‘ঋষির চেয়েও ইরফানের চলে যাওয়া বেশি কষ্ট দিচ্ছে’

একটা করে দিন কাটছে, আর দুই প্রতিভার না থাকার যন্ত্রণা যেন আরও বেশি করে গ্রাস করছে। বয়সে দু’জনেই ছোট। ঋষি অল্প ছোট। ইরফান অনেক বেশি। একজন দীর্ঘদিনের বন্ধু, আত্মীয়, সহ অভিনেতা। অন্যজন শুধুই স্নেহভাজন সহ অভিনেতা।

কিন্তু দুজনেই আমার বুকের খুব কাছের। তার মধ্যেও বেশি করে কষ্ট দিচ্ছে ইরফানের না থাকা। ঋষির বয়স হয়েছিল। জীবনের অনেকটাই সে দেখার সুযোগ পেয়েছে। বেঁচে থাকলে হয়ত আরও ভলো চরিত্রে অভিনয় করত।

কিন্তু ইরফান যে আরও টাটকা। শুধু বলিউডে নয়, হলিউডেও ছিল ওর অনায়াস গতিবিধি। সুযোগ পেলে ইরফান আরও অনেক কিছুই করতে পারত। কিন্তু সেই সুযোগটাই পেল না। ওর জন্য তাই কি বেশি কষ্ট হচ্ছে? ইরফান খান চলে যাওয়ার ৩ দিন পরে সোশ্যালে একথা স্বীকার করে নিলেন বলিউডের মহীরুহ অমিতাভ বচ্চন। যিনি দুই তারকার সঙ্গেই অভিনয় করেছেন।

ঋষিকে স্মরণ করে অমিতের স্মৃতিচারণা, “বুধবার চলে গেলেন ইরফান খানের মতো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভা। মাত্র ৫৩-য়। তারপরেই আজ ঋষি কাপুর। আমি যেন ভেঙেচুরে খানখান।” বিগ বি আর ঋষি জুটি বেঁধে একাধিক সুপারহিট ছবিতে কাজ করেছেন।

তালিকায় রয়েছে কভি কভি, অমর আকবর অ্যান্টনি, নসিব, কুলি-র মতো ছবি। ২০১২-য় তাঁরা ফের একসঙ্গে ফেরেন ১০২ নট আউট দিয়ে। সেখানে বিগ বি-র ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ঋষি কাপুর। পাশাপাশি বিগ বি রাজ কাপুরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, হোলি খেলা, ঋষি কাপুরের হাঁটা-চলা-বলার স্টাইল,বুদ্ধিদীপ্ত রসবোধ—সব নিয়ে কথা বলেন।

তবু একদিনের জন্যও হাসপাতালে ঋষি কাপুর ওরফে ‘চিন্টু’কে হাসপাতালে দেখতে যাননি বলিউডের আরেক মহীরুহ অমিতাভ বচ্চন। কেন হাসপাতালে বন্ধুকে দেখতে যাননি তিনি? ঋষি কাপুরের শেষকৃত্যের পর অবশেষে সেকথা জানান অমিত।

লেখেন, কী করে তিনি রোম্যান্টিক হিরোর মুখের ওই করুণ হাসি দেখতেন! কারণ, তিনি জানতেন, শেষ সময়েও ঋষির পাতলা, লালচে ঠোঁটের কোণে একফালি হাসি লেগেই থাকবে। তবে প্রকৃত কারণ জানানোর আগে দুবার টুইট মোছেন তিনি।

জানান, আসল কথা জানানোর সময় আসেনি এখনও। তিনিও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুত নন। বন্ধুর শেষকৃত্যেও উপস্থিত ছিলেন না তিনি। তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে শেষকাজে দেখা গেছে অভিষেক এবং ঐশ্বর্য রাই বচ্চনকে।

২০১৫-য় ‘পিকু’-তে ইরফান খানের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। বুধবার তাঁর থেকেও অনেক ছোট সহ অভিনেতার মৃত্যুতে শোকে উথালপাথাল হতে হতে সোশ্যালে লেখেন, “বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। ইরফান নেই! এই ফাঁক ভরাট হবে কী দিয়ে?”

অসংখ্য অনুরাগীকে কাঁদিয়ে বুধবার চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হন ইরফান খান। কোলনে সংক্রমণের কারণে মঙ্গলবার রাতেই মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অভিনেতাকে। এর আগে ‘পিকু’ ছবির অন্যতম এই অভিনেতা বেশ কয়েক মাস ধরে মস্তিষ্কের টিউমারের সঙ্গে লড়াই করে কয়েক মাস আগে লন্ডনে চিকিৎসা শেষে মুম্বইয়ে ফিরে আসেন।

ইরফানের স্মৃতি সযত্নে লালন করতে রয়ে গেলেন স্ত্রী সুতপা ও দুই ছেলে। মঙ্গলবারই অভিনেতা ইরফানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সেই সময় অভিনেতার মুখপাত্র জানান, ইরফান খানকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অবস্থা স্থিতিশীল। এই খবর শুনে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও আশ্বস্ত হয়েছিলেন ইরফানপ্রেমীরা। কিন্তু শেষরক্ষা হল কই! শুধু শোকের সময় পিছিয়ে হল বুধবারের মেঘলা সকাল।