারে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হয় মে-জুলাই। কিন্ত এর বাস্তবায়নে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। উপার্জনের বিকল্প পথ না থাকায় অভাবী জেলেরা মা মাছ, বাচ্চা মাছ সবই হাটে তোলে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

প্রকল্পটির তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য অন্য নদীতে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে সুক্ষ্ণ জালে আটকে যায় তারা। যেগুলো ফাক ফোকর দিয়ে বের হয়ে যায়। তারা ডিম ছাড়ার পর ধরা পড়ে। অন্যদিকে, ডিম থেকে জাটকা হওয়ার পথেই ইলিশদের সংগ্রাম করতে হয় জেলেদের সঙ্গে। গবেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের ট্রলারগুলোতে ২.৫ শতাংশের ছোট (১ ইঞ্চি) ফাঁকের জাল ব্যবহার হয়। এমনকি ১০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যে জাটকাকে তারা রেহাই দেয় না।

এদিকে, বাংলাদেশের বাজারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বর্তমানে ইলিশ উৎপাদন দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করার মতো। ওয়াল্ডফিশের পূর্ববর্তী এক রিপোর্টে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরতীরের ভারত-মিয়ানমার, আরব সাগরতীরের বাহরাইন-কুয়েত, পশ্চিম মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের পাশে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায়, মেকং অববাহিকার ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া, চীন সাগরের পাশে চীন ও থাইল্যান্ডে ইলিশের বিচরণ কমছে। আর বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

ওয়ার্ল্ড ফিশের আগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ভারতে ১৫ শতাংশ, মিয়ানমারে ১০ শতাংশ, আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ইলিশ ধরা পড়ে।

বাংলাদেশে নদী ও সাগরে কেন ইলিশ বাড়ছে, তা জানতে ইলিশ আছে—এমন দেশগুলোর আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশ ২০০২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ইলিশের ডিম পাড়া ও বিচরণের স্থানগুলো চিহ্নিত করেছে। সেখানে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ, বছরের আট মাস জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করেছে। ডিম পাড়ার ১৫ দিন সব ধরনের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। ইলিশ ধরেন—এমন ২ লাখ ২৪ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দিয়ে তাঁদের বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় তো বটেই, বিশ্বের প্রভাবশালী গবেষণা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ইলিশ রক্ষার এই কৌশল খুবই কার্যকর হয়েছে চিহ্নিত করেছে। এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে গত এক যুগে বাংলাদেশে ইলিশ ধরার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলে মনে করছে তারা।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/১২ মে,২০১৭